সেতুর নীচে জায়গা নিয়ে পরিকল্পনা

বেশ কয়েক বার থমকে যাওয়ার পরে শেষ হয়েছে সেতুর কাজ। যাতায়াতও চালু হবে কিছু দিনের মধ্যে। কিন্তু বিস্তীর্ণ সেতুর আশপাশ যে জায়গা রয়েছে তা কাজে লাগানো যাবে, না কি দখলের আশঙ্কা রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এখনও। রেলসেতুর অতীত-বর্তমান খোঁজ নিয়ে দেখল আনন্দবাজার। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান স্টেশন লাগোয়া আনাজ, ফল ও মাছের বাজার রয়েছে। জিটি রোডের উপর স্টেশন চত্বরের গা থেকে নতুন তৈরি হওয়া খাদ্য ভবন লাগোয়া এলাকা পর্যন্ত গুমটি রয়েছে।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৯ ০০:৫৭
Share:

নবনির্মিত সেতুর তলায়, আশপাশের এমন জায়গাগুলি নিয়ে কী পরিকল্পনা, তা বিভিন্ন দফতরকে জানাতে বলেছে জেলা প্রশাসন। ছবি: উদিত সিংহ

সেতুর সংযোগকারী রাস্তার নীচে ও পাশ মিলিয়ে প্রায় চার একর জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে পূর্ত দফতরের (সড়ক) বর্ধমান ১ ডিভিশন এক একরের বেশি জায়গা কিনেছিল। ওই জায়গা কী ভাবে ব্যবহার করা হবে, সেটাই বড় চিন্তা জেলা প্রশাসনের। তাই সেতু খুলে যাওয়ার আগেই জেলা প্রশাসন বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে বারবার বৈঠক করে ফাঁকা জায়গা ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। বিভিন্ন দফতরকে খসড়া-পরিকল্পনা জমা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এ দিকে, নতুন সেতু খুলে যাওয়ার মাসখানেকের মধ্যে কাটোয়া রোডের উপরে থাকা পুরনো উড়ালপুল ভেঙে ফেলার বিষয়েও চিন্তাভাবনা চলছে বলে রেল সূত্রে খবর।

Advertisement

এমন পরিকল্পনার কারণ কী?

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান স্টেশন লাগোয়া আনাজ, ফল ও মাছের বাজার রয়েছে। জিটি রোডের উপর স্টেশন চত্বরের গা থেকে নতুন তৈরি হওয়া খাদ্য ভবন লাগোয়া এলাকা পর্যন্ত গুমটি রয়েছে। একই ছবি মেহেদিবাগান, কাটোয়া রোডেও। প্রশাসনের দাবি, সেতুর সংযোগকারী রাস্তা তৈরি হওয়ার পরে তার নীচের জায়গা দখল হতে শুরু হয়েছিল। স্টেশন বাজারের ব্যবসায়ীরা ওই জায়গা দখল করে ‘গুদাম’ তৈরি, ব্যবসা, অবৈধ পার্কিং স্ট্যান্ড তৈরির তোড়জোড় করছিলেন। এই পরিস্থিতিতে ওই জায়গা রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড (আরভিএনএল) অস্থায়ী ভাবে ঘিরতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে আরভিএনএল, পূর্ত দফতর, জেলা পরিষদ, পুরসভা-সহ সরকারের অন্য দফতরের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠকও শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

Advertisement

জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, “ফাঁকা জায়গা দখল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আগেভাগেই সেই জায়গা কী ভাবে সাধারণ মানুষের কাজে লাগানো যায়, সেই পরিকল্পনা করছি। পূর্ত দফতরকে সেতুর নীচে কতটা জায়গা ব্যবহার করা যাবে, তা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’’ সেতুর নীচে সৌন্দর্যায়নের কাজ করার দাবি জানিয়েছে বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থা (বিডিএ)। ওই সংস্থার চেয়ারম্যান তথা বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্য পুর উন্নয়ন সংস্থা সেতুর নীচে কাজ করার জন্য আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে। সে জন্য প্রায় ৪০ কোটি টাকার একটি বিশদ রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি করা হচ্ছে। মূলত ফাঁকা জায়গায় সৌন্দর্যায়ন ও গাড়ি রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে দেব।’’ জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় প্রশাসনের কাছে বাজেয়াপ্ত গাড়ি সেতুর নীচে রাখার জন্যে দাবি জানান।

জেলা পুলিশ প্রাথমিক ভাবে ঠিক করেছে, সেতুর নীচে ট্র্যাফিক পোস্ট, ট্র্যাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে মহিলা থানার ক্যাম্প-অফিস করা হবে। পুলিশের অনুমান, প্রচুর মানুষ সেতুর নীচ দিয়ে শহরে ঢোকার জন্য ও স্টেশন যাওয়ার জন্য ব্যবহার করবেন। তাঁরা নানারকম সমস্যার মধ্যেও পড়তে পারেন। সে জন্য মহিলা পুলিশের ক্যাম্প তৈরি করে আমজনতাকে সহায়তা দেওয়া হবে। পুরো এলাকাটা সিসিটিভি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলার প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। ট্র্যাফিক কন্ট্রোল রুম থেকে ওই সব ক্যামেরার পাঠানো ছবির উপরে পুলিশ নজর রাখবে। তা ছাড়া সেতুর উপরে ‘স্পিডোমিটার’ রাখারও চিন্তাভাবনা রয়েছে পুলিশের।

প্রশাসনের কর্তারা জানান, ওই সেতুর নীচে টোটো, মোটরবাইক ও যাত্রিবাহী ছোট গাড়ি রাখার জন্য পার্কিং করা হবে। সেতুর উপরে টোটো উঠতে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে ঠিক হয়েছে উড়ালপুলের উপরে কোনও বাস বা গাড়ি দাঁড়াবে না। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি হাটের আদলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রি করার জন্য জায়গা দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। খাদি গ্রামোদ্যোগ, তন্তুজের মতো সরকারি বিপণন সংস্থাকে জায়গা দেওয়ার কথাও ভাবা হয়েছে। এ ছাড়া শহর সাফ রাখার জন্য প্রতি দিনের আবর্জনা সংগ্রহ করে বর্জ্য নিষ্কাশন যন্ত্রের মাধ্যমে ছোট কোনও পরিকল্পনা নেওয়া যায় কি না, তা-ও ভেবে দেখার জন্য পুরসভাকে বলছেন জেলাশাসক। এ ছাড়া জেলার বিখ্যাত হস্তশিল্পের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করারও কথা চিন্তাভাবনা করছে ওই কমিটি। জেলাশাসক বলেন, “পূর্ত দফতরের রিপোর্ট হাতে আসার পরে পরিকল্পনাগুলি আরও বিশদে আলোচনা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন