দুশোতেই হাতবদল পুরিয়ার

এলাকাবাসীর দাবি, হেরোইনের কবলে পড়ছে মূলত স্কুল, কলেজ পড়ুয়া এবং কমবয়সীরা। সম্প্রতি আসানসোলের রেলপারে কমিশনারেটের এডিসিপি (‌সেন্ট্রাল) জে মার্সিকে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানান মহিলারা।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:৩০
Share:

—ফাইল চিত্র।

কাউকে ফোনে সংক্ষিপ্ত কোনও নির্দেশ দিলেন এক মাঝবয়সী ব্যক্তি। খানিক বাদে, দেখা গেল দু’জন যুবককে। টাকার বদলে দ্রুত হাতবদল হল কিছু একটার। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তা ‘পুরিয়া’।— পশ্চিম বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের মতে, এ ভাবেই চলছে হেরোইনের কারবার। আর নেশার ফাঁদে পড়ে অশান্তি বাড়ছে বাড়িতে, এলাকায়।

Advertisement

বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, হেরোইনের কারবার নানা ভাবে চলছে এই জেলায়।

কী রকম? ভোর সাড়ে ছ’টা-সাড়ে ছ’টা। জামুড়িয়ার একটি মোড়ের কাছে ফি দিনই দেখা মেলে ওই মাঝবয়সীর। এক জন, দু’জন করে ‘ক্রেতা’ আসছেন তাঁদের কাছে। মাত্র দুশো টাকার বিনিময়ে হোমিওপ্যাথ ওষুধের শিশির আকারের কাগজের পুরিয়ার হাতবদল হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই ব্যক্তিকে কখনও হেঁটে, কখনও বা মোটরবাইকে সওয়ার হয়ে লাগোয়া নানা এলাকায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ওই ব্যক্তি দু’ভাবে কারবার চালান। প্রথমত, ‘চেনা মুখ’ হলে সরাসরি হাতবদল হয় হেরোইনের। দ্বিতীয়ত, বিশেষ ‘চেনা সূত্রে’ ওই ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ক্রেতাদের ওই ব্যক্তি ডেকে পাঠান স্থানীয় একটি ফুটবল মাঠে অথবা একটি মোড়ের পাশে। বিশেষ সূত্রে জানা গেল, জামুড়িয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় হেরোইন কারবারের অন্যতম মাথা ওই ব্যক্তি।

Advertisement

জামুড়িয়ার একটি পেট্রোল পাম্প থেকে একটি গ্রামে ঢোকার রাস্তায় মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে এক যুবক। আপাতদৃষ্টিতে ওই যুবককে দেখলে মনে হবে, উদ্দেশ্যহীন ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। স্থানীয় তিনটি এলাকায় তার ক্রেতা রয়েছে বলে জানা গেল। সব কারবারিই যে হেরোইন বিক্রি করতে রাস্তায় নামে, এমনটা নয়। যেমন, বিশেষ সূত্রে জানা যায়, জামুড়িয়ার একটি বস্তি এলাকায় এক ব্যক্তি নিজের বাড়ি থেকেই হেরোইন বিক্রি করে দিনভর। জামুড়িয়ার অন্য একটি এলাকায় এক মন্দিরের কাছাকাছি এক জনের দেখা মিলল। ‘ক্রেতা’রা জানান, ফোনে না ডাকলে ওই ‘বিক্রেতা’র দেখা মেলে না।

অন্ডাল থানা এলাকার হরিপুরেও দু’জন যুবক হেরোইন কারবারের সঙ্গে যুক্ত। তারা নেশা করতেও পটু। এ ছাড়া বেশ কিছু হেরোইনের ঠেকও রয়েছে বলে জানা গেল। জানা যায়, প্রায় দিনভরই জামুড়িয়ায় একটি সরকারি দফতরের কাছাকাছি স্থানে, জাতীয় সড়কের কাছে এক এলাকায় এই ধরনের ঠেক রয়েছে। একই রকম ঠেক রয়েছে রানিগঞ্জের বেশ কিছু এলাকায়।

কী ভাবে শিল্পাঞ্চলে ঢুকছে হেরোইন? পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, অজয় পেরিয়ে পড়শি জেলা বীরভূমের জামালপুর, খয়রাশোল, নবসোনা, হজরতপুর, বরা, রসায় প্রভৃতি এলাকা থেকে জামুড়িয়ার বাগডিহা-সিদ্ধপুর, দরবারডাঙায় ঢোকে নেশার সামগ্রী। হেরোইনের সঙ্গে এই পড়শি-জেলার যোগ সম্পর্কে বলতে গিয়ে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, বছর তিনেক আগে পাণ্ডবেশ্বরের একটি হোটেল মালিককে গ্রেফতার করা হয়। ওই ব্যক্তির বীরভূমের হেরোইন কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বলে অভিযোগ। পশ্চিম বর্ধমানে হেরোইন আসার অন্য পথটি ট্রেন। পুলিশের দাবি, বধর্মান ও ধানবাদ থেকে ট্রেনে করে হোরোইন ঢোকে রানিগঞ্জে। তার পরে তা আসানসোলের কিছু এলাকায় পৌঁছয়। সেখান থেকে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় নানা প্রান্তে।

এলাকাবাসীর দাবি, হেরোইনের কবলে পড়ছে মূলত স্কুল, কলেজ পড়ুয়া এবং কমবয়সীরা। সম্প্রতি আসানসোলের রেলপারে কমিশনারেটের এডিসিপি (‌সেন্ট্রাল) জে মার্সিকে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানান মহিলারা। তাঁদের বক্তব্য, নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে ঘরের আসবাব, গয়না পর্যন্ত বিক্রি করছে ছেলেরা। জে মার্সি অবশ্য বলেন, ‘‘হেরোইনের কারবার রুখতে অভিযান চলে নিয়মিত। ইতিমধ্যেই ১৪ জনকে নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা গিয়েছে।’’

তবে নেশা রুখতে পুলিশি অভিযানের পাশাপাশি অভিভাবক, শিক্ষক, প্রতিবেশী, সকলেরই সচেতন হওয়া দরকার বলে মনে করেন নাগরিকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন