‘জ্বর দেখাতে এসে প্রাণটাই যেত’

সকালের ঘটনা থেকেই যে গোলমালের সূত্রপাত, তা জানিয়েছেন খোসনগর সংসদের পঞ্চায়েত সদস্য অক্ষয় বাদ্যকরও। তাঁর কথায়, ‘‘শুনেছি, সকালে কোনও মারামারি থেকেই এই ঘটনার সূত্রপাত।’’

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

বারাবনি শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:০৩
Share:

হামলা চলে এই ট্রাকেও। —নিজস্ব চিত্র

অতীতেও গোলমাল হয়েছে। কিন্তু শুক্রবার গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বোমা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢিলের পরে বারাবনির পুচরা পঞ্চায়েতের খোসনগরের বাসিন্দারা এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ দিন পুলিশের সামনেই এই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। পুলিশকে তার জন্য বিক্ষোভের মুখেও প়়ড়তে হয় বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত, এ দিন ভোরেই, দাবি গ্রামেরই তৃণমূল নেতা শেখ রুস্তমের। তিনি জানান, পাশেই রয়েছে মদনপুর গ্রাম। ওই গ্রামের গা ঘেঁষে একটি বেসরকারি সংস্থার খোলামুখ খনি রয়েছে। ওই খনি থেকে কয়লা চুরি হয় বলে রুস্তমের অভিযোগ। সেই ‘চুরি’ নিয়েই দুই গ্রামের কয়েক জনের প্রায়ই গোলমাল হয় বলে অভিযোগ। খোসনগরের বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, এ দিন ভোরে তাঁদের গ্রামের কয়েক জন ওই খনিতে গেলে তাঁদের ‘বাধা’ দেন মদনপুরের লোকজন। দু’পক্ষের মধ্যে মারামারিও হয়। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক মদনপুরের কয়েক জন বাসিন্দা। রুস্তমের তবে অভিযোগ, ‘‘ওই মারামারির প্রায় ছ’ঘণ্টা পরে মদনপুরের লোক জন আমাদের গ্রামে হামলা চালায়। পুলিশের সামনেই বোমাবাজি হয়েছে। কিন্তু ব্যবস্থা নেয়নি। কয়লার কারবার নিয়ে অতীতে এই দুই গ্রামের মধ্যে খুন-জখমও হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করার জন্য পুলিশ ও দলের শীর্ষ স্তরে আর্জি জানিয়েছি।’’

সকালের ঘটনা থেকেই যে গোলমালের সূত্রপাত, তা জানিয়েছেন খোসনগর সংসদের পঞ্চায়েত সদস্য অক্ষয় বাদ্যকরও। তাঁর কথায়, ‘‘শুনেছি, সকালে কোনও মারামারি থেকেই এই ঘটনার সূত্রপাত।’’

Advertisement

শুধু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নয়, হামলাকারীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি একই চত্বরে থাকা খোসনগর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রও, দাবি মনোয়ারা খাতুন নামে এক নার্সের। তিনি জানান, ওই মুহূর্তে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিনি ও জ্বরে আক্রান্ত এক রোগী ছিলেন। মনোয়ারার অভিযোগ, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্র লক্ষ করে ঢিল ছোড়া হয়। ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিই। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দরজা, জানলা লক্ষ করে ঢিল ছোড়া হয়।’’ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে আসা রোগী মেঘা বাউরি বলেন, ‘‘জ্বর দেখাতে এসেছিলাম। যা পরিস্থিতি, তাতে প্রাণটাই চলে যেত।’’ কাছেই থাকা প্রাথমিক স্কুলটি অবশ্য গোলমালের কথা জানার পরে এ দিন আর খোলেনি।

খোসনগর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র

আরও অভিযোগ, কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা খালি ডাম্পার ও ট্রাকে ভাঙচুর চলে। গ্রামেরই বাসিন্দা শেখ নইমুদ্দিনের দাবি, তিনি ডান পায়ে চোট পেয়েছেন। তবে সেই চোট গুরুতর নয় বলে নইমুদ্দিনের পরিবার জানিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা শেখ মহসিনের ক্ষোভ, ‘‘পুলিশের সামনেই হামলা চলেছে। পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি।’’

ঘটনায় পুলিশের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলিও। সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘জেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে তলানিতে ঠেকেছে, এই ঘটনা ফের তা প্রমাণ করল। পুলিশ কয়লা-চোরদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ করুক।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘গোলমালের খবর পেয়েছি। পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে যাতে পদক্ষেপ করে, তার জন্য আর্জি জানানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন