স্মৃতি জড়ানো বাড়ি ভেঙে বহুতল, ক্ষোভ

পুরসভার আইন মেনেই পুরনো বাড়ি ভেঙে উঠছে বহুতল। তবে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত একমাত্র স্থানটিও হারিয়ে যাচ্ছে দেখে বর্ধমানের সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ তাঁদের খারাপ লাগাটুকু চেপে রাখতে পারছেন না। শহরের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করা কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১৯৩৬ সালে বিবি ঘোষ রোডের উপর ওই বাড়িতেই শান্তিনিকেতন যাওয়ার পথে আতিথেয়তা গ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

Advertisement

উদিত সিংহ

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ০১:২৭
Share:

এই বাড়ি ভেঙেই উঠছে বহুতল। নিজস্ব চিত্র।

পুরসভার আইন মেনেই পুরনো বাড়ি ভেঙে উঠছে বহুতল। তবে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত একমাত্র স্থানটিও হারিয়ে যাচ্ছে দেখে বর্ধমানের সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ তাঁদের খারাপ লাগাটুকু চেপে রাখতে পারছেন না।
শহরের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করা কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১৯৩৬ সালে বিবি ঘোষ রোডের উপর ওই বাড়িতেই শান্তিনিকেতন যাওয়ার পথে আতিথেয়তা গ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। শহরবাসীর তরফে কবিকে একটি নাগরিক সংবর্ধনাও দেওয়া হয়। সংবর্ধনা সভায় উপস্থিতি ছিলেন বাড়ির মালিক তথা সেই সময়ের বিশিষ্ট আইনজীবী দেবপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, তাঁর স্ত্রী রেখাদেবী, মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাব, চিকিৎসক অহিভূষণ মুখোপাধ্যায়, জেলাশাসক এমএইচ লেথব্রীজ-সহ শহরের বিশিষ্টজনেরা। মানপত্র লেখায় হয় রূপোর পাত্রে। মানপত্র পাঠ করেন বিশিষ্ট পণ্ডিত বীরেশ্বর তর্কতীর্থ। বর্ধমান হরিসভা হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা গান গেয়ে শোনান কবিকে। শান্তিনিকেতন গড়ে তোলার জন্য কবিকে অর্থ সাহায্যও করা হয় বলে জানা যায়।
এ হেন স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি ভেঙে ফেলার কাজ চলছে দেখে নিজেদের আক্ষেপটুকু চেপে রাখতে রাখতে পারছেন না শহরের অনেকেই। ইতিহাসবিদ নীরদবরণ সরকারের আক্ষেপ, ‘‘শহরে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত আর কিছুই রইল না।’’ বাড়িটি না ভাঙার জন্য আবেদনও করা হয় বর্তমান মালিক চন্দ্রচূড় মুখোপাধ্যায়কে। বর্ধমান হেরিটেজ অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সর্বজিৎ যশ বলেন, ‘‘বছর খানেক আগে আমরা চন্দ্রচূড়বাবুকে বাড়িটি না ভাঙার জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তাতেও কোনও ফল মিলল না।’’

Advertisement

তবে বাড়িটি ভেঙে ফেলার জন্য কোনও আইনি সমস্যা নেই বলেই জানা গিয়েছে। পুরসভার সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর, তথা আইনজীবী অরূপ দাস বলেন, ‘‘সমস্ত আইন মেনেই ওই ভাঙার কাজ চলছে। পুরসভার আইন মেনেই সব কাজ চলছে।’’ পুরসভার পুরপ্রধান স্বরূপ দত্তও বলেন আইন মেনেই কাজ চলছে। তবে সেই সঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ব্যক্তিগত সম্পত্তি হওয়ায় ওই নির্মাণ কাজ নিয়ে আমাদের আপত্তি জানানোর কোনও অধিকার নেই। তবে শহর জুড়ে রবীন্দ্রনাথের একমাত্র স্মৃতিটিও এ ভাবে হারিয়ে যেতে দেখে ভীষণ খারাপ লাগছে।’’ যদিও বাড়ির বর্তমান মালিকদের তরফে জানানো হয়েছে, বাড়িটি বিপজ্জনক অবস্থায় ছিল। তাই ভেঙে ফেলা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। ইতিমধ্যেই বাড়িটির চত্বরের একাংশে একটি বহুতল নির্মাণের কাজ চলছে। এ বার বাড়ি ভেঙে দ্বিতীয় বহুতলটিও মাথা তুলবে দিন কয়েকের মধ্যেই। তাই মন খারাপ সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি আপাতত যেন ‘ভাঙার গান’ গেয়ে চলেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন