দুর্নীতিতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক, বিক্ষোভ মঙ্গলকোটে

মিড-ডে মিল ও পড়ুয়াদের স্কুলের পোশাকের টাকায় কারচুপির অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ চলল স্কুলে। শুক্রবার দুপুরে মঙ্গলকোট থানার বুঁইচি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা গোলমাল চলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:১৩
Share:

স্কুলে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।

মিড-ডে মিল ও পড়ুয়াদের স্কুলের পোশাকের টাকায় কারচুপির অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ চলল স্কুলে। শুক্রবার দুপুরে মঙ্গলকোট থানার বুঁইচি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা গোলমাল চলে। পরে কৈচর ফাঁড়ির পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। যদিও ঘটনাটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিম সিদ্দিক।

Advertisement

অভিভাবকদের অভিযোগ, বেশ কয়েক মাস ধরেই স্কুলের ২৩০ জন পড়ুয়া থাকা সত্ত্বেও ১২০ জনের খাবার রান্না হচ্ছে। ফলে সব ছাত্র পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না। এ দিন স্কুলে গিয়েও দেখা যায়, কোনও ছাত্রের থালায় ভাত পড়েছে তো তরকারি নেই। আবার কেউ খাবারের লাইনে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। তৃতীয় শ্রেণির শুভম ঘোষ, সুজয় ঘোষ, সৌরভ শেখদের অভিযোগ, ‘‘খাবার খুবই নোংরা থাকে। রোজ আমরা খাবারও পাই না।’’ অভিভাবকদেরো দাবি, ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে স্কুলে পোশাকের জন্য ছাত্র পিছু ৪০০ টাকা বরাদ্দ ছিল। তা এখনও মেলেনি। সদগোপপাড়ার বাপি মণ্ডল, বল্টু শেখ, অরুপ মণ্ডলদের প্রশ্ন, ‘‘মাস তিনেক আগে ওই টাকা স্কুলের তহবিলে এসেছে বলে জেনেছি। কিন্তু এখনও পড়ুয়াদের দেওয়া হল না কেন?’’ তাঁদের দাবি, মাসখানেক আগে প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞেস করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তিনি এড়িয়ে যান।

এ দিন অবশ্য প্রধান শিক্ষক নিজেই স্কুলের নাম লেখা পড়ুয়াদের একটি পোশাক বানিয়ে এনে অভিভাবকদের দেখান। তাতে আগুনে ঘি পড়ে। অভিভাবকেরা বলতে থাকেন, ‘‘মাথা পিছু ৪০০ টাকা না দিয়ে পোশাক কেন দিচ্ছেন? ওখানেই তো টাকা চুরি করছেন!’’ যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষকের দাবি, ‘‘টাকা না দিয়ে পোশাক বানিয়ে দেওয়ার বিষয়টি স্কুল পরিদর্শকের কার্যালয়ে জানিয়েছিলাম।’’

Advertisement

এ দিন বছর তিনেক আগে তৈরি হওয়া স্কুলের দোতলার ঘর নির্মাণেও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন অভিভাবকেরা। ঘরটির ঢালাই সম্পূর্ণ না হওয়ায় একটি অংশ অব্যবহার্য অবস্থাতেই পড়ে আছে। সরকত শেখ, নজরুল শেখ, ধীমান মণ্ডলদের অভিযোগ, ‘‘ঘরটি বিপজ্জনক অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সিঁড়ির রেলিংও তৈরি হয়নি। যে কোনও দিন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’’ স্কুলে নলকূপ না থাকায় পড়ুয়াদের পুকুরে জল খেতে ও থালা ধুতে যেতে হয় বলেও দাবি তাঁর।

বিক্ষোভে সামিল না হলেও বিষয়গুলি নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে শিক্ষকদের একাংশে। মিড-ডে মিলের খাবার নিম্ন মানের বলেও মেনে নেন শিক্ষকেরা। শিক্ষক পার্থসুন্দর সাহা, নজরুল আলম, অনুপম মণ্ডলদের কথায়, ‘‘নলকূপ বসানোর জন্য প্রধান শিক্ষককে বলেছিলাম। স্কুলের ৫টি শৌচালয়ের মধ্যে মাত্র দুটি ব্যবহার হয়। বাকিগুলো যাতে খোলার ব্যবস্থা করা হয় তা নিয়েও বলা হয়েছিল।’’

প্রধান শিক্ষকের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা। আমি অনুব্রত মণ্ডলের দল করি। তাই বিধায়ক ঘনিষ্ট এলাকার কিছু দুষ্কৃতীরাই আমায় কোণঠাসা করার জন্য এই ষড়যন্ত্র করছে।’’ যদিও ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ অস্বীকার করে বিধায়ক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। তিনি জানান, স্কুলচত্বরে রাজনীতি ঢুকবে কেন! বিষয়টি পুলিশ খতিয়ে দেখবে। মঙ্গলকোটের ২-এর শিক্ষাবন্ধু অসীম মণ্ডল জানান, পুজোর পরে পোশাকের টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন