Durga Pujo 2023

দেবীর বামে গণেশ, দক্ষিণে কার্তিক, ৩০০ বছর ধরে সাদিপুরে এ ভাবেই পূজিত মা দুর্গা

দামোদর নদ লাগোয়া জামালপুরের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম সাদিপুর। সনাতন ঐতিহ্য মেনে এই গ্রামের সভাকর বাড়ির সাবেকি মন্দিরে হয় দেবী দুর্গার আরাধনা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

জামালপুর শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩ ২২:০০
Share:

৩০০ বছর ধরে সভাকর পরিবারে ভিন্ন রূপে পূজিত দেবী। — নিজস্ব চিত্র।

পুরোহিত সঠিক ভাবেই পুজো করছিলেন। কিন্তু পরিবারের তন্ত্রসাধক এক পূর্বপুরুষ মদ্যপান করে পুজো করতে বসে বলে যাচ্ছিলেন বামে গনেশায় নমঃ, দক্ষিণে কার্তিকেয় নমঃ। তা শুনে পণ্ডিতমশাই প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু সেই ব্যক্তি তন্ত্রের মাধ্যমে সকলকে দুর্গা প্রতিমার বামে গণেশ এবং দক্ষিণে কার্তিকের অবস্থান দেখিয়েছিলেন। সেই থেকে ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বামে গণেশ ও দক্ষিণে কার্তিককে রেখেই পুজো হয় সভাকর বাড়িতে। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের সাদিপুর গ্রামের ঘটনা।

Advertisement

দামোদর নদ লাগোয়া জামালপুরের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম সাদিপুর। সনাতন ঐতিহ্য মেনে এই গ্রামের সভাকর বাড়ির সাবেকি মন্দিরে হয় দেবী দুর্গার আরাধনা। সভাকর পরিবারের বর্তমান বংশধর দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁদের পূর্বপুরুষ ছিলেন বল্লাল সেন, লক্ষণ সেনের আমলের লোক। বর্গিদের অত্যাচারে নিজ ভূমি ছেড়ে পূর্বপুরুষেরা পালিয়ে চলে আসেন সাদিপুর গ্রামে। সেখানেই তাঁরা বসবাস শুরু করেন।

দেবাশিসের কথায় জানা যায়, তাঁদের বংশের আদি অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন কালী। তবুও মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ মেনে তাঁদের বংশের পূর্ব-পুরুষ উমাচরণ চট্টোপাধ্যায় কালীর বেদিতেই দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। হতদরিদ্র সাধক ব্রাহ্মণ উমাচরণ বনের পুকুরের জল, বনের ফুল, চালতার আচার আর থোড়ের নৈবেদ্য দিয়ে দুর্গা মায়ের পুজো করতেন। সেই একই রীতি মেনে বাংলার ১১১১ সাল থেকে আজও বর্তমান বংশধরেরা পুজো করে আসছেন।

Advertisement

কথিত, বহুকাল আগে বন্যার সময়ে দামোদরে পাটাতন-সহ দুর্গা প্রতিমার একটি কাঠামো ভেসে আসে। স্থানীয় নাকড়া গ্রামের বর্গক্ষত্রীয় ধারা পরিবারের কয়েক জন সদস্য দামোদর থেকে সেই কাঠামোটি তুলে আনেন। তারা সেই প্রতিমার কাঠামোটি দূরের দেবীপুর এলাকায় বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ মেনে তারা ওই কাঠামো আর দেবীপুরে বিক্রি না করে হতদরিদ্র সভাকর পরিবারের বিধবা বধূ রতনমণি দেবীকে দিয়ে দেন। উমাচরণের সময়কালে একদল ডাকাত এক রাতের মধ্যে কাঁচা মাটির দেওয়াল ও খড়ের চালার একটি মন্দিরও তৈরি করে দেয়।

ওই কাঠামোতে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে মাটির দেওয়াল আর খড়ের চালার মন্দিরে উমাচরণ দুর্গা পুজো শুরু করেন। তবে সেই সময়কার কাঁচা মাটির দেওয়াল ও খড়ের চালার মন্দিরটি এখন আর নেই। সভাকর বংশের বংশধররা পরে ওই একই জায়গায় পাকা মন্দির তৈরি করেছেন। এখন সেখানেই পুজো হয়। তবে সাবেকি আমলের সেই একচালার কাঠামোতেই আজও দুর্গা প্রতিমা নির্মাণ করা হয়। এই বাড়ির প্রতিমায় গণেশ দেবী দুর্গার বাম দিকে আর কার্তিক ডানদিকে থাকে। তবে কলাবউকে দুর্গা প্রতিমার ডানদিকে অর্থাৎ কার্তিকের পাশে রেখেই পুজো হয়। এই বাড়ির প্রতিমায় দুর্গার বাহন সিংহ সাদা রঙের। তার মুখটি আবার ঘোড়ার মুখের মত। রায়নার মহেশ পালের পরিবার পুরুষানুক্রমে সভাকর বাড়ির এমন ব্যতিক্রমী মূর্তি তৈরি করে আসছেন।

আগে বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সর্বমঙ্গলা মন্দিরে কামানের শব্দ শোনার পর সভাকর বাড়িতে মহাষ্টমীর সন্ধিপুজোর বলি হত। সে সব এখন ইতিহাস। এখন পঞ্জিকার সময় ধরে বলি হয়। দশমীর দিন দধিকর্মা বিতরণ ও সিঁদুর খেলা পর্ব মিটে যাওয়ার পর রাতে শোভাযাত্রা করে দামোদরে নিরঞ্জন করা হয় প্রতিমা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন