অনিয়ম দেখলেই খোঁজ দেবে কন্যাশ্রী মেয়েরা

সকালে ব্লক অফিসে ৪০ জন ছাত্রীকে স্বাগত জানানো হয় ‘আলাপ’ লেখা উত্তরীয় দিয়ে। শুরু হয় আলোচনা। যোগ দেন কালনার মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া, ম্যাজিস্ট্রেট মালবিকা খাটুই, কালনা ২-র বিডিও মিলন দেবগড়িয়া, পঞ্চায়েতের সভাপতি আলমগির সাত্তার, সহ সভাপতি রূপা চৌধুরীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৭ ০০:৩৭
Share:

পাঠ: ছাত্রীদের বাড়ি তৈরির কাজ দেখাচ্ছেন কর্তা। নিজস্ব চিত্র

হেঁশেলে ঢুঁ মেরে ছাত্রীর প্রশ্ন, ‘দিদি কী রান্না হচ্ছে আজ?’ পাশে দাঁড়িয়ে স্বয়ং মহকুমাশাসক।

Advertisement

দৃশ্য দুই: এমন কারবার দেখলে আমাদের জানাবে।— বেআইনি মদের দোকানে অভিযান চালাতে চালাতে ছাত্রীদের লক্ষ করে এমন কথা বললেন প্রশাসনের কর্তারা। দু’টো দৃশ্যই বুধবার কালনা ২-র সরকারি অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানের নাম ‘আলাপ’। নানা সরকারি অফিস, প্রশাসনের কাজকর্মের বিষয়ে ব্লকের বিভিন্ন স্কুলের ‘কন্যাশ্রী’ ক্লাবের সদস্যাদের ধারণা দিতে এমনই অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল প্রশাসন। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এমন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের।

এ দিন সকালে ব্লক অফিসে ৪০ জন ছাত্রীকে স্বাগত জানানো হয় ‘আলাপ’ লেখা উত্তরীয় দিয়ে। শুরু হয় আলোচনা। যোগ দেন কালনার মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া, ম্যাজিস্ট্রেট মালবিকা খাটুই, কালনা ২-র বিডিও মিলন দেবগড়িয়া, পঞ্চায়েতের সভাপতি আলমগির সাত্তার, সহ সভাপতি রূপা চৌধুরীরা।

Advertisement

আলাপের শুরুতেই প্রশাসনের কর্তারা জানান, মহকুমায় অন্তত ৩০জন নাবালিকার বিয়ে রুখেছে ছাত্রীরা। আলোচনা শেষে বাদলা গ্রামে একটি অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রের গিয়ে নানা বিষয় দেখানো হয় ছাত্রীদের। ছাত্রীদের কাউকে কাউকে প্রয়োজনীয় বিষয় খাতায় ‘নোট’ নিতেও দেখা যায়। পাশে দাঁড়িয়ে নীতিনবাবু বলেন, ‘‘কোনও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সমস্যা দেখলে আমাদের জানাবে।’’

পরিদর্শন শেষ হতে না হতেই মহকুমাশাসক বিশেষ সূত্রে জানতে পারেন, দু’টি দোকানে বেআইনি ভাবে মদ বিক্রি হচ্ছে। ছাত্রীদের নিয়ে মহকুমাশাসক দোকানে গেলেও মালিক ততক্ষণে চম্পট দিয়েছে। তবে বেশ কিছু মদের বোতল বাজেয়াপ্ত করে প্রশাসন। গ্রেফতার করা হয় এক জনকে। মহকুমাশাসক এ ক্ষেত্রেও ছাত্রীদের বলেন, ‘‘এমন বেআইনি কারবার নজরে পড়লেই জানাবে।’’

এ ছাড়াও ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পঞ্চায়েত অফিস, বৈদ্যপুরের মূক ও বধির স্কুলে বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয় ছাত্রীদের। প্রশাসনের কর্তারা দেখান, বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজকর্মের হালহকিকত। বিকেলে থানায় পৌঁছয় ছাত্রীরা। বিপদে পড়লে কী ভাবে সাহায্য চাওয়া যায়, কী ভাবে অভিযোগ দায়ের করা হয় ইত্যাদি নানা বিষয় সম্পর্কে ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেন পুলিশের কর্তারা। এর পরে মহকুমাশাসকের অফিসও পরিদর্শন করে ছাত্রীরা। সেখানে ছাত্রীদের নিয়ে প্রশ্নোত্তর প্রতিযোগিতা হয়।

মহকুমাশাসকের আশা, ‘‘এমন অনুষ্ঠান ছাত্রীদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। ব্লকস্তরেও এমন অনুষ্ঠান হবে।’’ প্রশাসনের এমন উদ্যোগে খুশি স্নেহা নন্দী, রানু ঘোষ, চন্দ্রিমা বন্দ্যোপাধ্যায়েরা বলে, ‘‘অন্যায় দেখলে পালানো নয়, এটাই বার্তা ‘আলাপে’র।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন