পোস্টাল ব্যালট নিয়ে সংশয়

ভোটটা দিতে পারব তো ?

নির্বাচনের দিন ভোটের কাজ সামলেছেন তাঁরা। অথচ তাঁরা নিজেরাই ভোট কবে দেবেন, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। ১১ এপ্রিল ভোট মেটার পর এ যাবৎ দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের প্রায় আড়াইশো ভোটকর্মী এখনও পোস্টাল ব্যালট হাতে পাননি বলে প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১৮
Share:

নির্বাচনের দিন ভোটের কাজ সামলেছেন তাঁরা। অথচ তাঁরা নিজেরাই ভোট কবে দেবেন, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। ১১ এপ্রিল ভোট মেটার পর এ যাবৎ দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের প্রায় আড়াইশো ভোটকর্মী এখনও পোস্টাল ব্যালট হাতে পাননি বলে প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে। ভোটকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, শাসকদলের কারসাজির জেরেই এখনও মেলেনি পোস্টাল ব্যালট।

Advertisement

নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও ভোটকর্মী নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ভোটের কাজে গেলে ‘ইলেকশন ডিউটি সার্টিফিকেট’ পান। সেই শংসাপত্র দেখিয়ে তিনি যে বুথে রয়েছেন, সেখানেই ভোট দিতে পারেন। কিন্তু ভোটকর্মীরা অন্য কোনও বিধানসভা কেন্দ্রে গেলে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে হয়। নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিক, গাড়ির চালক, পুলিশকর্মী সকলেই পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেন।

অতীতে পোস্টাল ব্যালটে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো, ঠিক সময়ে ব্যালট জমা না পড়ার মতো বিভিন্ন অভিযোগ জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। সমস্যা সমাধানে ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন নির্দেশ পাঠায়, ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণের শেষ দিনেই দিনেই পোস্টাল ব্যালটে ভোটদান পর্ব সেরে ফেলতে হবে। কিন্তু সেই নিয়ম এ বার পুরোপুরি মানা হয়নি বলে অভিযোগ ভোটকর্মীদের একাংশের। অভিযোগ, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পোস্টাল ব্যালটের আবেদন করা হলেও প্রশিক্ষণ পর্বে তা আসেনি। ভোট মিটলেও মেলেনি।

Advertisement

অন্ডালের দক্ষিণখণ্ড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সোমনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘বৃহস্পতিবার নির্বাচনী দফতরে গিয়ে বহু খোঁজাখুঁজির পর আমার খামটি বের হয়। দেখি বাড়ির ঠিকানা ভুল। সেখানের কর্মীরা বলেন, আমি নাকি ভুল ঠিকানা দিয়েছি। কিন্তু একটু চেপে ধরতেই আর কোনও কথা বলেননি ওঁরা। আমার মনে হয়, এটা ইচ্ছাকৃত ভুল!’’ ‘ঠিকানা-ভুলে’র ঘটনা ঘটেছে ধান্ডাবাগ এলাকার বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক পরেশ মুখোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও। তবে দুর্গাপুরের ব্যাঙ্ককর্মী অমল রায় জানান, নির্বাচনী দফতর থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাঁকে পোস্টাল ব্যালট দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।

ভোটকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, শাসকদলের কারসাজির জন্য ব্যালট হাতে পৌঁছয়নি। এক ভোটকর্মীর কথায়, ‘‘শাসকদলের সরকারি কর্মীদের ভোট পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছে। তাই হয়তো কারসাজি করে পোস্টাল ব্যালট আটকে দেওয়া হচ্ছে।’’ তৃণমূলের দুর্গাপুর জেলা শিল্পাঞ্চল সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের যদিও দাবি, ‘‘ভোট পাবে না বুঝেই এ সব বিরোধীদের অপপ্রচার।’’ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে শুক্রবার মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে সিপিএম।

প্রশাসনের দাবি, নির্দিষ্ট সময়ে ভোটকর্মীদের বাড়িতে রেজিস্ট্রি ডাকে পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হয়। কিন্তু ঠিকানা ভুল থাকায় তা ফিরে এসেছে। রেজিস্ট্রি ডাকে যথাসময়ে পাঠানো হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট ভোটকর্মী বাড়িতে না থাকায় বা ঠিকানা ঠিক না হওয়ায় বহু পোস্টাল ব্যালট ফিরে এসেছে। মহকুমাশাসক তথা মহকুমা নির্বাচনী আধিকারিক শঙ্খ সাঁতরার আশ্বাস, ‘‘যে সব ভোটকর্মী ভোট দিতে পারেননি তাঁদের বাড়িতে ইতিমধ্যেই পোস্টাল ব্যালট পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। অথবা তাঁরা সরাসরি আমাদের দফতর থেকেও ব্যালট নিয়ে যেতে পারেন।’’ তবে মনোজ ব্রিজ নামে এক ব্যাঙ্ককর্মী জানান, তাঁর সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। তাঁর সংশয়, ‘‘শেষমেশ ভোটটা দিতে পারব তো?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন