বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রের প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লিখন। নিজস্ব চিত্র।
ইঙ্গিত মিলেছিল সোমবারই। কুলটি কেন্দ্রে কোনও প্রার্থীর নাম বামফ্রন্ট ঘোষণা না করায় এই আসন কংগ্রেসের জন্য ছেড়ে রাখা হচ্ছে বলে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। মঙ্গলবার প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে জানিয়ে দেওয়া হল, কুলটি ও আসানসোল উত্তর— এই দুই কেন্দ্রে প্রার্থী দিতে চলেছে তারা। প্রার্থীর নাম অবশ্য এ দিন ঘোষণা হয়নি।
কুলটির আসনটি কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া নিয়ে খানিক অসন্তোষ তৈরি হয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লকের অন্দরে। ১৯৭৭ সালে প্রথম বার এই আসনে প্রার্থী হয়ে বিধায়ক হন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা মধু বন্দ্যোপাধ্যায়। টানা দু’দফায় বিধায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৮৭ সালে হেরে যান কংগ্রেসের তুহিন সামন্তের কাছে। পরের বার ফের এই আসনটি কংগ্রেসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় ফরওয়ার্ড ব্লক। বিধায়ক হন দলের নেতা মানিকলাল আচার্য। ২০০৬ পর্যন্ত তিনিই এখানকার বিধায়ক ছিলেন। সে বছর তাঁকে হারিয়ে দেন তৃণমূলের উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। সেই থেকেই কুলটি বিধানসভা আসনটি তৃণমূলের দখলে রয়েছে। তবে এখানে বরাবরই লড়াই করে এসেছে ফরওয়ার্ড ব্লক।
আসন সমঝোতায় কুলটি কেন্দ্র কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়ার কারণ কী? সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের দাবি, কুলটি কেন্দ্রটি এখন আর বামেদের জন্য নিরাপদ নয়। বরং, সেখানে কংগ্রেসের অবস্থা অনেকটাই ইতিবাচক। ওই নেতার যুক্তি, গত লোকসভা ভোটের নিরিখে বামেরা এখানে কংগ্রেসের থেকে মাত্র সাত হাজার ভোট বেশি পেয়েছিল। আবার, গত পুরভোটে এখানে ফরওয়ার্ড ব্লক মাত্র দু’টি ওয়ার্ডে জিতেছে। সেখানে কংগ্রেস জিতেছে তিনটিতে। তাই কংগ্রেস বামেদের থেকে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। আসনটি কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়ে একজোট হয়ে লড়াই করলে ফল ভাল হবে বলেই মনে করছেন সিপিএমের ওই জেলা নেতা।
শরিক দল সিপিএমের এই তত্ত্ব অবশ্য মানতে রাজি নন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব। দলের এক জেলা নেতার বক্তব্য, ‘‘আসনটি কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়ার কোনও যুক্তিই নেই। এটা আমাদের প্রতি অবিচার। বামফ্রন্টকে এর ফল ভুগতে হবে।’’ তাঁর দাবি, ২০০৬ সালেও কংগ্রেস এখানে তাঁদের চেয়ে অনেক ভোটে পিছিয়ে ছিল। ফরওয়ার্ড ব্লক সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের জেলা নেতারা ইতিমধ্যে কুলটির আসনটিতে লড়তে চেয়ে রাজ্য নেতাদের কাছে তদ্বির শুরু করেছেন। তাঁরা এমনও দাবি তুলেছেন, বামফ্রন্টের সিদ্ধান্ত মতো যে আসনগুলিতে কংগ্রেসের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’য়ের কথা হয়েছে, তার মধ্যে কুলটিও রাখা হোক। ফরওয়ার্ড ব্লকের ওই জেলা নেতা বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে এলাকার কর্মীরা প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানাতে শুরু করেছেন আমাদের কাছে। এই পরিস্থিতি তৈরি হোক, আমরাও চাই না।’’ যদিও দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মানিক আচার্য বলেন, ‘‘রাজ্য নেতাদের সিদ্ধান্তই আমাদের কাছে চুড়ান্ত।’’
আসানসোল উত্তর কেন্দ্রেও প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। তবে প্রার্থী কাকে করা হবে, তা মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায় জানান, প্রার্থী যে-ই হোন না কেন, তাঁকে জেতাতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন তাঁরা।