আয় বেশি অন্য পথে, কমছে মজুর

পারিশ্রমিকের টাকায় সংসার চলে না। অন্য কাজ খুঁজছেন খেত মজুরেরা। পাড়ি দিচ্ছেন ভিন্‌ জেলায়। তাঁদের অভাবে মুশকিলে পড়ছেন চাষি। বাড়ছে কৃষিযন্ত্রে নির্ভরতা। পরিস্থিতি খোঁজ নিয়ে দেখল আনন্দবাজার। ২০০৬ সালের গণনা অনুযায়ী, জেলার বিভিন্ন ব্লকে চাষি পরিবার রয়েছে সাড়ে চার লক্ষেরও বেশি।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:০৭
Share:

অন্য কাজ খুঁজছেন খেত মজুরেরা। ছবি: পিটিআই।

খাদ্য দফতরের হিসেবে এ বার সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন করেছে এ জেলা। আলু, পাট, আনাজ চাষেও এ জেলার নাম আসে আগে। কিন্তু শস্যগোলাতেই কৃষিকাজ করতে গিয়ে সঙ্কট দেখা দিয়েছে শ্রমিকদের। চাষিদের দাবি, জমিতে শস্য বোনা থেকে শুরু করে উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ধাপে ধাপে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। খেতমজুরের অভাব ভালই টের পাওয়া গিয়েছে এ বার।

Advertisement

২০০৬ সালের গণনা অনুযায়ী, জেলার বিভিন্ন ব্লকে চাষি পরিবার রয়েছে সাড়ে চার লক্ষেরও বেশি। তাঁদের অনেকেই জানাচ্ছেন, বছর দশেক আগেও পরিস্থিতি অন্যরকম ছিল। তাঁরা জানান, জমি অনুযায়ী প্রত্যেক চাষির হাতে বেশ কিছু খেতমজুর থাকত। বছরের শুরুতে পারিশ্রমিক বাবদ টাকা দিয়ে দেওয়া হত তাঁদের। সারা বছর প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করে তা শোধ করতেন তাঁরা। বিপদেআপদে মজুরদের ভরসাও ছিলেন জমির মালিকেরা। এর সঙ্গে মালদহ, মুর্শিদাবাদ মত কয়েকটি জেলা থেকেও বহু মানুষ আসতেন খেতমজুরির কাজে। চাষির খামার বাড়িতে অস্থায়ী ডেরা বাঁধতেন তাঁরা। ধান কাটা, আলু বসানো থেকে পুকুর কাটা, সব কাজই করতেন তাঁরা। ফলে অনেকটাই নিশ্চিন্তে থাকতেন চাষি। কিন্তু এখন দিন বদলেছে। চারা বসানো থেকে, কীটনাশক স্প্রে করা সবেই দেখা দিয়েছে শ্রমিকসঙ্কট।

মেমারির এক চাষি গোবিন্দ কর্মকার বলেন, ‘‘ভিন জেলা থেকে এখন আর কেই খেতের করতে আসেন না। এলাকার যাঁরা তাঁরাও আগাম টাকা নিয়ে কাজ করতে রাজি হন না। ফলে সারা বছরই সমস্যা হয়।’’ কালনা ২ ব্লকের চাষি হরেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, বাড়তি টাকা দিয়েও অনেক সময় শ্রমিক মেলে না।

Advertisement

পরিস্থিতির বদলের কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, মূল সমস্যা পারিশ্রমিক নিয়ে। খেতমজুর পরিবারের নতুন প্রজন্মের অনেকেই এখন বাপ, ঠাকুর্দার পথে পা বাড়ান না। তাঁদের দাবি, খেতে সারা দিন কাজ করে কোথাও ১৪০ টাকা নগদ, আবার কোথাও নগদ ২০০ টাকা মেলে। সেখানে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে, রং করার কাজ, মার্বেল বসানোর জোগাড়ে, বাগান পরিষ্কারের কাজ করে দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা মেলে। কম কাজ করে বেশি টাকা মেলে ১০০ দিনের কাজেও।

এ ছাড়া জেলার গ্রামীণ এলাকা থেকে বহু যুবক রাজমিস্ত্রী, সোনা-রুপোর গয়না তৈরির কাজ করতে ভিন্‌ জেলায় পাড়ি দেন। সেখানে টাকা বেশি মেলায় কমে খেতমজুরের সংখ্যা। পূর্বস্থলীর খেতমজুর বিনয় মুর্মুর দাবি, ‘‘জমিতে সাত থেকে আট ঘণ্টা কাজ করে দৈনিক যে টাকা পাই তাতে সংসার চলেনা। ফলে বাড়তি রোজগারের জন্য সারা বছর রঙ এবং রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করি।’’

তাহলে মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না কেন? চাষিদের দাবি, চাষে নিশ্চয়তা নেই। কোনও সময় ফসলের লাভজনক দর মেলে। কোনও সময় লোকসানে বিক্রি করতে হয়। নিজেদের আয়েরই ভরসা নেই যেখানে, সেখানে মজুরি বাড়াবেন কী ভাবে?

সঙ্কটের কথা স্বীকার করেছে কৃষি দফতরও। জেলার এক সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে চাষিদের উপায় আধুনিক কৃষি যন্ত্র ব্যবহার করা। তাতে সমস্যা কিছুটা কমবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন