চিমনির ধোঁয়া উড়বে তো, সংশয়

শ্রমিক মহল্লায় প্রচারে নেমে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী আভাস রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার কারখানা খোলার কথা বলে ধাপ্পা দিচ্ছে শ্রমিকদের।’’

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৩৬
Share:

দুর্গাপুরের এমএএমসি কারখানা। ফাইল চিত্র

সরকারি, বেসরকারি—পরপর বন্ধ হয়েছে কারখানা। যে ক’টি আছে, ধুঁকছে তার বেশির ভাগই। নেই নতুন শিল্পও। শিল্প ও দুর্গাপুর, এই দু’য়ের ‘সহাবস্থান’ আজ টালমাটাল, মত কর্মহীন শ্রমিকদের। কিন্তু কেন এই হাল, তা নিয়ে ভোট-প্রচারে চলছে একে অন্যকে দোষারোপ।

Advertisement

সিটু, আইএনটিইউসি-র হিসেবে, ‘ভারত অপথ্যালমিক গ্লাস লিমিটেড’ (বিওজিএল), ‘মাইনিং অ্যান্ড অ্যালায়েড মেশিনারি কর্পোরেশন’ (এমএএমসি), ‘হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন লিমিটেড’ (এইচএফসিএল)—দুর্গাপুরের এই তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা বন্ধ হওয়ায় কাজ হারান প্রায় দশ হাজার স্থায়ী কর্মী। এমএএমসি, এইচএফসিএল খোলা হবে এমন আশ্বাস দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ‘‘বাস্তবে জং ধরেছে কারখানার গেটে। লতাপাতা গজিয়েছে শ্রমিক আবাসনে’’, বলেন এমএএমসি-র কর্মহীন শ্রমিক প্রবীরকুমার চৌধুরী।

এ কথার রেশ ধরেই শ্রমিক মহল্লায় প্রচারে নেমে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী আভাস রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার কারখানা খোলার কথা বলে ধাপ্পা দিচ্ছে শ্রমিকদের।’’ একই বক্তব্য তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ মমতাজ সংঘমিতারও। বিজেপি এই কেন্দ্রে এখনও প্রার্থী দেয়নি। তবে অভিযোগ উড়িয়ে দুর্গাপুরের বিজেপি নেতা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘শ্রম-ক্ষেত্রে এনডিএ সরকারের কাজই প্রচারে আমাদের হাতিয়ার।’’

Advertisement

তবে শুধু কেন্দ্র নয়, প্রচারের নিশানায় রাজ্য সরকারও। ধুঁকছে ‘অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট’ (এএসপি), ‘দুর্গাপুর কেমিক্যালস লিমিটেড’ (ডিসিএল), ‘দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড’ (ডিপিএল)। প্রথমটি কেন্দ্রীয়, অন্য দু’টি রাজ্য সরকারের প্রতিষ্ঠান। ‘এএসপি’, ‘ডিসিএল’ বিলগ্নিকরণ করছে দুই সরকারই। ‘ডিপিএল’-কে রাজ্য সরকার অন্য তিন বিদ্যুৎ সংস্থার সঙ্গে মেশানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ‘উদ্বৃত্ত’ কর্মীদের ভবিষ্যৎ—হয় স্বেচ্ছাবসর, নয় অন্যত্র বদলি, দাবি আভাসবাবুর। তৃণমূল সরকারের আমলে দুর্গাপুরে গড়ে ওঠা একমাত্র শিল্পতালুক ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ফেজ ২-র উদ্বোধনের পরে দু’বছরেও একটা কারখানা আসেনি। মমতাজের যদিও দাবি, ‘‘রাজ্য সরকার শ্রমিকের পাশেই আছে।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তৃণমূল এবং বিজেপি আবার শিল্পে দুর্দিনের জন্য অভিযোগের আঙুল তুলছে বামেদের দিকে। রাতুড়িয়া, অঙ্গদপুর, বাঁশকোপা-সহ নানা এলাকায় থাকা প্রায় ৫০টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-কারখানার অর্ধেকই বর্তমানে বন্ধ। কাঁচামালের অভাব, বাজার খারাপ জানিয়ে উৎপাদন কমিয়েছে বাকিরা। ফল, কাজ হারান কয়েক হাজার ঠিকাকর্মী। তাঁদেরই এক জন মনোজ রায়ের বক্তব্য, ‘‘কারখানায় মাসে দশ হাজার টাকা পেতাম। এখন দু’হাজার টাকার রক্ষী।’’— প্রচারে নেমে সরকারি ও বেসরকারি কারখানা বন্ধের কারণ হিসেবে বামেদের জঙ্গি শ্রমিক আন্দোলন, ধর্মঘটের রাজনীতিকেই দায়ী করছেন মমতাজ এবং অমিতাভ। যদিও সিপিএমের ব্যাখ্যা, ওই প্রায় ৫০টি কারখানা এসেছিল বাম আমলেই। সেগুলি বন্ধ হয়েছে তৃণমূল আমলে। যদিও তৃণমূলের পাল্টা দাবি, কারখানাগুলি রুগ্‌ন হতে শুরু করে বাম আমলের শেষ থেকেই।

যদিও শিল্পোদ্যোগীদের একাংশের মতে, শিল্পে দুর্দিনের জন্য বাম ও তৃণমূল কারও ‘দায়’ কম নয়। ‘দুর্গাপুর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন’ সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় ইস্পাত-অনুসারী শিল্প হিসেবে অতীতে প্রায় চারশোটি কারখানা থাকলেও এখন সচল মাত্র ১৪০টি। সংগঠনের সভাপতি কৃপাল সিংহের অভিযোগ, ‘‘বাম ও তৃণমূল আমলে ভারী শিল্প পাততাড়ি গুটিয়েছে। নতুন ভারী শিল্প আসেনি। রফতানি তলানিতে ঠেকেছে। তাই এই হাল।’’ এই প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেস প্রার্থী রণজিৎ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল, বিজেপি বা বাম—সবারই শিল্পনীতি ধ্বংসাত্মক।’’ সে কথা তিনি বারবার বলছেন প্রচারেও।

দোষারোপের পাশাপাশি, প্রচারে উড়ছে শিল্পে সুদিন ফেরানোর দেদার প্রতিশ্রুতিও। যদিও এ সবের ভিড়ে শহরের আকাশে চিমনিতে কালো ধোঁয়া উড়তে থাকবে কি না, সে-ই প্রশ্ন নিয়েই ভোটমুখী দুর্গাপুরের শ্রমিকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন