ডাইনি-কাণ্ড শিক্ষা দিল, বলছে হাটশিমুল

দু’দিন আগেই ডাইনি সন্দেহে প্রতিবেশি মহিলাকে মারধর করেছিলেন তাঁরা। ওঝা ডেকে তাঁকে জোর করে পুজোয় বসিয়ে, নগদ বেশ কয়েক হাজার টাকা জরিমানাও করেছিলেন। বাধ্য হয়ে স্বামীকে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন ওই মহিলা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জামালপুর শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:০২
Share:

দু’দিন আগেই ডাইনি সন্দেহে প্রতিবেশি মহিলাকে মারধর করেছিলেন তাঁরা। ওঝা ডেকে তাঁকে জোর করে পুজোয় বসিয়ে, নগদ বেশ কয়েক হাজার টাকা জরিমানাও করেছিলেন। বাধ্য হয়ে স্বামীকে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন ওই মহিলা। তবে দু’দিন কাটতে না কাটতেই ভুল স্বীকার করছেন জামালপুরের ওই হাটশিমুল গ্রামের বাসিন্দারা।

Advertisement

মঙ্গলবার দামোদরের বাঁধের গায়ে বাঁশের মাচায় বসে গ্রামের বাসিন্দা অমর সেন, রাম মুদিরা বলেন, “আমাদের নিয়ে লোকে হাসাহাসি করছে। সবাই ভাবছে আমাদের গ্রাম নিরক্ষর, কুসংস্কারে ভরা। আমরা বুঝতে পারছি ভুল করে ফেলেছি।” গ্রামের একটু দূরে মিষ্টি বাংলা হাবের পাশে চলছে বাঁধনা পরব। সেখানে বসে এক বয়স্ক মহিলা অবন্তি হেমব্রম বলেন, ‘‘অভিজ্ঞতা থেকেই তো শিক্ষা নেয় মানুষ। এই ঘটনা আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেল। আমরা যে কত বড় ভুল করেছি, তা বুঝতে পারছি।”

রবিবার অবশ্য ভুল বোঝার আগেই গ্রামের এক বিবাহিতা মহিলাকে ডাইনি অপবাদে মারধর, ওঝা ডেকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল জেলা সদর থেকে এক কিলোমটার দূরের ওই গ্রামে। পুলিশ জামালপুরের যোজনপুরের মহিলা ওঝা বুদিন হেমব্রম ও তাঁর চার শাগরেদকে গ্রেফতারও করে। সোমবার গ্রামে গিয়ে সচেতনতার-পাঠ দেওয়ার কথা বলেছিলেন জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু ও বিধায়ক নিশীথ মালিক। যদিও মঙ্গলবার কাউকে দেখা যায়নি গ্রামে। সচেতনতামূলক প্রচারও চালানো হয়নি। তাহলে ঘটনার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এমন বোধদয় হল কী করে?

Advertisement

ঘটনায় অভিযুক্ত বীরেন হেমব্রম মাঠের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে এ দিন বলেন, “এই ঘটনার জন্য গ্রামে বেশ কয়েকবার পুলিশ এসেছিল। তারপরেই বুঝতে পারছি কী ভুল করেছি।” গ্রামের বধূ আরতি মান্ডি, শ্রীমতি বেসরারা বলেন, “যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। সেটা তো আর ফিরবে না। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, আপনারা গ্রামে এসে আমাদের ভুল ধরিয়ে দিয়ে যান। যাতে আর কেউ ভুল না করে।” তাঁদের দাবি, ওই মহিলার বাড়ির পাশে পুকুরে ৫ জন ডুবে মারা গিয়েছে। সেই থেকেই তাঁদের ধারণা হয়েছিল, ওই মহিলা বাড়িতে পুজো করায় গ্রামে কুপ্রভাব পড়ছে। এ ব্যাপারে তাঁকে বলতে গেলে, তিনি চড়াও হয়ে মন্ত্রের বলে ওই ৫ জনের মতো অন্যদেরও ডুবিয়ে মারার কথা বলে হুমকি দিতেন বলেও গ্রামবাসীদের দাবি। তাঁদের কথায়, ‘‘ওঝার দলবল ওই মহিলার বাড়িতে ভূত আছে বলে গোলমাল পাকিয়ে দিল। আমাদের উচিত ছিল, ওঝার দ্বারস্থ না হয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়া। ” ওই গ্রামের বয়স্ক ব্যক্তি সিকি সোরেন বলেন, “আমরা মুখ্য মানুষ। হুটোপাটির মধ্যে বড় ভুল হয়ে গিয়েছে।”

নিজেদের ‘ভুল বুঝতে’ পেরে স্থানীয় বৈকন্ঠপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান জবা মালিকের কাছে গিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। স্নাতক স্তরের পড়ুয়া মিঠুন মান্ডি, তরুণ মান্ডিদের দাবি, “গ্রামবাসীরা এক জোট হয়ে একটা ভুল করে ফেলেছে। ঘটনাটা মীমাংসা করার জন্য আমরা প্রধানের কাছে গিয়েছিলাম। প্রধান আমাদের কথা শুনলই না।” প্রধান জবা মালিক অবশ্য বলেন, “ওই গ্রাম থেকে আমাদের কাছে কেউ আসেননি। বিষয়টি প্রশাসন দেখছে।” মহকুমাশাসক বলেন, “ব্লক প্রশাসন ওই গ্রামে যাওয়ার পরেও কেন এ রকম ঘটনা ঘটল সেটা খোঁজ নিচ্ছি।” জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “মন্তেশ্বরে উপনির্বাচনের জন্য জেলা জুড়ে নির্বাচনবিধি চালু রয়েছে। সচেতনতার প্রচার করা যাবে কি না তা জানার পরে ওই গ্রামে যাব। তবে গ্রামবাসীরা সহযোগিতা চাইছে, এটা ইতিবাচক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন