অজয় পেরিয়ে চুরি-লুঠ, নেই টহল

কখনও কারখানা থেকে লুঠ হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রাংশ। কোনও রাতে আবার একের পর এক মন্দির থেকে চুরি হচ্ছে গয়না। কাঁকসায় দুষ্কৃতীদের এমন দাপাদাপিতে অতিষ্ট বাসিন্দারা।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৬ ০৩:২৬
Share:

কারখানায় লুঠপাটে ধৃত বীরভূমের কয়েক জন। —নিজস্ব চিত্র

কখনও কারখানা থেকে লুঠ হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রাংশ। কোনও রাতে আবার একের পর এক মন্দির থেকে চুরি হচ্ছে গয়না। কাঁকসায় দুষ্কৃতীদের এমন দাপাদাপিতে অতিষ্ট বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, অজয় পেরিয়ে ভিন্‌ জেলা থেকে দুষ্কৃতীরা এসে এই ধরনের কাজকর্ম সেরে ফের গা ঢাকা দিচ্ছে। উপযুক্ত পুলিশি টহলদারির অভাবেই বারবার এমন ঘটছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর একাংশের। পুলিশের অবশ্য আশ্বাস, টহলদারি বাড়ানো হচ্ছে।

Advertisement

সম্প্রতি কাঁকসার বেসরকারি কারখানায় ডাকাতির অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের কাছ থেকে মূল্যবান অ্যালুমিনিয়াম ও তামার তার উদ্ধার হয়। ২৮ এপ্রিল ওই কারখানায় লুঠপাট চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। কারখানা কর্তৃপক্ষ কাঁকসা থানায় অভিযোগ করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ কাঁকসা থেকে তিন জন এবং বীরভূমের নানা এলাকা থেকে ৯ জনকে গ্রেফতার করে। এর পরে আবার শনিবার রাতে কাঁকসার হাটতলা ও গাঙ্গুলিপাড়ায় পরপর দু’টি মন্দিরের তালা ভেঙে গয়না ও টাকা চুরি করে দুষ্কৃতীরা। যে ভাবে চুরি হয়েছে তাতে একই দলের কাজ বলে পুলিশের অনুমান।

শুধু গত কয়েক দিনের ঘটনা নয়, বেশ কয়েক মাস ধরে কাঁকসায় চুরি-লুঠপাটের ঘটনা ঘটছে। কয়েকটি ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে তাদের বেশির ভাগই বীরভূমের বাসিন্দা। কিছু দিন আগে এই এলাকার একটি বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানায় লুঠপাট চালাতে এসে বোমা ফেটে জখম হয় তিন জন। তাদের জেরা করে পুলিশ আরও দু’জনকে ধরে। ধৃতেরা সবাই বীরভূমের দুবরাজপুরের বাসিন্দা। তার আগে দুর্গাপুরে এক লোহার কারবারির দেহ উদ্ধার হয় ওই বন্ধ কারখানারই ভিতরের পরিত্যক্ত কুয়োয়। পুলিশ যে চার জনকে গ্রেফতার করে তাদের তিন জনের বাড়ি বীরভূমের দুবরাজপুরে।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশি নজরদারির অভাবেই এ ভাবে ভিন জেলা থেকে দুষ্কৃতীরা কাঁকসার বিভিন্ন জায়গায় এসে অপরাধমূলক কাজকর্ম করে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা নরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সনাতন সাহাদের ক্ষোভ, ‘‘দিন-দিন দুষ্কৃতীদের রমরমা বাড়ছে। পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে আছে।’’ রমেন ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে হয়তো কেউ-কেউ গ্রেফতার হচ্ছে। কিন্তু অপরাধ আটকাতে ব্যবস্থা কোথায়!’’ কাঁকসার শিল্পতালুকগুলিতে মাঝে-মাঝেই হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। কাঁকসার বাসিন্দা তথা সিপিএম নেতা বীরেশ্বর মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা নজরে আসে না। তাই অপরাধমূলক কাজকর্ম বেড়ে চলেছে।’’ কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায় মেনে নেন, ‘‘একের পর এক ঘটনা ঘটছে। পুলিশ সক্রিয় না হলে সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যাবে।’’

জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, উঁচুতলা থেকে কড়া বার্তা দেওয়ার পরে শিল্পতালুকগুলিতে পুলিশ টহল বাড়িয়েছে। তার জেরে অনেক ধরপাকড়ও হয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, গোটা এলাকা জুড়েই টহলদারি বাড়ানো প্রয়োজন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইলামবাজার সেতুর কাছে পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়কে নিয়মিত তল্লাশি হয়। তবে বর্ষা বাদে বাকি সময়ে অজয়ে জল না থাকার সুযোগ নিয়ে দুষ্কৃতীরা সহজেই অজয় পেরিয়ে এই পারের রাস্তা ধরে। নজরদারি বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অবশ্য অভিযোগ, পুলিশের একাংশ পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়কে তল্লাশির নাম করে লরি থামিয়ে তোলা তুলতে ব্যস্ত থাকেন পুলিশকর্মীদের একাংশ। সেই সুযোগে দুষ্কৃতীরা পুলিশের চোখ এড়িয়ে সহজেই ঢুকে পড়ে। পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন