ধোঁয়ায় ঢাকল আকাশ, অসুস্থ ৫০ গ্রামবাসী

কাঁকসার জাটগড়িয়া গ্রামে ওই বেসরকারি কাগজকলটি যাবতীয় আবর্জনা ফেলে কারখানার সামনেই। আর তার পরে কাগজকলের তরফেই সেগুলি পুড়িয়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁকসা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:০৭
Share:

বিপত্তি: বুধবার সকালেও বেরোচ্ছে ধোঁয়া। কাঁকসার জাটগড়িয়ায়। নিজস্ব চিত্র

প্লাস্টিক-সহ কাগজকলের নানা আবর্জনায় আগুন। ধোঁয়ায় ঢাকল এলাকা। কাঁকসার জাটগড়িয়া গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, এর জেরে অসুস্থ হয়ে পড়়েন গ্রামবাসীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনার পরে কাগজকলে বাসিন্দাদের একাংশ ভাঙচুরও চালান বলে অভিযোগ।

Advertisement

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কাঁকসার জাটগড়িয়া গ্রামে ওই বেসরকারি কাগজকলটি যাবতীয় আবর্জনা ফেলে কারখানার সামনেই। আর তার পরে কাগজকলের তরফেই সেগুলি পুড়িয়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের দাবি, প্রথম দিকে তেমন আগুন-ধোঁয়ার প্রকোপ না থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। আরও অভিযোগ, বিষয়টি কাগজকল কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হলেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।

ঘটনার ভয়াবহ আকার নেয় মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে। স্থানীয় বাসিন্দা আনারুল শেখ, শেখ আজাদরা জানান, বিকেলের পরে থেকেই আগুন বাড়ে। ফলে ধোঁয়ায় ঢেকে যায় এলাকা। ছাই উড়তে থাকে চারদিকে। এর সঙ্গে সমস্যা বাড়ায় দুর্গন্ধ। বাসিন্দারা জানান, এর পরে বহু মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ায় যোগাযোগ করা হয় কাঁকসা থানায়। পুলিশ এসে অসুস্থদের দুর্গাপুরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করায়।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৫০ জন বাসিন্দা এর জেরে অসুস্থ হয়ে পড়়েছিলেন। অসুস্থ হয়ে পড়েন অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বেগমও। তিনি বলেন, ‘‘নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না। খুব কষ্ট হচ্ছিল। বমিও হচ্ছিল। ঠিক সময়ে চিকিৎসা হওয়ায় বেঁচে গিয়েছি।’’

গ্রামবাসীরা অসুস্থ হওয়ার খবর চাউর হতেই কয়েক জন বাসিন্দা কাগজকল চত্বরে যান বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ আগেভাগে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই সমস্যা হতো না। কাগজকল কর্তৃপক্ষের পাল্টা অভিযোগ, গ্রামবাসীরা বেশ কিছু যন্ত্র ভেঙে দিয়েছেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাতেই ঘটনাস্থলে আসেন মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) শঙ্খ সাঁতরাও। পানাগড় থেকে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

বুধবার সকালেও ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, তখনও ডাঁই আবর্জনা থেকে বের হচ্ছে ধোঁয়া। বহু জায়গায় জল ঢেলে মাটি ফেলা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই দূষণ ছড়াচ্ছে ওই কাগজকল। অভিযোগ, কাগজকলের দূষিত জল মিশছে গ্রামের নানা পুকুরে। সেই জল পান করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে গবাদি পশুরা। ক্ষতি হচ্ছে চাষেও। তা ছাড়া মিল চত্বরে পড়ে থাকা ছাই উড়ে মানুষের চোখে ঢুকছে বলেও জানান বাসিন্দারা।

এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘প্লাস্টিক পোড়ানোটাই বেআইনি কাজ। বাসিন্দারা বেশ কিছু অভিযোগ জানিয়েছেন। আমরা সবদিক খতিয়ে দেখছি। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকেও বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।’’ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দুর্গাপুরের আধিকারিক অঞ্জন ফৌজদার বলেন, ‘‘আপাতত ওই কাগজকলটি বন্ধ রয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট পাঠিয়েছি।’’ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে জানা যায়, প্লাস্টিক পোড়ালে সাধারণ ভাবে কার্বনডাইঅক্সাইড, কার্বনমনোঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার-ডাই-অক্সাইড-সহ নানা গ্যাস নির্গত হয়। চিকিৎসকেরা জানান, এই ধরনের গ্যাসগুলি মানব শরীরে প্রবেশ করলে শ্বাসকষ্ট, বমি, মাথাব্যথা-সহ নানা উপসর্গ দেখা যেতে পারে।

পুলিশ জানায়, গ্রামবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতেই কাগজকলের ম্যানেজার ললিতকুমার শরাফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার তাঁকে আদালতে তোলা হলে বিচারক জামিন মঞ্জুর করেন। কাগজকলের জেনারেল ম্যানেজার ‌(‌প্রোডাকশন) কপিল শর্মা বলেন, ‘‘আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি, কী ভাবে আগুন লাগল। ঘটনার তদন্ত করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন