এই বাড়ি ঘিরেই বিতর্ক।
রাস্তা দখল করে স্ত্রীর নামে বাড়ি তৈরি করছেন কাউন্সিলর। তোয়াক্কা করা হচ্ছে না পুর-আইনেরও। সম্প্রতি এমনই অভিযোগ উঠেছে গুসকরার তৃণমূল কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। বেআইনি নির্মাণ বন্ধের জন্য এক বাসিন্দা হাইকোর্টেরও দ্বারস্থ হন। তারপরে বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে মহকুমাশাসক কিংবা বিডিও-কে তদন্ত করে আগামী ৮ নভেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বাসিন্দারা জানান, চলতি বছরের ২৮ জুন হাটতলায় নিজেদের বাড়ির ঠিক উল্টো দিকে নিত্যানন্দবাবুর স্ত্রী স্বপ্নাদেবী একটি দোকানঘর ও সামান্য পরিমাণ জায়গা কেনেন। বাড়ি তৈরির অনুমোদন মেলে ১১ অগস্ট। মাত্র দু’সপ্তাহের মাথায় অনুমোদন পাওয়া নিয়েও তৈরি হয় বিতর্ক। কারণ সাধারণ ভাবে অনুমোদন পেতে গেলে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগে বলে এলাকাবাসীর একাংশের দাবি। অথচ স্বপ্নাদেবীর আবেদন করা, বাস্তুকারদের এলাকা দেখে পুরসভা রিপোর্ট তৈরি করা-সহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া ওই সময়ের মধ্যেই হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরব হয় বিরোধীরাও। পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের মনোজ সাউয়ের ক্ষোভ, ‘‘বাড়ি তৈরির অনুমোদন পেতে গেলে সাধারণ মানুষের জুতোর শুখতলা খয়ে যাচ্ছে। সেখানে কাউন্সিলরের বেআইনি বাড়ি তৈরির ছাড় মিলছে নিমেষে।”
এই বিতর্কের মাঝেই পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায়ের কাছে ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে পুর-আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ করেন কয়েক জন বাসিন্দা। অভিযোগের পরেও বিশেষ লাভ না হওয়ায় বাসিন্দারা মুখ্যমন্ত্রী ও জেলাশাসকের কাছেও চিঠি দেন। তবে ইতিমধ্যে বাড়ির কাঠামো তৈরি হয়ে যায় বলে বাসিন্দারা জানান। এরপরেই বিভাস গড়াই নামে এক জন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তারই প্রেক্ষিতে গত ৪ অক্টোবর হাইকোর্ট তদন্তের ওই নির্দেশ দেয়। বিভাসবাবুদের অভিযোগ, হাটতলার মত গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত রাস্তা দখল করে বেআইনি নির্মাণ চলছে। পুর আইন অনুসারে কোনও রকম ছাড় না দিয়েই রাস্তা দখল করে নতুন করে সিঁড়ি নির্মাণ-সহ দোতলা বাড়ি তৈরি হচ্ছে।
অভিযুক্ত কাউন্সিলর নিত্যানন্দবাবুর যদিও বক্তব্য, ‘‘স্ত্রী নিজের জমানো টাকায় ওই জায়গা ও ঘর কিনেছেন। নিয়ম মেনে পুরসভায় নকশা জমা দিয়ে বাড়ি তৈরির অনুমোদন চেয়েছেন। পুরসভার বাস্তুকারেরা পরিদর্শন করে সন্তোষজনক রিপোর্ট দেওয়ার পর কর্তৃপক্ষ বাড়ি তৈরির জন্য অনুমোদন দিয়েছেন। এর মধ্যে আমার ভূমিকা কোথায়?” যদিও ওই নির্মাণকে বেআইনি বলে সরব হয়েছেন শাসকদলের কাউন্সিলরদেরই একাংশ।
মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে বাসিন্দারা আরও অভিযোগ করেছেন, বেআইনি ভাবে বাড়ি নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে ওয়ার্ডে দেবোত্তর সম্পত্তির উপরেও বেআইনি ভাবে নির্মাণ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কাউন্সিলর মল্লিকা চোঙদারের ক্ষোভ, ‘‘ওই কাউন্সিলর আর পুরপ্রধান মিলে পুরসভাকে ভক্ষণের জায়গায় পরিণত করেছেন।” গুসকরা নাগরিক কল্যাণ কমিটির সম্পাদক তপনকুমার মাজিরও বক্তব্য, ‘‘গোটা শহর জুড়ে বেআইনি মদত দিচ্ছেন নিত্যানন্দবাবুরা। তাঁর বাড়িও যে বেআইনি ভাবেই তৈরি হবে, তাতে আশ্চর্যের কী!” যদিও পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায়ের দাবি, ‘‘পুরবোর্ডের সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমার ব্যক্তিগত মতের কোনও দাম নেই।” মহকুমাশাসক মুফতি শামিম সওকত বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশ মানা হবে।” নিজস্ব চিত্র।