পুজোর আগে জাল নোট-সহ ধরা হয়েছিল এক জনকে। কয়েকদিন আগে বর্ধমান স্টেশনে আরও এক জনের কাছে মেলে বেশ কিছু জাল নোট। তাদের জেরা করে পুলিশ ফাঁদে ফেলে বর্ধমান শহরের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে। এ বার জাল টাকা ছড়ানোর পিছনে এক সাধুর মদত রয়েছে বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানিয়েছে, বর্ধমান শহরের কাছেই ওই আশ্রমে লাগোয়া জেলা থেকে জাল নোটের লেনদেন চলত। শহরের কয়েকজন ব্যবসায়ী ছাড়াও রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকার বেশ কয়েকজনেরও নিয়মিত যাতায়াত ছিল ওই আশ্রমে। জাল নোটের কারবারের সঙ্গে চলত চোরাই সোনা পাচারও। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই সাধুকে আটক করা হয়েছে। আশা করছি, শহরে জাল টাকা ছড়ানোর কারবারিদের খুব দ্রুত গ্রেফতার করতে পারব।’’
গত সোমবার সন্ধ্যায় বর্ধমান স্টেশনের কাছে মিরছোবা গ্রামের শেখ মনিরুল ওরফে রোমিও নামে এক যুবককে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ডেকে কথা বলার সময় ছুটে পালিয়ে যায় মনিরুল। তাড়া করে ধরে ফেলা হয় তাকে। পরে ধৃতকে তল্লাশি করে একটি খামে ৮টি ৫০০টাকার নোট পায় পুলিশ। পরীক্ষা করে দেখা যায় সবক’টি নোটই জাল। পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে মনিরুল জানায় শহরে জাল নোট ছড়ানোর কাজ করত সে। পুজোর ঠিক আগে আবার গলসির জিয়াউল শেখকে ১০টি এক হাজার টাকার জাল নোট সহ গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পুলিশের দাবি, মাত্র দু’সপ্তাহের ব্যবধানে পরপর দু’জন জাল নোট ‘বাহক’ গ্রেফতার হওয়ায় সন্দেহ বাড়ে। এরপরেই খোঁজ মেলে আর একটু পাকা মাথার।
পুলিশের দাবি, মনিরুলকে জেরার মুখে বর্ধমান শহরের প্রতিষ্ঠিত গয়না ব্যবসায়ী তথা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার জগন্নাথ দে-র নাম উঠে আসে। মনিরুল জানায়, ওই ব্যবসায়ীর দেওয়া টাকা তারা বাজারে ছড়িয়ে দেয়। আরও কয়েকজন এই কারবারে যুক্ত বলেও জানায়। মঙ্গলবারই পুলিশ ওই ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই ব্যবসায়ীর এক আত্মীয় দুর্গাপুরে সোনা পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন। জেরায় জগন্নাথবাবু ওই সাধুর নাম জানিয়েছেন বলেও পুলিশের দাবি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই আশ্রমে মুর্শিদাবাদ ও মালদহ থেকে সাধুর শিষ্যরা আসেন। রাতের অন্ধকারে চলে কারবার। তদন্তকারীদের দাবি, প্রথম দিকে ওই আশ্রম থেকে সোনা পাচার করা হতো। অনেকে পাচার করা সোনা কিনে গলিয়ে বাজারে বিক্রি করতেন। পরে যোগ হয় জাল নোটের কারবার। জাল টাকা বর্ধমানের বাজারে ছড়ানোর জন্য বেশ কিছু ‘বাহক’ নিয়োগ করা হয়। জানা গিয়েছে, জাল এক হাজার টাকার নোট বাজারে দিতে পারলেই ‘বাহক’দের পারিশ্রমিক মেলে ১০০ টাকা। দু’টো ৫০০ টাকার জাল নোটের জন্য মেলে ১৫০ টাকা।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই ‘বাহক’রা এক সঙ্গে ৫-১০ হাজার টাকা জিনিস কিনত। বিক্রেতাকে সব ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট দেওয়া হতো। তার মধ্যেই তিন-চারটে জাল নোট থাকত। বিক্রেতা ধরতে না পারলেই কেল্লা ফতে! শুধু ছেলেরা নয়, এ কাজে বেশ কয়েকজন মহিলা রয়েছে বলেও পুলিশের দাবি।