মনোজের সঙ্গে পুষ্পা ভালোটিয়া। ফাইল চিত্র
মহিলার মৃত্যুর ঘটনায় সিআইডি-র তদন্তে যথেষ্ট ফাঁক রয়েছে। তাই রানিগঞ্জের বধূ পুষ্পা ভালোটিয়ার (৩৯) মৃত্যুর ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হল সিবিআই-কে। তদন্তভার হস্তান্তরিত করার নির্দেশ দিতে গিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এমনই মন্তব্য করেছেন বলে জানিয়েছেন মামলার সরকারি আইনজীবী।
৫ অক্টোবর, ২০১৭। দুপুর আড়াইটা। রানিগঞ্জের অন্যতম প্রধান রাস্তা নেতাজি সুভাষ বসু রোডের অদূরেই এক অভিজাত বাড়িতে চলল গুলি। গুলির আওয়াজ শুনে থমকে যায় এলাকা। খানিক বাদেই পুলিশ এসে বাড়ির রান্নাঘরের কাছে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ভালোটিয়া পরিবারের বধূ পুষ্পার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে। কলকাতার বাসিন্দা, পুষ্পার দাদা গোপাল অগ্রবাল পুলিশের কাছে দাবি করেছিলেন, ওই দিনই বোনের স্বামী মনোজ ভালোটিয়া তাঁকে ফোনে জানান, পুষ্পা ‘আত্মঘাতী’ হয়েছেন।
কিন্তু গোপালবাবু ভগ্নিপতি মনোজ, মনোজের দাদা রাজেশ ও বৌদি সবিতার বিরুদ্ধে রানিগঞ্জ থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তার পরে গত বছর ডিসেম্বরে তদন্তভার যায় সিআইডি-র কাছে। কিন্তু এর পরে আট মাস কেটে গেলেও মনোজ বা তাঁর পরিবারের কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এর পরে পুলিশ ও সিআইডি-র বিরুদ্ধে ‘নিষ্ক্রিয়তা’র অভিযোগ করে ফের মামলা দায়ের করেন গোপালবাবু।
ওই মামলার আবেদনে দাবি করা হয়, ময়না-তদন্তে জানা গিয়েছে, পুষ্পাকে গুলি করে খুন করা হয়েছে। মামলার সরকারি আইনজীবী শীর্ষণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিচারপতি মান্থা তাঁর নির্দেশ দিতে গিয়ে জানিয়েছেন, সিআইডি তদন্তে যথেষ্ট ফাঁক রয়েছে। ঘটনার তদন্ত করবে সিবিআই।
কিন্তু কী সেই ফাঁক? সরকারি আইনজীবীর দাবি, পুষ্পার দেহের ‘ফরেন্সিক রিপোর্ট’ এখনও মেলেনি। তাঁর মাথায় যে গুলি লেগেছিল, সেই গুলির ‘ব্যালিস্টিক রিপোর্ট’ পর্যন্ত তদন্তকারীরা হাতে পাননি।
গোপালবাবুর আইনজীবী সোমপ্রিয় চৌধুরীর দাবি, এই মৃত্যু ‘আত্মহত্যা’ বলে মনোজ দাবি করলেও ঘটনার দিন হাসপাতালে গিয়ে গোপালবাবু দেখেন, তাঁর বোনের দু’হাত ও দু’পা অগ্নিদগ্ধ এবং তাঁর মাথায় গুলি করার চিহ্ন রয়েছে। পুলিশে অভিযোগ করে গোপালবাবু প্রশ্ন তুলেছিলেন, কী ভাবে কেউ মাথায় গুলি করে নিজের হাতে-পায়ে আগুন ধরাতে পারে। অথবা, নিজের হাতে-পায়ে আগুন ধরিয়ে কেউ নিজেরই মাথায় গুলি করতে পারে কি না।
যদিও পুলিশি তদন্তে দাবি করা হয়েছিল, পুষ্পার দেহের কাছ থেকে একটি সুইসাইড নোট ও ডায়েরি উদ্ধার করা হয়। সেই নোটে লেখা ছিল, ‘মানসিক অবসাদে ভুগছি, আমার যাওয়ার সময় চলে এসেছে..’ ইত্যাদি নানা বিষয়।
মামলার সরকারি আইনজীবীর দাবি, মনোজ পলাতক। কিন্তু গত সপ্তাহে মনোজের আইনজীবী বিচারপতি মান্থার এজলাসে একটি আর্জি জানান। সেখানে বলা হয়, অভিযুক্ত মামলায় যুক্ত হতে চান। একই সঙ্গে মনোজের আইনজীবী আদালতে জানিয়েছিলেন, তাঁর মক্কেল পলাতক নন। পুলিশ তাঁর খোঁজই করেনি।
গার্হস্থ্য হিংসায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ সামনে আসার পরে বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে আসানসোল আদালতে। আইনজীবী অমিতাভ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাধারণত, সামগ্রিক ভাবে সমাজকে নাড়া দেয়, এমন ক্ষেত্রেই আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। কিন্তু গার্হস্থ্য হিংসার তদন্তভার সিবিআই-কে দেওয়ার নির্দেশ অতীতে দেওয়া হলেও, তা সংখ্যায় নিতান্তই কম। কিন্তু এই মামলার গুরুত্ব বুঝে মহামান্য বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন।’’