গোহারা হেরেও কাটোয়ায় নতুন আশা দেখছে বামেরা

একটি বাদে সব আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে সিপিএমের। ২০টির মধ্যে মাত্র একটি ওয়ার্ডে তারা দ্বিতীয় স্থানে। সেটি তৃণমূলের অমর রামের ওয়ার্ড। অমরবাবু পেয়েছেন তিন হাজারের বেশি ভোট, সিপিএম ১২১। গত দুই দশক ধরেই কাটোয়ায় কার্যত লিলিপুট হয়েই ছিল সিপিএম। সৌজন্যে, কংগ্রেসের রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু এ বারের মতো এত করুণ হাল আগে কখনও হয়েছে কি না, সিপিএম কর্মীরা মনে করতে পারছেন না। কংগ্রেস ও তৃণমূলের কুরুক্ষেত্রের মাঝে পড়েই এই দশা।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

কাটোয়া শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০৯
Share:

কাটোয়া পুরভবন। —ফাইল চিত্র।

একটি বাদে সব আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে সিপিএমের।

Advertisement

২০টির মধ্যে মাত্র একটি ওয়ার্ডে তারা দ্বিতীয় স্থানে। সেটি তৃণমূলের অমর রামের ওয়ার্ড। অমরবাবু পেয়েছেন তিন হাজারের বেশি ভোট, সিপিএম ১২১।

গত দুই দশক ধরেই কাটোয়ায় কার্যত লিলিপুট হয়েই ছিল সিপিএম। সৌজন্যে, কংগ্রেসের রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু এ বারের মতো এত করুণ হাল আগে কখনও হয়েছে কি না, সিপিএম কর্মীরা মনে করতে পারছেন না। কংগ্রেস ও তৃণমূলের কুরুক্ষেত্রের মাঝে পড়েই এই দশা।

Advertisement

সমান আসন পেয়েও কংগ্রেস টসে না গিয়ে তৃণমূলকে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দেওয়ায় কিন্তু আশার আলো দেখছেন সিপিএম নেতারা। কেননা এর চেয়ে খারাপ কিছু আর হওয়ার নেই। বরং ঈশান কোণে সন্ত্রাসের সিঁদুরে মেঘ সত্ত্বেও অন্য একটি হিসেব কষছেন তাঁরা। সেই হিসেব ঘুরে দাঁড়ানোর।

গোটা রাজ্যে তৃণমূল প্রতিপক্ষ হলেও কাটোয়ার ক্ষেত্রে সিপিএমের ‘শত্রু’ ছিল কংগ্রেস। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে কাটোয়াতে কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভার বিরুদ্ধে সে ভাবে ‘সরব’ হতে পারেনি সিপিএম। এ বার কাটোয়াতে ভিন্ন পরিস্থিতি। কাটোয়া পুরসভার ক্ষমতায় বসতে চলেছে তৃণমূল। অর্থাৎ গোটা রাজ্যের মত কাটোয়াতেও তৃণমূলের সম্মুখসমরে নামবে সিপিএম। এবং সেই সুযোগে তাদের ভোট ফের বাড়তে পারে বলে আশাবাদী কাটোয়া জোনাল থেকে জেলা সিপিএমের নেতারা। একই সঙ্গে তাঁরা আশঙ্কিত, ‘উপদ্রুত’ মঙ্গলকোট, কেতুগ্রামের যে সব নেতা-কর্মীরা ঘর-বাড়ি ছেড়ে কাটোয়াতে ‘আশ্রয়’ নিয়ে আছেন, তাঁরাও আর কাটোয়াতে ‘নিরাপদ’-এ বাস করতে পারবেন না।

সিপিএমের জেলা কমিটির সম্পাদক তথা কাটোয়া শহরের বাসিন্দা অচিন্ত্য মল্লিক বলেন, “তৃণমূল দলটা কেমন? তা নিয়ে প্রচার করলে শহরবাসীর কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। কিন্তু পুর ভোটের দিন সকাল থেকে যা ঘটেছে তাতে তৃণমূল সম্পর্কে মানুষের একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছে। তার উপর কাটোয়াতে তৃণমূল ক্ষমতায় আসায় প্রচারের সুযোগ তৈরি হল। আমাদের বাড়তি উদ্যোগ দেখা দিচ্ছে।” এমনিতে সিপিএমের হাল গত কুড়ি বছরে দিন দিন খারাপ হয়েছে। একের পর এক ভোটে সিপিএম জনসমর্থন হারিয়েছে। দলের কর্মীদের ক্ষোভ, কাটোয়াতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সেই সমর্থন ফিরে পাওয়ার চেষ্টাই করেনি সিপিএম। ভোটের আগে পুরসভার বিরুদ্ধে ‘সরব’ হলে কী আর সমর্থন মেলে? ১৯৯৫ সালে কাটোয়াতে সিপিএম পুরবোর্ড হারায়, সে বছর ১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে সিপিএম পেয়েছিল ৬টি আসন। তারপরে পুরনির্বাচন, ২০০০ সালে সিপিএমের খাতায় এসেছে ১টি আসন। ২০০৫ সালের পুরনির্বাচনেও কাটোয়াতে বোমা-গুলি চলেছিল, তারপরেও সিপিএম ২টি আসনের বেশি পায়নি। আর গতবার বা এ বার সিপিএম তো খাতায় খুলতে পারেনি! অর্থাৎ প্রতিটি নির্বাচনে সিপিএমের শুধু ক্ষয়ই হয়েছে।

সিপিএমের কাটোয়া শহরের একটি লোকাল কমিটির সম্পাদক বলছিলেন, “রাজ্যে আমরা ক্ষমতা থাকায় কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভার বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেও মানুষ সিপিএমের ঘারেই দোষ চাপিয়েছে। এ বার আমরা অনেক বেশি ‘অল আউট’ খেলতে পারব।” তাঁর দাবি, “এমন একটা সময় এই পরিস্থিতি তৈরি হল, যখন গোটা রাজ্যে সিপিএম ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তৃণমূলের বিকল্প হিসাবে মানুষ আমাদেরকেই গ্রহণ করছে। যার প্রভাব কাটোয়াতেও পড়বে।” সিপিএমের মতে, কাটোয়াতে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম দিকে ‘নৈরাজ্য’ দেখা দিয়েছিল, পুরসভার স্থায়িত্ব বাড়ার ফলে নৈরাজ্যও কমে যায়। কিন্তু এ বার ভোটের দিন যে কায়দায় ভোট করল শাসক দল, ন্যূনতম দায়বদ্ধতা থাকলে কোনও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল তা করতে পারে না। আর এখান থেকেই সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য ও প্রাক্তন বিধায়ক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের আশঙ্কা, “ভবিষ্যতে কাটোয়াতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। মানুষকে জমায়েত করে মিটিং-মিছিল করে প্রতিবাদ করাতে বাধ সাধবে তৃণমূল।” তবে জেলা সম্পাদকের আশা, “কাটোয়ার মানুষ ইতিমধ্যেই বুঝে গিয়েছেন, গোটা রাজ্য জুড়ে তৃণমূল কী করছে। তার উপর দাঁড়িয়েই অতীতে কাটোয়ার মানুষ যে ভাবে সিপিএমকে সমর্থন করেছিলেন, সামনের দিনে ফের সেই ভাবে সমর্থন করবেন।”

অন্য দিকে, তৃণমূলের ‘ভয়ে ও অত্যাচারে’ মঙ্গলকোট বা কেতুগ্রাম থেকে যে সব সিপিএমের নেতা বা কর্মীরা ‘নিরাপদ’ কাটোয়াতে এসে ঘর বেঁধেছিলেন, সোমবারের ফলের পর তাঁরাও ভীত। তাঁদের আশঙ্কা, কাটোয়াতে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকায় তাঁদের কোনও ‘সমস্যা’ হয়নি। কিন্তু কাটোয়া তৃণমূল ‘দখল’ করার পরে তাঁদের উপর হামলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সিপিএমের মঙ্গলকোট-কেতুগ্রাম এলাকার কয়েকজন নেতার আশঙ্কা, “আমাদের এলাকার তৃণমূল নেতাদের কথা মত এখানকার তৃণমূল আমাদের উপর হামলা করতে পারে। আশঙ্কার কথা আমরা ইতিমধ্যে দলের বিভিন্ন স্তরে জানিয়ে রেখেছি।”

তবে বর্ধমান জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা কাটোয়ার প্রাক্তন কাউন্সিলর শমীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাস, “তৃণমূল গণতান্ত্রিক দল। কাজেই কাটোয়া শহরের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও শান্তি রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে তৃণমূল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন