এলাকায় বন্ধ কারখানা, সেচের সমস্যা-সহ নানা বিষয় রয়েছে ভোট চর্চায়। সেই সঙ্গে চর্চায় রয়েছে, ২০১১-র পরে থেকে নানা ভোটে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা এলাকার ভোটারেরা কোনও একটিমাত্র রাজনৈতিক দলের ঝুলি ভরেননি। এই পরিস্থিতিতে নানা বিষয়কে সামনে রেখে ভোটে চলেছে এলাকা। সেই সঙ্গে চর্চা, এ বার কোন দল ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে সাফল্য পাবে এই এলাকায়।
সাবেক কাঁকসা বিধানসভা ও দুর্গাপুর পুরসভায় একসময়ে টানা ক্ষমতায় ছিল বামেরা। সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরে দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ড, অভিজাত বিধাননগর, বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা এমএএমসি, এইচএফসিএল ও বিওজিএল টাউনশিপ এলাকায় ২৩ থেকে ২৮ নম্বর ওয়ার্ড এবং কাঁকসা ব্লকের গোপালপুর, মলানদিঘি, আমলাজোড়া পঞ্চায়েত নিয়ে তৈরি হয় দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রটি।
পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যায়, ২০১১-র বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থীকে সাড়ে আট হাজার ভোটে কংগ্রেসের সমর্থনে হারিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। সেই সময়ে তৃণমূল, সিপিএম ও বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল যথাক্রমে ৫১, ৪৫ ও চার শতাংশ। কিন্তু তিন বছরের মাথায় ২০১৪-র লোকসভা ভোটে একা লড়ে তৃণমূল ৩৬ শতাংশেরও কম ভোট পায়। ভোট কমে সিপিএমেরও। তবে তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএমের ব্যবধান এক শতাংশের নীচে নেমে আসে। বিজেপির ভোট বেড়ে হয় ২২ শতাংশের কিছু বেশি। কংগ্রেস পায় চার শতাংশ ভোট। ২০১৬-র বিধানসভায় কংগ্রেসের সমর্থনে সিপিএম প্রার্থী সন্তোষ দেবরায় ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জেতেন। তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থী পান যথাক্রমে ৪০ ও ১২ শতাংশ ভোট।
ফলে পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে কোনও দলেরই নিশ্চিন্তে থাকার কথা নয়, মনে করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, কর্মীদের একাংশ।
এই পরিস্থিতিতে নিজেদের মতো করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রচারে নেমেছে দলগুলি। তৃণমূলের প্রচারে বিষয়, নাগরিক পরিষেবার উন্নয়ন। গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, তৃণমূল পরিচালিত দুর্গাপুর পুরসভা অতীতের মতো ডিএসপি-র ভরসায় বসে না টাউনশিপে রাস্তা তৈরি, এলইডি আলো বসানোর মতো কাজ শুরু করেছে।
এই এলাকার বড় অংশের মানুষ কারখানার শ্রমিক। ডিএসপি টাউনশিপে জমি ধরে রাখতে শ্রমিকদের ও অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের নিয়ে লাগাতার আন্দোলন করছে সিটু। তা ছাড়া কাঁকসার বামুনাড়া, বাঁশকোপা শিল্পতালুকে নতুন কোনও শিল্প না হওয়া, বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকের কাজ হারানোর মতো বিষয়গুলিও প্রচারে আনছে সিপিএম। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের বক্তব্য, ‘‘প্রচারে বেহাল শিল্প পরিস্থিতি, সেচের সমস্যা, পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাসের মতো বিষয়গুলি তুলে ধরা হচ্ছে।’’ যদিও তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, ভবিষ্যতের কথা না ভেবে অপরিকল্পিত ভাবে কারখানা গড়া হয়েছিল বাম আমলে। এর পাল্টা হিসেবে সিপিএমের অভিযোগ, বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা এমএএমসি, এইচএফসিএল চালু করতে তৃণমূলের বিদায়ী সাংসদ উদ্যোগী হননি। তৃণমূলের যদিও দাবি, সংসদের ভিতরে ও বাইরে এলাকার শিল্প নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন সাংসদ। সিপিএমের আরও অভিযোগ, কাঁকসায় সেচের উন্নতির জন্য বেশ কয়েকটি সেচ প্রকল্প গড়া হয়েছিল বাম আমলে। সেগুলি গত কয়েক বছরে বেহাল হয়ে গিয়েছে, নতুন কোনও সেচ প্রকল্প গড়ে তোলা হয়নি। তৃণমূলের দাবি, সেচের উন্নয়নে চেকড্যাম তৈরি-সহ নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে পুরসভা ও গ্রামীণ এলাকার ধারাবাহিক উন্নয়নের কথা আমরা প্রচারে রাখছি।’’
বিজেপির প্রচারের অস্ত্র, কেন্দ্রীয় সরকারের নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্প এবং তাতে রাজ্য সরকার কী ভাবে ‘বাধা’ দিচ্ছে তা। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার দাবি, ‘‘এলাকার সার্বিক উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য। কেন্দ্রীয় সরকারের জনমুখী প্রকল্পের জোরেই আমরা জিতব।’’ কংগ্রেসের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি তরুণ রায় অবশ্য মনে করেন, এলাকার এই হালের জন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার, উভয়েই দায়ী। প্রচারে সেটাই বলছেন তাঁরা।