আধ ঘণ্টার ঝড়ে পাটে ক্ষতি, বাজ পড়ে মৃত ৩

আধ ঘণ্টার ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে পাট ও সব্জি চাষ। প্রশাসন সূত্রের খবর, সোমবার দুপুরের ওই শিলাবৃষ্টিতে দাঁইহাট পুরসভার ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের চরপাতাইহাট ও খাজুটি পঞ্চায়েতের বিকিহাট মৌজার প্রায় ১০০০ বিঘা জমির পাট ও সব্জি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ দিনই পৃথক তিনটি বজ্রপাতের ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে তিন জনের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ০১:২৭
Share:

পাটে ক্ষতির নমুনা দেখাচ্ছেন চাষি। দাঁইহাটে তোলা নিজস্ব চিত্র।

আধ ঘণ্টার ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে পাট ও সব্জি চাষ। প্রশাসন সূত্রের খবর, সোমবার দুপুরের ওই শিলাবৃষ্টিতে দাঁইহাট পুরসভার ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের চরপাতাইহাট ও খাজুটি পঞ্চায়েতের বিকিহাট মৌজার প্রায় ১০০০ বিঘা জমির পাট ও সব্জি নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

এ দিনই পৃথক তিনটি বজ্রপাতের ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে তিন জনের। এদের দু’জনের বাড়ি জামালপুর এবং এক জনের বাড়ি রায়নায়। প্রথন জনের নাম সাহেব ক্ষেত্রপাল (১৮) । বাড়ি রায়না থানার নতুমধুবন গ্রামে। দ্বিতীয় জনের নাম অনিল টুডু (৩৩)। বাড়ি জামালপুর থানার দাতান গ্রামে। আর এক জন মাধবচন্দ্র ঘোষের বাড়ি (৫৯) জামালপুরের রানা পাড়ায়। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এরা সকলেই মাঠে গরু চড়ানোর সময় বাজ পড়ে ঝলসে মারা যান।

মঙ্গলবার দাঁইহাটের একাধিক এলাকা ঘুরেও দেখা যায়, কোথাও পাট গাছের ডগা ভেঙে গিয়েছে। কোথাও ঢ্যাঁড়শ গাছের খেত তছনছ হয়ে গিয়েছে। বিকিহাট গ্রামের চাষি জগদীশকুমার মাঝি জানান, দু’বিঘে জমিতে চৈত্র মাসে পাট লাগিয়েছিলেন তিনি। এক এক বিঘাতে খরচ হয়েছিল প্রায় চার হাজার টাকা। শ্রাবণ মাসের শেষে পাট কাটলে বিঘা প্রতি প্রায় চার কুইন্ট্যাল পাট উঠত। কিন্তু ঝড়ে সব নষ্ট হয়ে গিয়ে সর্বসাকুল্যে ৫০কেজি মতো পাট মিলবে বলে তাঁর দাবি। জগদীশবাবুর মতোই অবস্থা আনন্দ মজুমদার, গোলক মাঝি, নিতাই মাঝিদের। পাট চাষি বাবু মাঝির আক্ষেপ, ‘‘শিলাবৃষ্টি না হলে প্রায় ৭০০ আঁটি পাটকাঠি হতো। কিন্তু এ বার কিছুই হল না। যা খরচ হয়ে গিয়েছে তাতে দিনমজুরদের টাকাই উঠবে না।’’ এরপরে ওই জমিতে নষ্ট হয়ে যাওয়া পাট তুলে নিয়ে খরিফ ধান লাগানো হবে। পাটগুলো জৈব সার হিসাবে ব্যবহৃত হবে জানালেন পাট চাষি শ্যামলী বিশ্বাস। তাঁর চিন্তা, ‘‘এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল। এখন কিভাবে রুটি-রুজির সংস্থান করব, বুঝতে পারছি না।’’ সাধনা মণ্ডলও বলেন, ‘‘টাকা ধার করে বিঘা চারেক জমিতে পাট লাগিয়েছিলাম। আশা ছিল, এ বার পাট উঠলে যে লাভ হবে তা দিয়ে মেয়ের বিয়ের খরচ জোগাব। কিন্তু কী থেকে কি হয়ে গেল। দেনার দায়ে এবার না পথে বসতে হয়!’’

Advertisement

পাট চাষিদের মতোই দুরবস্থা পেঁপে, ঢ্যাঁড়শ, ঝিঙে, পটল চাষের। কোথাও পেঁপে গাছ পুরো নুইয়ে পড়েছে, পাতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে, কোথাও শশা খেত ঝড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে রয়েছে। সব্জি চাষি মাধব মণ্ডলের আশঙ্কা, ‘‘পাঁচ বিঘাতে ঢ্যাঁড়শ লাগিয়েছিলাম। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে সাত হাজার টাকা। যেখানে বিঘায় প্রায় ১৫-১৬ হাজার টাকা লাভ হয় সেখানে এ বার শিলাবৃষ্টির জন্য লাভের মুখই দেখতে পাব না।’’

দাঁইহাট ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কার্তিকচন্দ্র মণ্ডলের দাবি, ‘‘সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পেঁপে চাষের। এক বিঘাতে পেঁপে চাষের খরচ প্রায় ১৫ হাজার টাকা। পেঁপের যে ফুল হয়েছিল সেগুলো সব পচে যাবে। বরবটি চাষেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিল পড়ে কলায় দাগ লেগে গেছে। ওগুলোও পচে যাবে।’’ দাঁইহাটের পুরপ্রধান বিদ্যুৎবরণ ভক্তও জানান, চাষের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সহকারী কৃষি অধিকর্তা, মহকুমাশাসক, কৃষি উন্নয়ন আধিকারিক ও ব্লক উন্নয়ন আধিকারিককে জানানো হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সহকারী কৃষি অধিকর্তা আজমির মণ্ডল বলেন, ‘‘কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক ওই এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট পেয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন