আলোচনায় বর্ধমান, আশ্বস্ত করছে রেল

বেলা সাড়ে ১১টা। স্টেশনের মূল গেট দিয়ে ১ নম্বর থেকে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার ফুটব্রিজ। সেখানেই ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কয়েক জন যুবক।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২০ ০১:০৪
Share:

আসানসোল স্টেশনের ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। নিজস্ব চিত্র

থাম ও বারান্দার একাংশ ভেঙে বিপত্তি ঘটেছে বর্ধমান স্টেশনে। এর পরে রবিবার দুর্গাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল, এলাকার যাত্রীদেরও নানা ভাবে বিষয়টি ‘প্রভাবিত’ করেছে। তার জেরে নানা বিষয়ে তাঁরা ‘সংশয়’-ও প্রকাশ করেছেন। আচরণেও দেখা গিয়েছে ‘সতর্কতা’। তবে রেল জানিয়েছে, দুশ্চিন্তার কোনও কারণই নেই। এই স্টেশনের ভবন তুলনায় নতুন। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণও হয়।

Advertisement

বেলা সাড়ে ১১টা। স্টেশনের মূল গেট দিয়ে ১ নম্বর থেকে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার ফুটব্রিজ। সেখানেই ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কয়েক জন যুবক। এমন সময়ে লাউড স্পিকারে সতর্কতামূলক ঘোষণা, ‘অযথা ফুটব্রিজের উপরে কেউ দাঁড়াবেন না। প্ল্যাটফর্মে নেমে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করুন’। সঙ্গে সঙ্গে পড়িমড়ি করে দৌড়লেন ওই যুবকেরা। স্টেশনের ঝালমুড়ি বিক্রেতা শ্যামসুন্দর সাউ বললেন, ‘‘রেল প্রতিদিনই এই ঘোষণা করে। অনেকেই তোয়াক্কা করেন না। আজ ঘোষণা মাত্রই ফুটব্রিজ ফাঁকা হয়ে গেল। কে জানে বর্ধমানের ঘটনা যাত্রীদের মনে প্রভাব ফেলছে কি না।’’

দুপুর ১২টা। ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের চলমান সিঁড়ি দিয়ে উপরে ফুটব্রিজে উঠেই কলেজ পড়ুয়া সাগ্নিক দেবের নজর গেল স্টেশনের প্রধান ভবনের দোতলার ছাদে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে তাঁর স্বগতোক্তি, ‘‘ছাদের সংস্কার দরকার। মনে হচ্ছে, বৃষ্টির জল দাঁড়ায়। সামান্য ফাটলও রয়েছে। একটা কার্নিসের কিছুটা ভাঙা দেখছি। আশা করি, রেল দেখবে। তা হলেই বর্ধমানের মতো ঘটনা এড়ানো যাবে।’’

Advertisement

দুপুর দেড়টা। ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ফুল বিক্রেতা লালু মণ্ডল বলে উঠলেন, ‘‘আরে ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মের তলার ইট ক্ষয়ে গিয়েছে! বিষয়টা রেলের নজর করা উচিত।’’ এই সময়েই পাশ দিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছিলেন দু’জন। এক জনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘বর্ধমানের মতো ঘটনা দুর্গাপুরে কোনও ভাবেই ঘটবে না।’’ তবে অন্য জনের সংশয়, ‘‘কে জানে!’’—দুর্গাপুরে দিনভর এমনই নানা প্রতিক্রিয়া ছিল ট্রেনযাত্রীদের একাংশের।

তবে রেল জানিয়েছে, এ সব সন্দেহ বা সংশয় অমূলক। সব দিকেই রয়েছে কড়া নজর। দুর্গাপুর দিয়ে ট্রেন চলাচলের শুরু ১৮৫৫-র ৩ ফেব্রুয়ারি। সে দিন হাওড়া থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে রানিগঞ্জ পর্যন্ত ট্রেন চলেছিল। মূলত রানিগঞ্জ থেকে কয়লা পরিবহণের জন্যই রেললাইনটি চালু হয়। শহরের প্রবীণেরা জানান, তখন দুর্গাপুর নামে কোনও গ্রাম বা শহর ছিল না। দুর্গাপুর নামে একটি ছোট হল্ট স্টেশন চালু হয়। স্বাধীনতার পরে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট-সহ অন্য শিল্প কারখানা তৈরির পরে শহরের পাশাপাশি গুরুত্ব বাড়ে দুর্গাপুর স্টেশনের।

রেল স্টেশনটি সম্প্রসারণ করে ২০১০-এ। ২০১৯-এ স্টেশনের সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের কাজ হয়। তবুও এ দিন দুর্গাপুর স্টেশনের হাল-হকিকত নিয়ে আলোচনা করতে দেখা গিয়েছে যাত্রীদের একাংশকে। পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রাহুল রঞ্জন অবশ্য বলেন, ‘‘দুর্গাপুর স্টেশনের স্বাস্থ্য নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। তার পরেও ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন