নজরুল আঁকায় ব্যস্ত মেহের।নিজস্ব চিত্র।
খরিদ্দারদের ফল বিক্রির ফাঁকে মাঝেমধ্যেই তাঁকে দেখা যায় ব্লেড-ছুরি হাতে। এক মনে ছবি আঁকেন পেঁপে, তরমুজ নানা ফলের উপর। তিনি মেহের শেখ, কাটোয়া স্টেশন রোডের রুদ্র বাজারে সবাই এক ডাকে চেনে তাঁকে।
মেহেরের দোকানে হরেক রকম ফলের মতো তাঁর ছবির বিষয়ও বিভিন্ন। কখনও গাছ, পাখি, আবার কখনও মনীষীদের ছবি ফলের গায়ে ফুটিয়ে তোলেন তিনি। বৈশাখেই তরমুজের উপর এঁকেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আর এখন, জৈষ্ঠ্যে বিদ্রোহী কবির জন্মদিনে এঁকে ফেলেছেন তাঁর ছবি।
মেহেরই জানান, স্কুলে পড়তে পড়তেই বাবা হাত ধরে দোকানে বসিয়ে দেন। অভাবের সংসারে আরও দুটো পয়সা আসবে ভেবে মা-ও আপত্তি জানান নি। তারপর থেকে আর স্কুলের মুখ দেখা হয়নি তাঁর। ৩০ বছর ধরে ফল বিক্রি করেই সংসার সামলেছেন। ছবি আঁকার শুরু কীভাবে জানতে চাইলে মেহের বলেন, ‘‘স্কুলের ছেলেমেয়েদের দেখে খুব কষ্ট হতো। বাজারে মন টিকত না। তারপর হঠাৎই এক দিন দোকানে বসে বসে ছবি আঁকা শুরু করি। কোনও শিক্ষা না থাকায় শুরুতে অনেক ফল নষ্টও হয়েছে। এখন তবু একটু রপ্ত হয়েছে।’’
কথা বলতে বলতেই খরিদ্দারদের তরমুজের দাম বলছিলেন তিনি। মেহেরের এক নিয়মিত খরিদ্দার, ঘোষহাটের বাসিন্দা অসিতবরণ দত্ত বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যেই ফলের উপর ওনার আঁকা ছবি নিয়ে বাড়িতে ছেলেমেয়েদের দেখাই।’’ পাশের দোকানদার বামাপদ গড়াইও বলেন, ‘‘ছোট থেকেই বাজারে আসছে। কয়েক বছর দেখছি নানা মরসুমে নানা ফলের উপর ছবি আঁকছে। ক্রেতারাও ওকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ওখান থেকে ফল কেনেন।’’ তবে অনেক দোকানি আবার তাঁর এভাবে ফলে ছবি আঁকা খরিদ্দার টানার ফিকির বলেও মনে করেন। লাজুক মেহেরের অবশ্য এ সবে কান নেই। হেসে শুধু বলেন, ‘‘এ আমার চাতুরি নয়, অবসরে মন ভাল রাখা।’’