প্রতিবন্ধকতা জয় করে নজর কাড়ল সুজন, মর্তুজা

একজনের বাবা খেতে মজুরি করে কোনও রকমে সংসার চালান। অন্যজনের মা বিড়ি বিক্রি করে মেয়েকে পড়ান। তার সঙ্গে রয়েছে মেয়ের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও। কিন্তু এ সব কিছুই উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল করার ক্ষেত্রে বাধা হয়নি কালনার সুজন দাস ও বর্ধমানের মুর্তাজা খাতুনের ক্ষেত্রে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা ও বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৫ ০১:৫২
Share:

মায়ের সঙ্গে বসে সুজন।

একজনের বাবা খেতে মজুরি করে কোনও রকমে সংসার চালান। অন্যজনের মা বিড়ি বিক্রি করে মেয়েকে পড়ান। তার সঙ্গে রয়েছে মেয়ের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও। কিন্তু এ সব কিছুই উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল করার ক্ষেত্রে বাধা হয়নি কালনার সুজন দাস ও বর্ধমানের মুর্তাজা খাতুনের ক্ষেত্রে।

Advertisement

কালনা ২ ব্লকের পূর্বসাতগাছিয়ার বাসিন্দা সুজন দাস পূর্ব সাতগাছিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়ে ৯২ শতাংশ নম্বর পয়েছে। ২০০২ সালে স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে ইন্দিরা আবাস যোজনায় ঘর দেওয়া হয় সুজনের পরিবারকে। সুজনের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, মা, বাবা, দাদা, দিদির সঙ্গে একই ঘরে পড়াশোনা চালাচ্ছে সে। সুজনের বাবা শ্রীকান্ত দাস খেতমজুর, তবে কখনও রাজমিস্ত্রীরও কাজ করে দিন গুজরান করেন। সুজনের দাদা তাপস দাস কালনা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া। দিদি তাপসী দাসও এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। এই পরিস্থিতি ৩ ছেলেমেয়ের পড়াশোনা কী ভাবে চলানো যাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় শ্রীকান্তবাবু। সুজনের মা অলোকাদেবী বলেন, ‘‘দারিদ্র্যই সুজনকে ভাল রেজাল্ট করার ব্যাপারে আরও জেদি করে তুলেছে।’’


মর্তুজা

Advertisement

অঙ্কে ৯৯ পাওয়া সুজন ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে গ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু সুজনের স্বপ্ন পূরণের প্রধান বাধা টাকা। স্থানীয় বাসিন্দা নীহাররঞ্জন সাহা থেকে পূর্ব সাতগাছিয়া স্কুলের শিক্ষক সকলেরই আবেদন, এই পরিস্থিতিতে সকলকেই সুজনের পাশে দাঁড়াতে হবে।

বর্ধমানের হটুদেওয়ান মাঠপাড়া এলাকার বাসিন্দা মর্তুজা খাতুনের ছোট থেকেই ডান হাতটি ছোট। এর জেরে বাঁ হাতেই লেখাপড়ার কাজ করতে হয়। একচালার ঘরে মর্তুজা আর ছেলেকে নিয়ে বাসা বেঁধেছেন মা আনোয়ারা বিবি। আনোয়ারা বিড়ি বেঁধে মেয়ের পড়াশোনা চালান। অবসর সময়ে মায়ের বিড়ি বাঁধার কাজেও সাহায্য করে মর্তুজা। সবদিক সামলেও সাধনপুর বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী মর্তুজা এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগে ৬৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। মর্তুজা জানায়, তার এই সাফল্যে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে স্কুল। প্রধান শিক্ষক মহম্মদ নাসিম মল্লিক জানান, স্কুলে পড়ার সময় মর্তুজাকে কোনও টাকা দিতে হয়নি। তা ছাড়া স্কুলের তরফে বই, পোশাকও দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা সন্দীপ চন্দ্র জানান, এই পরিস্থিতি আমাদের সকলের মর্তুজার পাশে দাঁড়ানো দরকার। দর্শনে ৮৮ পাওয়া মর্তুজা ভবিষ্যতে শিক্ষিকা হতে চায়।

সুজন, মর্তুজা— দু’জনেই জানে সামনের লড়াইটা কঠিন। কিন্তু দুজনেই পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ‘হাল ছেড়ো না’-র মন্ত্রে বিশ্বাসী। সেটাই একরাশ আশঙ্কা বুকেও ভরসা যোগাচ্ছে দুই পরিবারের সদস্যদের।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন