চাষের জমিতে অবৈধ খাদান, নালিশ অণ্ডালে

ওই গ্রামের বাসিন্দা উজ্জ্বল পাল, দুর্গাদাস চট্টোপাধ্যায়, দেবাশিস ঘোষাল, শরৎ ঘাঁটিরা অভিযোগ করেন, তাঁদের এগারো জনের প্রায় ১৪ বিঘা চাষযোগ্য জমি রয়েছে। ১ ডিসেম্বর রাত থেকে রীতিমতো মাটি-পাথর কাটার যন্ত্র দিয়ে সেই জমিতে অবৈধ খনি চালুর জন্য খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে এক দল লোক।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:২৫
Share:

বন্দোবস্ত: দক্ষিণখণ্ডে খাদান তৈরির জন্য এই যন্ত্রগুলি আনা হয়েছে বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

বেআইনি খাদান বন্ধ করতে হবে, একের পর এক প্রশাসনিক বৈঠকে নির্দেশ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সপ্তাহখানেক আগে দুর্গাপুরে দুই বর্ধমানের প্রশাসনিক বৈঠকেও বেআইনি বালি ও কয়লা কারবার নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তার পরেও বেআইনি খাদান চালুর জন্য চাষের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে অণ্ডালে। তাতে মদত দেওয়ার অভিযোগে নাম জড়িয়েছে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের।

Advertisement

অণ্ডালের দক্ষিণখণ্ড গ্রামের এগারো জন জমিমালিক এ ব্যাপারে দুর্গাপুরের মহকুমাশাসকের কাছে ই-মেল মারফত অভিযোগপত্র পাঠিয়েছেন। তাঁরা জানান, আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটকেও অভিযোগপত্র পাঠানো হয়েছে। মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) শ্রীকান্ত পালি বলেন, ‘‘জমির মালিকদের ই-মেল পেয়েছি। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা বলেন, ‘‘অভিযোগ এখনও পাইনি। তা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ওই গ্রামের বাসিন্দা উজ্জ্বল পাল, দুর্গাদাস চট্টোপাধ্যায়, দেবাশিস ঘোষাল, শরৎ ঘাঁটিরা অভিযোগ করেন, তাঁদের এগারো জনের প্রায় ১৪ বিঘা চাষযোগ্য জমি রয়েছে। ১ ডিসেম্বর রাত থেকে রীতিমতো মাটি-পাথর কাটার যন্ত্র দিয়ে সেই জমিতে অবৈধ খনি চালুর জন্য খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে এক দল লোক। কালিপুরের বাসিন্দা গুণময় ঘোষ ও দয়াময় ঘোষের নেতৃত্বে এই কাজ হচ্ছে বলে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

Advertisement

উজ্জ্বলবাবুর অভিযোগ, ‘‘এই কাজে প্রত্যক্ষ মদত দিচ্ছেন স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অনন্ত ঘোষ। তিনি আমাদের হুমকিও দিচ্ছেন। আমাকে সরাসরি ফোন করে প্রয়োজনে বাড়িতে হামলা চালিয়ে ঘরছাড়়া করার হুমকিও দিয়েছেন।’’ তাঁর দাবি, গ্রামের বেশ কিছু বাসিন্দা অণ্ডাল থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু জমি কার, তা খোঁজ নিয়ে জানার পরেই অভিযোগ নেওয়া হবে জানিয়ে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। উজ্জ্বলবাবুর অভিযোগ, ‘‘এর পরে ফিরে এলে অনন্ত হুমকি দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী, কারও কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হবে না। দুষ্কৃতীরা কিছু টাকা দেবে, তা নিয়ে সন্তুষ্ট না থাকলে জমি হারাতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।’’

আর এক বাসিন্দা দুর্গাদাসবাবু জানান, প্রতি বছরের মতো এ বছরও তাঁরা জমিতে ধান চাষ করেছেন। কিন্তু এখন জমি জোর করে দখল করতে চাইছে দুষ্কৃতীরা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ইতিমধ্যে প্রায় চার বিঘা জমিতে ফুটখানেক মাটি কাটা হয়েছে।’’ উজ্জলবাবু, দেবাশিসবাবুরা বলেন, ‘‘বেআইনি খোলামুখ খনি তৈরি হলে গ্রামের পরিবেশ নষ্ট হবে। কোনও ভাবে জমি দখল হতে দেব না।’’

বেআইনি খনি চালুর চেষ্টায় অভিযুক্ত গুণময়বাবু, দয়াময়বাবুরা অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। আমরা এ সবের সঙ্গে যুক্ত নয়।’’ দক্ষিণখণ্ডের উপপ্রধান অনন্তবাবুরও বক্তব্য, ‘‘আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’’

বেআইনি ভাবে কয়লা কাটার অভিযোগ উঠেছে জামুড়িয়াতেও। দামোদরপুরের বাসিন্দা সৈয়দ আমির খনিতে কয়লা কাটার বিস্ফোরক সরবরাহের এজেন্ট। তাঁর অভিযোগ, ‘‘নন্ডি গ্রামে গুদামঘরের অদূরে বেআইনি ভাবে কয়লা খনন কাজ করছে দুষ্কৃতীরা। সেখানে বিস্ফোরণ ঘটানোর সময়ে গুদামঘরের বিস্ফোরকে আগুন লেগে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় গুদামঘরের চার পাশে পাঁচিল তোলার কাজ শুরু করেছি। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুষ্কৃতীরা এসে নির্মাণকর্মীদের তাড়িয়ে দিয়েছে।’’

তাঁর দাবি, পাঁচিলটি তৈরি হলে দুষ্কৃতীদের কয়লা পরিবহণের শর্টকাট রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এ ভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর জামুড়িয়া থানায় লিখিত অভিযোগ জানানোর পরে অবৈধ খনন বন্ধ ছিল। এখন আবার দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে। জামুড়িয়া থানায় অভিযোগও করেছেন বলে জানান তিনি। পুলিশ জানায়, অভিযোগের তদন্ত হবে।

সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রবীর মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে হয়তো দিন কয়েক দুষ্কৃতীরা খানিক সতর্ক থাকলেও দক্ষিণখণ্ডের ঘটনায় প্রমাণ, শীঘ্রই রমরমিয়ে বেআইনি খাদান চালু হয়ে যাচ্ছে।’’

তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনের বক্তব্য, ‘‘প্রশাসন কোনও অবৈধ খনি চলতে দেবে না।’’ দলের উপপ্রধানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কানে আসেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে এখনই কিছু বলতে পারব না।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন