দেদার মাছ চুরিতে প্রশ্নে প্রকল্প

নজরদারি আর সচেতনতা, এ দু’য়ের অভাবে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারি মৎস্য প্রকল্প! সরকারি খরচে ফি বছর কয়েক লক্ষ টাকার মাছের চারা ছাড়া হয় দুর্গাপুরের দামোদরের ডিভিসি ব্যারাজ সংলগ্ন এলাকায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

দামোদরে জাল পেতে তুলে নেওয়া হয় মাছ। নিজস্ব চিত্র।

নজরদারি আর সচেতনতা, এ দু’য়ের অভাবে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারি মৎস্য প্রকল্প!

Advertisement

সরকারি খরচে ফি বছর কয়েক লক্ষ টাকার মাছের চারা ছাড়া হয় দুর্গাপুরের দামোদরের ডিভিসি ব্যারাজ সংলগ্ন এলাকায়। অথচ, নজরদারির অভাবে চুরি হয়ে যাচ্ছে সে সব মাছ।

মৎস্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, চাষের জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য নদীতে মেশা-সহ নানা কারণে নদীতে মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। চট জাল বা সরু জাল ব্যবহারের ফলেও কমছে মাছ। ইতিমধ্যেই চিতল, ফলুই, কই, সিঙ্গি, ল্যাটা সহ আরও কিছু মাছ লুপ্তপ্রায় হিসেবে ঘোষণা করেছে মৎস্য দফতর।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে দফতরের পক্ষ থেকে ১৯৯৯ সালে নদীতে মাছের চারা ছাড়ার জন্য ‘মৎস্য সঞ্চার’ প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০১১ সালে প্রথম বারের মতো দামোদরে সাধারণ প্রজাতির ২০ কুইন্ট্যাল এবং লুপ্তপ্রায় প্রজাতির দুই কুইন্ট্যাল মাছের চারা ছাড়া হয়। তারপর থেকে প্রতি বছর নিয়ম করে মাছের চারা ছাড়ার প্রকল্প চালু রয়েছে। কোনও ভাবেই জালে যেন এই ছোট মাছগুলি উঠে না আসে সে বিষয়ে দফতরের পক্ষ থেকে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সতর্কও করা হয়েছে। কারণ, চারাগুলি পরিণত হয়ে মাছের বংশবৃদ্ধি না হলে প্রকল্পের উদ্দেশ্য মাঠে মারা যাবে। উল্টো দিকে, মাছের বংশবিস্তার হলে মাছের সংখ্যা বেড়ে যাবে। ফলে উপকৃত হবেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরাই।

স্থানীয় সূত্রের খবর, দফতরের সেই সতর্কবার্তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেদার অপরিণত মাছ ধরা চলছে দামোদরে। গত কয়েক বছর ধরে বর্ষার কয়েক দিন পর থেকেই অবৈধ ভাবে মাছ ধরা শুরু হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারাই সাধারণত এর সঙ্গে যুক্ত।

কী ভাবে চলে মাছ ধরা? স্থানীয় সূত্রের খবর, বর্ষার পরে ব্যারাজের গেট বন্ধ হয়ে যায়। তখন ব্যারাজের উপরের দিকে দামোদরের জল স্থির থাকে। এই সুযোগে বাঁশ, লতা-পাতা, গাছের ডাল দিয়ে দামোদরের মাঝে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা হয় একটি আবর্ত। জলের কিছুটা নীচ থেকে গড়ে তোলা হয় বিশেষ ধরণের এই বেড়া। এতে পর্যাপ্ত মাছের খাবার দিয়ে দেওয়া হয়। বেড়ার উপর ও জলের বেশ কিছুটা নীচে ফাঁকা থাকে। খাবারের লোভে মাছেরা এখানে চলে আসে।

১০ থেকে ১২ দিন পরে মশারির জাল দিয়ে বেড়াকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়। মশারির জালে আটকা পরে মাছ। ডালপালা সরিয়ে মাছ আলাদা করে নেওয়া হয়। স্থানীয়েরাই একান্তে মানছেন, এক একবারে এক থেকে দেড় কুইন্ট্যাল মাছ ওঠে। তাতে বড় মাছের সঙ্গে ছোট মাছও উঠে আসে। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘সত্যি বলতে কি এ ভাবে রোজগার অনেক বেশি।’’

এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে পুরষা পর্যন্ত দামোদরের বুকে এমন দেড়শো থেকে দু’শো বেড়া রয়েছে। মাছ তোলার পরে তা চলে যায় বাজারে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে প্রশ্নের সার্থকতা নিয়েই। সমস্যার কথা মেনেছেন মৎস্য দফতরের এক আধিকারিকও। তাঁর সাফাই, ‘‘স্থানীয় ভাবে সচেতনতা গড়া না গেলে সর্বদা নজরদারি চালিয়ে যাওয়ার মতো পরিকাঠামো দফতরের নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন