সিটুর গড়া ভিতেই জোটের বাজিমাত দুর্গাপুরে

গত দেড় বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া— সবেতেই সক্রিয় থাকতে দেখা গিয়েছে বাম শ্রমিক সংগঠনকে। শহরের বাসিন্দাদের মতে, দুর্গাপুরে সিটুর এই সক্রিয়তারই ফসল ঘরে তুলল জোট।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০২:০৭
Share:

জয়ের উল্লাস।

গত দেড় বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া— সবেতেই সক্রিয় থাকতে দেখা গিয়েছে বাম শ্রমিক সংগঠনকে। শহরের বাসিন্দাদের মতে, দুর্গাপুরে সিটুর এই সক্রিয়তারই ফসল ঘরে তুলল জোট। আর তাই জেলার ১৯টি আসনে ঘাসফুল ফুটলেও দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে এসে ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূলের বিজয়রথ। শাসক শিবিরের হাতছাড়া হয়েছে শহরের দু’টি কেন্দ্রই।

Advertisement

বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরের মতে, দুর্গাপুরে বরাবরই ভাল প্রভাব রয়েছে সিটুর। ২০১১ সালে পরিবর্তনের হাওয়ায় দুর্গাপুরের দু’টি আসনই হারাতে হয় সিপিএমকে। তারপর কোথাও সিটুর কার্যালয় দখল, কোথাও বা বাম সমর্থক ঠিকাকর্মীকে কাজ থেকে ছাঁটাই করা, কাজ দেওয়ার নাম করে টাকা নেওয়া, ঠিকা শ্রমিকদের মজুরির একাংশ নিয়ে নেওয়া-সহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠতে থাকে আইএনটিটিইউসি-র বিরুদ্ধে। তা ছাড়া ডিপিএল, রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা, এএসপি-সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কারখানায় শুরু হয় শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনটির কোন্দল। তৃণমূল সূত্রে খবর, এই পরিস্থিতিতে দলেরই অনেক সমর্থক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। সুযোগ বুঝে লাগাতার প্রচার চালাতে থাকে সিটু। শ্রমিক স্বার্থ নিয়ে রাজ্যপালেরও দ্বারস্থ হয় তারা। ২০১১-তে ক্ষমতায় এলে বন্ধ কারখানা খোলার জন্য পদক্ষেপ করার প্রতিশ্রুতি দেয় তৃণমূল। সেই প্রতিশ্রুতি পালনে শাসক দল ব্যর্থ বলে অভিযোগ করে ২০১৫ সালে গোড়ায় দুর্গাপুরের মুচিপাড়া থেকে বার্নপুর পর্যন্ত ‘শিল্পের জন্য হাঁটুন’ পদযাত্রার আয়োজন করে সিটু। সেই পদযাত্রায় ভিড় আশা জাগায় বাম নেতা-কর্মীদের মনে। ডিপিএলের ‘কোকওভেন প্ল্যান্ট’ চালুর দাবিতে আইএনটিটিইউসি বাদে বাকি অন্য শ্রমিক সংগঠনগুলিকে নিয়ে যৌথ আন্দোলন শুরু করে সিটু। একই ভাবে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে (ডিএসপি) আইএনটিইউসিকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন শুরু করে সিটু। এই সব আন্দোলনের ফসল প্রথম ঘরে ওঠে ২০১৫-র অক্টোবরে। ডিএসপি কর্মী সংগঠনের নির্বাচনে গত আগের বারের তুলনায় ৪ শতাংশ ভোট বাড়িয়ে বড় জয় পায় সিটু অনুমোদিত ‘হিন্দুস্তান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’। আন্দোলনে গতি আনতে সাংগঠনিক রদবদলও সেরে ফেলে সিটু।

বাসিন্দাদের মতে, সিটুর এই আন্দোলনের জোরেই বেহাল নাগরিক পরিষেবা, ডিজিটাল রেশন কার্ডে অনিয়ম-সহ বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে পথে নামে সিপিএম-ও। প্রচার শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়াতেও। স্মার্ট সিটির চূড়ান্ত তালিকা থেকে শহরের নাম বাদ যাওয়াকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাগাতার প্রচার চালানো হয়। সিপিএম সূত্রে খবর, সেই প্রচারে শহরের পাশাপাশি কর্মসূত্রে বাইরের রাজ্যে বসবাসকারী দুর্গাপুরের বাসিন্দাদেরও ভাল সাড়া মিলেছিল। বামেদের ভিত আরও পোক্ত করতে সিটুকে সামনে রেখে প্রচার চালানো হয়, গত পাঁচ বছরে শহরের ১৮টি বেসরকারি কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, সিটুর মোকাবিলায় পাল্টা প্রচার চালাতে ব্যর্থ হয়েছে শাসক দল ও তাদের শ্রমিক সংগঠন। সিপিএমের দাবি, গত কয়েক বছরে দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হামলা হয়েছে সিপিএম ও সিটুর কার্যালয়ে। ভোটাররা সে সবও ভাল চোখে নেননি বলে দাবি বাম নেতৃত্বের।

Advertisement

শ্রমিক আন্দোলনের সুফল যে মিলেছ তা স্বীকার করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। সিপিএমের দুর্গাপুর ২ পূর্ব জোনাল কমিটির সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকারের দাবি, ‘‘গঠনমূলক আন্দোলনেই মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় হয়েছে। তাই মানুষ নির্বাচনে আমাদের সমর্থন করেছেন।’’ দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের যদিও প্রকাশ্যে বলছেন, ‘‘দল পরাজয়ের কারণ খতিয়ে দেখবে।’’ তবে দুর্গাপুর পূর্বের পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ মজুমদার বলেছেন, ‘‘প্রচারে টের পেয়েছি যে দলের কয়েকজন স্থানীয় নেতার উপরে মানুষ রেগে আছেন। দলকে সব জানাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন