আউশগ্রামে হাতি। নিজস্ব চিত্র।
তিন দিন ধরে যেন কুনকি, দাঁতাল আর বন দফতরের চোরপুলিশ খেলা চলছে আউশগ্রামের জঙ্গলে। এক দিকে, কুনকিদের দেখলেই লুকিয়ে পড়ছে দাঁতালটি। সকাল গড়িয়ে দুপুর নামলে এক বার দেখা দিয়েই আবার হারিয়ে যাচ্ছে জঙ্গলে। দফায় দফায় ঘুরে, হুলা পার্টি নামিয়েও তাকে বের করা যাচ্ছে না। দুর্গাপুরে অবশ্য পাঁচ দিন ধরে লুকোচুরি খেলার পরে হাতি বাঁকুড়ায় চলে গিয়েছে বলে বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
আউশগ্রামের জঙ্গলের সরু রাস্তায় ছুটতে ছুটতে বন দফতরের এক আধিকারিক বলেই ফেললেন, “তিন দিন ধরে ছুটেই চলেছি। দাঁতাল হাতিকে তাড়ানোর জন্য কুনকি হাতি নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই বাগে আসছে না।”
বন দফতর সূত্রে জানা যায়, দুর্গাপুর থেকে দলছুট হওয়ার পরে হাতিটি শনিবার আউশগ্রামে ঢুকে পড়ে। দু’দিন জঙ্গলে কাটানোর পরে সোমবার স্থানীয় বাসিন্দারা হাতিটির দেখা পান। ওই দিন গভীর রাতে আউশগ্রাম থানার কাছে শোকাডাঙার অর্জুনবাগান এলাকায় বেশ কয়েকটা বাড়ি, চালাঘর, ধানের মরাই, সাইকেল ভাঙচুর করে হাতিটি। টনক নড়ে বন দফতরের। দলছুট হাতিকে বাঁকুড়ার জঙ্গলে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়।
কুনকি হাতি, ঘুমপাড়ানি গুলি আনা হয়। ঐরাবত গাড়ি নিয়ে এসে রাখা হয় আউশগ্রামের জঙ্গলে। সোমবার আউশগ্রাম থানা ভবনের কাছে শোকাডাঙা, আলেফনগরে ঘুরে বেড়ায় হাতিটি। মঙ্গলবার বিকেলের পরে হাতিটিকে দেখা যায় ভাল্কি মাচান, প্রতাপপুর এলাকার জঙ্গলের ভিতর। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বুধবার সকাল থেকে হাতিটিকে খোঁজার জন্য প্রায় দেড়শো জনের হুলাপার্টি বেশ কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে জঙ্গলের ভিতর ঢুকে পড়ে। কিন্তু হাতির গতিবিধি নজরে না-আসায় দুপুর দেড়টা নাগাদ আসরে নামানো হয় বাঁকুড়া থেকে আনা তিনটে কুনকি হাতিকে। জেলা বন দফতরের আধিকারিক বিজয়কুমার শালিমাত বলেন, “এ দিন বিকেলের দিকে হাতিটিকে দেখা গিয়েছিল। তারপর ফের জঙ্গলের ভিতর ঢুকে গিয়েছে।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভাল্কির জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে সেচ খালের ধারে জল খাচ্ছিল দলছুট হাতিটি। বিকেল পাঁচটা নাগাদ হাতির গতিবিধি বুঝতে পেরে হুলাপার্টি সেচখালের জায়গা ঘিরে নেয়। পিছনে ছিল কুনকি হাতির দল। এমন সময় আচমকা দলছুট হাতিটি হুলাপার্টির দিকে তেড়ে যায়। ভয়ে হুলাপার্টির লোকজন পিছিয়ে যেতেই একেবারে উল্টো পথে হাতিটি জঙ্গলের ভিতর ঢুকে পড়ে। সন্ধে পর্যন্ত কুনকি হাতির দল দলছুট হাতিটির খোঁজ পায়নি।