উৎপাদন বাড়লেও গত অর্থবর্ষে পৌঁছনো যায়নি লক্ষ্যমাত্রায়। তার মধ্যে রয়েছে অলাভজনক খনি নিয়ে মাথাব্যথা। যোগ হয়েছে নানা দাবিতে এলাকাবাসীর বিক্ষোভের জেরে বিভিন্ন খনিতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে আর্থিক স্থিতাবস্থা ধরে রাখতে চলতি বছরে বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন ইসিএল কর্তৃপক্ষ। সংস্থার সিএমডি রাজীবরঞ্জন মিশ্র জানান, অর্থবর্ষের গোড়া থেকে পরিকল্পনাগুলি কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সদ্য শেষ হওয়া অর্থবর্ষে লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি ইসিএল। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বছর তিনেক আগে বিআইএফআর থেকে বেরিয়েছে ইসিএল। এরই মধ্যে এক বছর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় চিন্তায় আধিকারিকেরা। এই ক্ষতি পোষাতে বেশি পরিমাণে কয়লা তোলাই এখন পাখির চোখ, জানান সিএমডি। তিনি বলেন, ‘‘চলতি অর্থবর্ষে লক্ষ্যমাত্রা ৪৭ মিলিয়ন টন। কিন্তু আমরা ঠিক করেছি, ৫০ মিলিয়ন টন কয়লা তুলব।’’ গত বছর যেহেতু লক্ষ্যপূরণ হয়নি তাই এ বার এই বাড়তি উদ্যোগ বলে জানান তিনি।
সিএমডি জানান, জার্মানি ও পোল্যান্ডের প্রযুক্তি ব্যবহার করে খোলামুখ খনির দেওয়ালে সুড়ঙ্গ কেটে কয়লা বের করার পরিকল্পনা হয়েছে। যা আগে কখনও সম্ভব হয়নি। এই প্রযুক্তিকে পরিভাষায় ‘হাই-ওয়াল’ প্রযুক্তি বলা হয়। খোলামুখ খনিতে যেখানে আর কয়লা কাটা সম্ভব নয় সেখানেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। তাঁর দাবি, এখন যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় তা তেমন উন্নত না হওয়ায় অনেক কয়লাই ভূর্গভে থেকে যাচ্ছে। হাই-ওয়াল প্রযুক্তিতে মাটির উপরের অংশ নিরাপদ রেখে ভিতরের কয়লা তুলে আনা যাবে। খনি বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্প্রতি আমেরিকায় এই প্রযুক্তিটি জনপ্রিয় ও লাভজনক হয়েছে। জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে সাতগ্রাম এরিয়ার নিমচা ও শ্রীপুর এরিয়ার তালতোড়ে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে।
সিএমডি আরও জানান, ইসিএলের আর্থিক অবস্থা মজবুত করতে কয়লা মন্ত্রকের কাছে এই রাজ্য ও ঝাড়খণ্ডে কোল ব্লক চাওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, এ রাজ্যে উন্নতমানের কোল ব্লক না মিললেও ঝাড়খণ্ডের দুমকা ও রাজমহলে দু’টি কোল ব্লক মেলার প্রক্রিয়া শেষের মুখে। দু’টি ব্লকেই প্রায় ১২০০ মিলিয়ন টন করে কয়লা রয়েছে। সেখান থেকে উত্তোলন শুরু হলে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা একশো মিলিয়ন টন পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
তবে এত পরিকল্পানার পরেও সিঁদুরে মেঘ দেখছেন সংস্থার কর্তাদের অনেকে। কারণ, একাধিক অলাভজনক খনির জন্য লোকসান হচ্ছে। সেই খনিগুলি বন্ধ করা বা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হলে সংস্থাকে বাঁচানো যাবে বলে তাঁদের দাবি। এ ছাড়া নানা কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভে উৎপাদনে বিঘ্নও আটকাতে হবে বলে তাঁরা মনে করছেন।