হোমে থেকেই পড়তে চেয়ে সফল আলিমা

গ্রামের কিছু লোকজনের কটূক্তি, উত্ত্যক্ত করার হাত থেকে বাঁচাতে বড় মেয়েকে পাঠান নিজের বাপের বাড়িতে। আর নানা চেষ্টার পরে ছোট মেয়েকে পাঠাতে পারেন আসানসোলের এক হোমে।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৭ ১২:৫৫
Share:

আলিমা খাতুন।— নিজস্ব চিত্র

হঠাৎই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন স্বামী। দুই কিশোরী মেয়েকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েন মহিলা। গ্রামের কিছু লোকজনের কটূক্তি, উত্ত্যক্ত করার হাত থেকে বাঁচাতে বড় মেয়েকে পাঠান নিজের বাপের বাড়িতে। আর নানা চেষ্টার পরে ছোট মেয়েকে পাঠাতে পারেন আসানসোলের এক হোমে। সেই হোমে থেকে মাধ্যমিকের পরে উচ্চ মাধ্যমিকও সাফল্যের সঙ্গেই উত্তীর্ণ হল আলিমা খাতুন।

Advertisement

উচ্চ মাধ্যমিকে ৫৪ শতাংশ নম্বর পেয়েছে আলিমা। মহকুমা প্রশাসনের তরফে ফুলের তোড়া পাঠিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রলয় রায়চৌধুরী। সম্প্রতি আসানসোলের ওই বেসরকারি হোমে গিয়ে দেখা যায়, আবাসিকেরা আলিমাকে নিয়ে উৎসবে মেতেছেন। তার জন্য নানা রকম রান্না হচ্ছে। কোন কলেজে পড়বে আলিমা, সেই চিন্তাভাবনাও শুরু করেছে হোম কর্তৃপক্ষ।

আদতে আউশগ্রামের ভেদিয়ার এক গ্রামের বাসিন্দা আলিমার লড়াইটা অবশ্য খুব সহজ ছিল না। সে কথা মনে পড়লে এখনও শিউরে উঠে সে। আলিমা জানায়, ২০০৯ সালে হঠাৎ এক দিন সংসার ছেড়ে হারিয়ে যান তার বাবা। মুশকিলে পড়েন তাঁর মা নাসেরা বিবি। দুই মেয়েকে নিয়ে কোনও রকমে সংসার সামলানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু মাস কয়েক পরেই গ্রামের কিছু লোকের বদ মতলব টের পান তিনি। নিরাপত্তার জন্য প্রথমে বড় মেয়েকে বাপের বাড়ি পাঠান। পরে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, স্থানীয় বিধায়কের সহায়তায় আলিমার ঠাঁই হয় আসানসোলের হোমে।

Advertisement

হোমের কর্ণধার সাহারা মণ্ডল জানান, প্রথম থেকেই আলিমা সকলের প্রিয় হয়ে ওঠে। সে পড়াশোনা করতে চেয়েছিল। তাই স্কুলে ভর্তি করানো হয়। মাধ্যমিকে প্রথম ডিভিশনে উত্তীর্ণ হয়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই, ও এখানে থেকেই উচ্চশিক্ষার পড়াশোনা করুক। ওকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে চাই।’’ আলিমাও বলে, ‘‘আমি এখানেই থাকতে চাই। গ্রামে ফিরলেই প্রতিবেশীরা জোর করে বিয়ে দিতে চাইবে। আমার মতো হোমের অন্যদেরও আলোর পথ দেখাতে চাই।’’ তবে মায়ের অসুস্থতা নিয়ে চিন্তায় রয়েছে আলিমা। সম্প্রতি তার মায়ের একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। এই অবস্থায় মাকে ছেড়ে থাকা সমস্যার হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে জানায় সে।

আসানসোলের ইস্টার্ন রেল স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে বসেছিল আলিমা। স্কুলের শিক্ষক বিশ্বনাথ মিত্র বলেন, ‘‘আমরা ওর লড়াইয়ে পাশে থাকতে পেরে গর্বিত। ভবিষ্যতেও সব রকম সাহায্য করতে প্রস্তুত।’’ আলিমাকে হোমে পাঠাতে যিনি উদ্যোগী হয়েছিলেন, আউশগ্রামের সেই প্রাক্তন বাম বিধায়ক কার্তিকচন্দ্র বাগ বলেন, ‘‘আলিমার ফল শুনে খুব খুশি হলাম। পরেও যদি কখনও ওর পাশে দাঁড়াতে পারি, ভাল লাগবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন