জট কাটিয়ে কবে হবে উড়ালপুল

আসানসোলের পাশাপাশি, ভিন্-জেলা এবং ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দারাও যাতায়াত করেন এই রাস্তা দিয়ে। কিন্তু লেভেলক্রসিংয়ে আটকে পড়ে শহর। জট কাটাতে কুমারপুরে উড়ালপুল তৈরির পরিকল্পনা হলেও সেটির কাজ বন্ধই। কেন এই পরিস্থিতি, নাগরিক-দুর্ভোগের কী ছবি, কী বলছেন এলাকাবাসী, প্রশাসনের কর্তা থেকে মন্ত্রীরা, খোঁজ নিল আনন্দবাজার। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-য় সাংসদ বাবুলের কাছে উড়ালপুল তৈরির দাবি জানান এলাকাবাসী ও আসানসোলের বিভিন্ন বণিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৯ ০১:৫৪
Share:

এই এলাকাতেই উড়ালপুল তৈরির কথা। এ ভাবেই লেভেলক্রসিংয়ে আটকে থাকতে হয় বাসিন্দাদের। কুমারপুরে। ছবি: পাপন চৌধুরী

সেল, রেল এবং রাজ্য সরকার—সব পক্ষই প্রকল্পের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু তবুও আসানসোলের কুমারপুরে লেভেলক্রসিং লাগোয়া জিটি রোডে উড়ালপুলের নির্মাণ-জট কাটেনি। এই পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও।

Advertisement

কাজ না হওয়া প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের সব প্রস্তাবে রাজি হয়ে সেল ও রেল উড়ালপুলটি তৈরি করছে। তার পরেও নির্মাণকারী সংস্থাটিকে সহযোগিতা করছে না রাজ্য।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে রাজ্যের মন্ত্রী তথা আসানসোল উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক মলয় ঘটকের বক্তব্য, ‘‘পুল তৈরির জন্য রাজ্য সরকারের যা করণীয় তা ঠিক সময়েই করা হবে। কারণ, এটি নির্মাণে রাজ্য সরকারও অর্থ দিচ্ছে। রেল নিজের কাজ করুক।’’ ডিআরএম (আসানসোল ডিভিশন, পূর্ব রেল) সুমিত সরকার অবশ্য বলেন, ‘‘উড়ালপুল দ্রুত তৈরি করতে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাটিকে সহযোগিতা করতেই হবে।’

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-য় সাংসদ বাবুলের কাছে উড়ালপুল তৈরির দাবি জানান এলাকাবাসী ও আসানসোলের বিভিন্ন বণিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। সেল ও রেল ঠিক করে, প্রায় ২৮ কোটি টাকা খরচে ৬৩১ মিটার লম্বা উড়ালপুলটি তৈরি হবে। টাকা অনুমোদনও করে ওই দুই কেন্দ্রীয় সংস্থা। ২০১৬-র ২২মে শিলান্যাস অনুষ্ঠান থেকে বাবুল জানান, রাজ্য সরকারের কাছে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আঠারো মাসের মধ্যেই সেতু তৈরি হবে।

Advertisement

কিন্তু ওই অনুষ্ঠানের পরেই শুরু হয় ‘নির্মাণ-জট’। মাত্র এক দিন কাজ হয়েই তা বন্ধ হয়ে যায়। রেল জানিয়েছিল, প্রথমে ঠিক হয় পুলটি সাত মিটার উচ্চতার হবে। কিন্তু রাজ্য সরকার জানায়, ভবিষ্যতের পথ-পরিকল্পনা অনুযায়ী উচ্চতা এগারো মিটার হলে তবেই অনুমোদন দেওয়া হবে। ফলে, পুরনো নকশাটি বদলায় সেল ও রেল। খরচ ধরা হয় প্রায় ৫৪ কোটি টাকা। পরিবর্তিত প্রকল্পটি রাজ্য সরকার অনুমোদন দিলে ২০১৮-র ১৯ সেপ্টেম্বর কাজ শুরুর ফের সূচনা করেন বাবুল। কিন্তু দ্বিতীয় পর্বের কাজ শুরুর ৪৫ দিনের মাথায় ফের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা যন্ত্রপাতি গুটিয়ে এলাকা ছাড়ে। এখনও পর্যন্ত আর সেই কাজ শুরু হয়নি।

কেন এই পরিস্থিতি? উড়ালপুল তৈরির দায়িত্বে থাকা সংস্থাটির জিএম তপনকুমার দে জানান, প্রকল্প এলাকার মাটি পরীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু জিটি রোডের দু’পাশের জমিতে থাকা বিদ্যুতের বেশ কিছু খুঁটি, ভূগর্ভস্ত জল ও গ্যাসের পাইপলাইন সরাতে হবে। লেভেলক্রসিংকে মাঝখানে রেখে দু’পাশের প্রায় তিনশো মিটার রাস্তার গতিপথ পরিবর্তন করতে হবে। তাঁর দাবি, ‘‘এই কাজগুলি করবে জেলা প্রশাসন। গত বছর সেপ্টেম্বরে তা জেলা প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হয়নি।’’’

জেলা প্রশাসন অবশ্য যথাসাধ্য ‘সহযোগিতার’ কথাই বলছে। জেলা প্রশাসনের তরফে উড়ালপুলের বিষয়টির দায়িত্বপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক (আসানসোল) পিনাকীরঞ্জন প্রধান বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে সব দফতরের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে।’’ কিন্তু শেষমেশ কবে পথের যন্ত্রণা কমবে, কবে শহরে মাথা তুলবে ঝাঁ চকচকে উড়ালপুল, তা নিয়ে সংশয়ে এলাকাবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন