লোডশেডিংয়ে ক্ষোভ রানিগঞ্জে

প্রতিদিন পাঁচ ঘণ্টা অন্ধকার

তারবাংলার বাসিন্দা, একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া জাহানাত কায়নাত, গির্জাপাড়ার নবম শ্রেণির ছাত্র তুহিন দাসরা বলেন, ‘‘দিনে গড়ে পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। পরীক্ষার সময়ে সব থেকে বেশি সমস্যা হয়।’’

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১৮
Share:

ভোগান্তি: বিদ্যুৎ নেই, লম্ফ জ্বেলে চলছে পড়াশোনা। রানিগঞ্জের তিওয়ারিপাড়ায়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

সামনে পরীক্ষা। হ্যারিকেন জ্বেলে কোনও রকমে পড়াশোনা করছেন এক ছাত্রী। কোথাও বা চিকিৎসক অপারেশন থিয়েটারে ঢুকতে যাবেন, এমন সময় সব আঁধার।— বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে রানিগঞ্জ শহরে এমনই নানা দৃশ্য যেন গা সওয়া হয়ে গিয়েছে, দাবি বাসিন্দাদের। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার দাবি, পরিকাঠামোগত সমস্যার জেরে এমনটা ঘটছে। সঙ্গে সমস্যা বাড়িয়েছে, এলাকার নানা প্রান্তে অবৈধ সংযোগ নেওয়ার প্রবণতাও।

Advertisement

তারবাংলার বাসিন্দা, একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া জাহানাত কায়নাত, গির্জাপাড়ার নবম শ্রেণির ছাত্র তুহিন দাসরা বলেন, ‘‘দিনে গড়ে পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। পরীক্ষার সময়ে সব থেকে বেশি সমস্যা হয়।’’ রানিসায়র মোড়ে নবম শ্রেণির পড়ুয়া আকাশ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “বাধ্য হয়ে বাড়িতে ইনভার্টার কেনা হয়েছে। ঝড়-জলে বিদ্যুৎ গেলে ফের সংযোগ আসতে ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যায়।’’ কিন্তু অনেক পড়ুয়াই বাড়িতে বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারে না। ফলে তাদের ভরসা হ্যারিকেন বা মোমবাতি। কিন্তু পরীক্ষার সময়ে বা উৎসবের দিনগুলিতে কেরোসিনের দামও বেড়ে যায় বলে অভিযোগ গৃহশিক্ষক বাসুদেব গোস্বামীর।

পড়শোনা ছাড়া ব্যবসা চালাতে গিয়ে বা চিকিৎসা পরিষেবা দিতে গিয়েও সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসক সমরেন্দ্রকুমার বসু জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে অনেক সময় অপারেশন থিয়েটার চালাতেও সমস্যা হয়। অথচ বিদ্যুতের বিলে এর কোনও প্রভাবই পড়ে না বলে দাবি তাঁর। সমরেন্দ্রবাবুর আরও অভিযোগ, ‘‘বিদ্যুৎ দফতরে কাউকে ফোন করেও বিপর্যয়ের কারণ জানা যায় না।’’ রানিগঞ্জ বণিক সংগঠেনর তরফে রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতানেরও অভিযোগ, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ছোট ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। রানিগঞ্জের বিজেপি নেতা সঞ্জীব মাহান্ত বলেন, “বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিয়ে স্মারকলিপি দিয়েও লাভ হয়নি।’’ রানিগঞ্জের সিপিএম বিধায়ক রুনু দত্ত বলেন, “যান্ত্রিক ত্রুটি-সহ অন্যান্য ঘাটতি মিটিয়ে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতির জন্য বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে বিধানসভায় জানিয়েছিলাম। উনি জানিয়েছেন, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কিন্তু তা হয়নি।’’

কেন এমন হাল? তৃণমূল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ এমপ্লয়িজ ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নেতা বাবু দত্ত বলেন, ‘‘পরিকাঠামো দুর্বল। রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে। রানিগঞ্জের স্টেশন ম্যানেজার শহরে থাকেন না। অন্যান্য কর্মীরা ট্রান্সফর্মার পুড়লে বা অন্য কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি হলে দেরি করে ঘটনাস্থলে পৌঁছন।’’

বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের আসানসোল ডিভিশনের ইঞ্জিনিয়ার শুভেন্দু চক্রবর্তী জানান, রানিগঞ্জে বণ্টনকেন্দ্রের অধীনে ৩৬ হাজার উপভোক্তা রয়েছেন। এর জন্য দৈনিক ১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দরকার হলেও কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। তা ছাড়া ৩৫০টি পুরনো ট্রান্সফর্মারে প্রযুক্তিগত সমস্যা হচ্ছে। শুভেন্দুবাবুর অবশ্য দাবি, “ঘণ্টা দুয়েকের বেশি বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয় না। নতুন ১৫০টি ট্রান্সফর্মার এবং পুরনো তারগুলির বদলে কেবল বসানো হবে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় ৬৫০ কোটি টাকা খরচ করে রানিগঞ্জে বিদ্যুৎ সমস্যা মেটানো হবে। এক বছরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।’’

বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এক কর্তার অবশ্য অভিযোগ, রানিগঞ্জ শহরে চার হাজার অবৈধ সংযোগ রয়েছে। ওই কর্তা আরও জানান, সপ্তাহ খানেক আগে অবৈধ ভাবে বিদ্যুত নিয়ে ব্যাটারি চার্জ দেওয়ায় ২৩জন টোটো মালিকের বিরুদ্ধে রানিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ওই সংস্থার অভিযোগ, পুলিশ সহযোগিতা না করাতেই সব অবৈধ সংযোগ কাটা যাচ্ছে না। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন