পিছনে বসলেও হেলমেট লাগবে!

হেলমেট পরেননি কেন? ‘‘আমি তো চালকের পিছনে বসে আছি। আমাকেও পরতে হবে?’’ শুক্রবার সকালে বর্ধমান শহরের বীরহাটা মোড়ের এই কথোপকথনই বলে দেয় পরিস্থিতি বদলেছে কি না।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:১৯
Share:

ঢলদিঘির পাম্পে হেলমেট ছাড়াই মিলছে তেল।

হেলমেট পরেননি কেন?

Advertisement

‘‘আমি তো চালকের পিছনে বসে আছি। আমাকেও পরতে হবে?’’

শুক্রবার সকালে বর্ধমান শহরের বীরহাটা মোড়ের এই কথোপকথনই বলে দেয় পরিস্থিতি বদলেছে কি না।

Advertisement

মাথায় হেলমেট পরা মোটরবাইক আরোহীর সংখ্যা মাস দুয়েক আগের থেকে একটু বেড়েছে হয়তো, কিন্তু যে হেলমেটগুলি মাথায় আছে, তাতে দূর থেকে ধোঁকা দেওয়া গেলেও আদপে আইন, মাথা কোনওটাই বাঁচে না।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পরে জেলা জুড়ে ‘সেফ ড্রাইড, সেভ লাইফ’ কর্মসূচি নেওয়া হয়। জাতীয় সড়ক, এক্সপ্রেসওয়ে থেকে শহরের নানা মোড়ে পুলিশের টহল দেখা যায়। পেট্রোল পাম্পগুলি হেলমেট ছাড়া তেল দেওয়া একরকম বন্ধ করে দেয়। কিন্তু পোস্টারে, হোর্ডিংয়ে, নাটকে প্রচারের পরেও পরিস্থিতি যে কে সেই। এখনও ৮০ শতাংশ আরোহী হেলমেট পড়তে দেখা যায় না। তার সঙ্গে কিছু পেট্রোল পাম্পেও হেলমেট ছাড়া তেল দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।

ফল, একাধিক দুর্ঘটনা। কয়েকদিন আগেই নিয়ম না মেনে বাইক চালানোর খেসারত দিতে গিয়ে প্রাণ গিয়েছে মঙ্গলকোটের চার জনের। বর্ধমানের নতুনগ্রাম থেকে দিদি, ভাগ্নে-ভাগ্নিকে মোটরবাইকে চাপিয়ে বাদশাহী রোড হয়ে ফিরছিলেন মঙ্গলকোটের যুবক। বালির ডাম্পারের ধাক্কায় প্রাণ হারান চার জনেই। বলা বাহুল্য, কারও হেলমেট ছিল না। মেমারিতেও একই ভাবে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক জনের।

গোলাপবাগে চালকের মাথা ফাঁকাই।

এ দিন দুপুর পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে পাঁচ মোটরবাইক চালকের মধ্যে তিন জনের মাথায় হেলমেট দেখা যায়। কিন্তু পিছনে বসা আরোহীদের মাথা ফাঁকা। এমনকী, স্কুলে দিতে যাওয়ার পথে বাবা-ছেলে, স্কুটি নিয়ে মহিলা, কলেজ পড়ুয়াদেরও মাথাও ফাঁকা। শহরের ভিতর জিটি রোডের উল্লাস থেকে স্টেশন পর্যন্ত পুলিশের ‘কড়াকড়ি’ থাকায় হেলমেটের ভিড় দেখা যায়। কিন্তু বাকি শহর ঢিলেঢালা। নজরদারি, সচেতনতা দুইয়েই।

দেখা মেলে কলেজ ছাত্রী সুরঞ্জনা রায়ে। দুটি বাসকে ওভারটেক করে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘ধুস! পুজোর আগে সব সময় হেলমেট পড়লে চুলের বারোটা বেজে যাবে।’’ সদ্য স্কুলে পা দেওয়া ছেলেকে মোটরবাইকে বসিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে গোদার অনুজিৎ সরকারও বলেন, ‘‘কাছেই তো স্কুল। হেলমেটের প্রয়োজন নেই।’’ রাস্তার দু’ধারে ব্যবসায়ীরা জানান, টানা প্রচার ও তেল দেওয়া নিয়ে কড়াকড়ি থাকায় এখন ৬০ শতাংশ বাইক চালকের মাথায় হেলমেট থাকে। কিন্তু সেটা জিটি রোডই। অলিগলিতে চালকদের মাথা ফাঁকাই।

এ দিকে, নতুন মোটরবাইক রেজিস্ট্রেশনের জন্য হেলমেট কেনার নথি দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, হেলমেটে আইএসআই ছাপ রয়েছে কি না এবং দোকেনের ভ্যাট আছে কি না দেখে তবেই রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে। তবে এতে সমস্যায় পড়েছে খুচরো হেলমেট-বিক্রেতারা। শহরের অধিকাংশ হেলমেট-ব্যবসায়ীর ভ্যাট-নম্বর নেই। হেলমেট-ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ শীল, পার্থ ঘোষরা বলেন, “জীবনের জন্য নয়, পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে হেলমেট পড়ছে লোকে। তার উপর ভ্যাট-নম্বরের জ্বালায় হেলমেট বিক্রি কমে গিয়েছে।”

পুলিশেরও দাবি, শুধু হেলমেট পড়া নয়, ঠিকঠাক হেলমেট পড়াটাও জরুরি। শুধু ধরপাকড় করে লাভ হবে না। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “প্রথম দু’মাস সচেতনতার উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। এখন হেলমেটবিহীন চালকদের ধরে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এরপরে আরোহীদেরও হেলমেট পড়ার জন্য জোর দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে যথাযথমানের হেলমেট পড়ছে কি না তা দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন