আমার শহর

রাত নামলেই চলা দায় নির্জন রাস্তায়

নির্জন রাস্তায় দিনের বেলাতেও চলাফেরা করার জো নেই। কখনও রাস্তা আটকে লুঠ, কখনও আবার মোটরবাইকে চড়ে পথচারীর সঙ্গে থাকা ব্যাগ বা গলার হার ছিনিয়ে পালানো— সুনসান এলাকায় এমন ঘটনা আকছার। অন্ধকার নামার পরে তো সমস্যা বাড়ে আরও। এলাকায় পরিত্যক্ত আবাসন থাকলে নেশার ঠেক থেকে খুন-জখম, অশান্তির শেষ থাকে না। আসানসোলের নানা প্রান্তে আইন-শৃঙ্খলার এমন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত সাধারণ মানুষ।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৫ ০১:৫৬
Share:

পরিত্যক্ত আবাসন দুষ্কর্মের আখড়া, বলছেন বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।

নির্জন রাস্তায় দিনের বেলাতেও চলাফেরা করার জো নেই। কখনও রাস্তা আটকে লুঠ, কখনও আবার মোটরবাইকে চড়ে পথচারীর সঙ্গে থাকা ব্যাগ বা গলার হার ছিনিয়ে পালানো— সুনসান এলাকায় এমন ঘটনা আকছার। অন্ধকার নামার পরে তো সমস্যা বাড়ে আরও। এলাকায় পরিত্যক্ত আবাসন থাকলে নেশার ঠেক থেকে খুন-জখম, অশান্তির শেষ থাকে না। আসানসোলের নানা প্রান্তে আইন-শৃঙ্খলার এমন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত সাধারণ মানুষ।

Advertisement

রাজ্যে তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই এই শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দিকে নজর দেওয়া হয়েছিল। সে কারণেই গঠন করা হয়েছিল আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। তৈরি হয়েছে মহিলা থানা। উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তার সংখ্যা বেড়েছে। নানা এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা, আধুনিক টহলদার ভ্যান-সহ নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে কিছু এলাকায় দুষ্কর্ম রোখা যায়নি, বলছেন বাসিন্দারা।

হিরাপুরের রাধানগর রোড লাগোয়া ৮ নম্বর বস্তি অঞ্চল এমনই একটি এলাকা। বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, সন্ধ্যা নামলেই নেশার ঠেক বসায় বেশ কিছু যুবক ও কিশোর। তার পরে শুরু হয় চুরি, ছিনতাই। তখন রাস্তায় চলাফেরা করা দায় হয়। মাস কয়েক আগে এখানে এক কিশোরকে খুন করে পরিত্যক্ত খাদানে ফেলে দেয় দুষ্কৃতীরা। পুলিশের দাবি, তদন্তে নেমে তারা জানতে পারে, চুরির জিনিসের বখরা নিয়ে ঝামেলার জেরে সঙ্গীরা খুন করেছিল ওই কিশোরকে। পুলিশের নজরদারি বাড়লেও পরিস্থিতি বদলায়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

Advertisement

আসানসোলের রামবন্ধুতালাও এলাকা পথচারীদের জন্য বিশেষ নিরাপদ নয়। স্থানীয় নানা সূত্রে জানা যায়, এখানে একাধিক জুয়ার ঠেক চলে। এলাকারই কয়েক জন সেগুলি চালায়। পুলিশের কাছেও খবর রয়েছে, প্রচুর বহিরাগত লোকজন এই ঠেকগুলিতে যাতায়াত করে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় সময়েই এখানে গণ্ডগোল লেগে থাকে। সন্ধ্যার পরে মহিলারা রাস্তায় চলাফেরা করতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। ১ জানুয়ারি দুপুরে খুন হন এলাকার একটি তেলেভাজা দোকানের মালিক। তদন্তে নেমে নেপথ্যে জুয়ার ঠেকের কথাই জানা গিয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

আসানসোলের ঊষাগ্রাম থেকে কালিপাহাড়ি এলাকায় দিনেরবেলায় বিশেষ সমস্যা নেই। কিন্তু রাত নামলেই বিপদ, বলছেন শহরবাসী। তুলনামূলক ভাবে ফাঁকা এই এলাকায় রাস্তায় পর্যাপ্ত আলো নেই। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষজন রাতে পথে বেরোন না বলে জানান। এলাকায় পুলিশের টহলদারিও তেমন দেখা যায় না বলে জানান বাসিন্দারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনা কয়েক বাসিন্দা বলেন, ‘‘রাত বাড়লে এখানে দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বেড়ে যায়।’’ দুষ্কৃতীদের হাতে লরি চালক ও পথচারীদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে এই রাস্তায়।

আসানসোলের কল্যাণপুর আবাসন এলাকার শেষ প্রান্তের অঞ্চলটি নিরাপদ নয় বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, ওই অঞ্চলে বেশ কিছু পরিত্যক্ত ফাঁকা আবাসন আছে। সন্ধ্যার পরে সেখানে আড্ডা জমায় সমাজবিরোধীরা। অপেক্ষাকৃত ফাঁকা অঞ্চল, তার উপরে বিদ্যুৎ নেই। তাই সাধারণ মানুষের আনাগোনাও নেই। সেই সুযোগে অসামাজিক কাজকর্ম চলে বলে অভিযোগ। বছর দেড়েক আগে পরপর দু’বার এখানকার ফাঁকা আবাসন থেকে দুই কিশোরীর দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। তার পরেও এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ততটা জোরদার হয়নি বলে দাবি করেন বাসিন্দারা।

বার্নপুরের ১০ নম্বর গেট লাগোয়া এলাকা, স্কুল রোড স্টেডিয়াম রোডের মতো কয়েকটি অঞ্চল রাতে তো বটেই, দিনেও বেশ নির্জন থাকে। সেখানে ইস্কোর বেশ কিছু পরিত্যক্ত আবাসন। এলাকার বাসিন্দারা জানান, ওই আবাসনগুলিতে নানা অপকর্ম হয়। বছর কয়েক আগে সেখানে একটি ফাঁকা আবাসনে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর দেহ মিলেছিল। আসানসোলের লোকো স্টেডিয়াম লাগোয়া যোগীবাবা মোড়, আড়াডাঙা উল্টো প্রান্তের রেল টানেল এলাকা, বাবুয়াতলাওয়ের কিছু অংশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা বা পুলিশের নজরদারি বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন শহরের বাসিন্দারা। নানা স্কুলের তরফেও বারবার ছাত্রীদের আসা-যাওয়ার পথে নিরাপত্তায় দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।

সকাল হোক বা রাত, যে কোনও রাস্তায় যেন নিরাপদে চলাফেরা করা যায়, এটুকুই আর্জি শহরবাসীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন