বন্ধের মুখে মিড-ডে মিল

দুর্নীতি, দুর্ব্যবহারে অভিযুক্ত সভাপতি

মিড-ডে মিলে দুর্নীতি ও শিক্ষিকাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে। তিনিও পাল্টা অভিযোগ করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। দু’জনের আকচা-আকচিতে বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে কাটোয়ার ডিডিসি গার্লস হাইস্কুলের মিড-ডে মিল। বিপাকে পড়েছেন প্রায় আড়াই হাজার পড়ুয়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৬ ০১:১১
Share:

মিড-ডে মিলে দুর্নীতি ও শিক্ষিকাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে। তিনিও পাল্টা অভিযোগ করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। দু’জনের আকচা-আকচিতে বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে কাটোয়ার ডিডিসি গার্লস হাইস্কুলের মিড-ডে মিল। বিপাকে পড়েছেন প্রায় আড়াই হাজার পড়ুয়া।

Advertisement

অভিযোগ, গত ছ’মাস ধরে মিড-ডে মিলের বিলে সই না করে তিন মুদি দোকানি ও সব্জি সরবরাহকারীর বকেয়া টাকা আটকে রেখেছেন ওই পরিচালন সমিতির সভাপতি শ্যামল ঠাকুর। পাল্টা শ্যামলবাবু অভিযোগ, তাঁকে না জানিয়ে স্কুলের সিদ্ধান্ত নেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা কবিতা সরকার। ছাত্রীদের স্কুল ইউনিফর্মের টাকার হিসেবও চেয়ে পাওয়া যাচ্ছে না বলে তাঁর দাবি। জানা গিয়েছে, শ্যামলবাবু কাটোয়ার পুরপ্রধান অমর রামের ঘনিষ্ঠ।

স্কুল সূত্রে জানা যায়, গত জানুয়ারি থেকে মিড-ডে মিলের সব্জি ও মুদিখানা ও গ্যাসের বিলে সই করেননি সভাপতি শ্যামল ঠাকুর। ফলে বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে মিড-ডে মিল। তা ছা়ড়া সর্বশিক্ষা প্রকল্পে ছাত্রীদের স্কুল ইউনিফর্ম কেনার বিলেও সই করেননি তিনি। এ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয় অভিভাবকদের মধ্যেও। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা কবিতাদেবীর অভিযোগ, ‘‘স্কুলের তহবিলে সরকারি টাকা ঢুকে গেলেও শুধুমাত্র সভাপতির গফিলতির জন্য তিন জন সব্জি ও মুদিখানার মালপত্র সরবরাহকারী সময়মতো টাকা পাচ্ছেন না। অভিভাবকেরাও প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছেন। এই অচলাবস্থার মধ্যে স্কুলের মিড-ডে মিল আর চালাতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।’’ স্কুলে অনেক অভাবী পরিবারের ছাত্রীও আসে। মিড-ডে মিল বন্ধ হয়ে গেলে দুপরের খাবার জুটবে কীভাবে এই নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকদের একাংশও। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী পৌলমী মাঝির মা রীতা মাঝির আশঙ্কা, ‘‘আমি লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করি। মেয়েটা দুপুরে স্কুলে খেতে পেত। জানি না সেটা বন্ধ হলে মেয়েকে কী করে খাওয়াব।’’

Advertisement

ফাঁপড়ে পড়েছেন মুদি ও সব্জি সরবরাহকারীরাও। কারও সাত হাজার টাকা, তো কারও তেরো হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। সব্জি সরবরাহকারী মনসুর খানের কথায়, ‘‘আমার ১৫, ৯৬৫ টাকা বাকি রয়েছে। এভাবে চললে আর স্কুলে সব্জি দিতে পারব না।’’ মুদিখানার জিনিসপত্র সরবরাহকারী অসীম দাসের আবার দাবি তাঁকে হুমকি দিয়েছেন পরিচালন সমিতির সভাপতি। তাঁর কথায়, ‘‘সভাপতি মুদিখানার বিলে ২৫ শতাংশ কমিশন দিতে হবে বলে চাপ দেন। না দিলে মিড-ডে মিলের বিলে সই করা হবে না বলেও হুমকি দেন।’’

স্কুলের স্টাফ কাউন্সিলের প্রধান অমৃতা চট্টোপাধ্যায়ের আবার অভিযোগ, গত সেপ্টেম্বরে অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষিকাদের বৈঠকে বলপূর্বক নিজের মতপ্রকাশ করেন শ্যামলবাবু। শিক্ষিকাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেন। তাঁর কথায়, ‘‘অকারণে স্কুলে অচলাবস্থা তৈরির জন্য ৩৭জন শিক্ষিকার তরফ থেকে বিষয়টি স্কুল ইন্সপেক্টর, মহকুমাশাসক ও বিধায়ককে জানানো হয়েছে।’’ কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ও সভাপতিকে সরাসরি দুষেছেন। তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে উনি মিড-ডে মিলের টাকা আটকে রেখেছেন। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও স্বপন দেবনাথকে জানানো হয়েছে।’’

তবে সমস্ত অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন শ্যামলবাবু। কবিতাদেবীর বিরুদ্ধে তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘মুদিখানার হিসাবে গরমিল রয়েছে। উনি মনগড়া হিসাব দিচ্ছেন। স্কুলের সব বিষয়ে আমায় না জানিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বছরে দু’বার অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক করার নিয়ম থাকলেও গত বছর একবার বৈঠক হয়েছিল। এ বছর তো এখনও হয়নি।’’ এমনকী, স্কুলে তাঁর বসার ঘরটাও বেশ কিছুদিন ধরে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছে বলে তাঁর দাবি। এ ছাড়াও স্কুল ইউনিফর্মের জন্য ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে যে পাঁচ লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার টাকা এসেছিল সেই টাকার হিসেব ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছে না বলেও তাঁর দাবি।

কাটোয়া পশ্চিম চক্রের বিদ্যালয় পরিদর্শক জানবাজ শেখ জানান, এ মাসের ২০ তারিখ পরিচালন সমিতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে এই বিষয়ে আলোচনা হবে। মহকুমাশাসক মৃদুল হালদারও তদন্তের করে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করার আশ্বাস দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন