শিল্প-কথা কই, উঠল সে প্রশ্নও

গত পাঁচ বছরে ঝাঁপ পড়েছে এলাকার দু’টি বড় কারখানায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০২:০৮
Share:

প্রস্তুত সভাস্থল। রয়েছেন এসপিজি আধিকারিকেরা এবং আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা। ছবি: পাপন চৌধুরী

গত পাঁচ বছরে ঝাঁপ পড়েছে এলাকার দু’টি বড় কারখানায়। জারি হয়েছে ষোলোটি খনি বন্ধের বিজ্ঞপ্তি। ভোটের প্রচারে এসে শিল্প ও খনি নিয়ে কোনও বার্তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী, আশা করেছিলেন খনি-শিল্পাঞ্চলের অনেকেই। তবে মঙ্গলবার আসানসোলে নরেন্দ্র মোদীর সভা থেকে সে রকম কোনও বার্তা পেলেন না তাঁরা।

Advertisement

এ দিন মোদীর বক্তব্যে কেন্দ্রের নানা প্রকল্পের কথা উঠে এলেও শিল্পায়নের কথা সে ভাবে আসেনি। শুধু বার্নপুরে ইস্কোর আধুনিকীকরণ প্রকল্পের উদ্বোধনের কথা তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ছ’মাসের মধ্যে এখানে এসেছিলাম। দেশকে আমরা সেলের আধুনিকীকরণ প্রকল্প উপহার দিয়েছি।’’

মোদীর সভা শেষের খানিক পরেই বারাবনির পানুড়িয়ায় যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মোদীর আমলে হিন্দুস্তান কেবল্‌স, বার্ন স্ট্যান্ডার্ড বন্ধ হয়েছে। প্রতিকার করবেন বলেছিলেন। অথচ, এখানে এসে তা নিয়ে একটা কথাও বললেন না।’’ শিল্প নিয়ে নীরবতার সমালোচনার পাশাপাশি ইস্কোর আধুনিকীকরণ প্রসঙ্গে মোদীর বক্তব্য নিয়েও সরব হয়েছেন নানা শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।

Advertisement

আইএনটিইউসি-র কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক হরজিৎ সিংহ দাবি করেন, ‘‘ইস্কোর আধুনিকীকরণ প্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছিল ইউপিএ সরকারের আমলে। মনমোহন সিংহ এসে শিলান্যাস করেছিলেন। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার আগে সেখানে উৎপাদনও শুরু হয়ে গিয়েছিল। মোদী এসে শুধু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন। এখন কৃতিত্ব দাবি করে এখানকার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। অথচ, গত কয়েক বছরে কারখানা ও খনি বন্ধ নিয়ে ওঁর মুখ থেকে একটি কথাও বেরোল না!’’

সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরী দাবি করেন, ইউপিএ সরকারের আমলে তৎকালীন কেন্দ্রীয় শিল্পমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানের সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বৈঠক করে সেলের ওই প্রকল্প পাশ করিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘সেই সময়ে রাজ্য সরকার ইস্কোর তিনশো কোটি টাকা খাজনা মকুব করেছিল। প্রকল্পের শিলান্যাসে বুদ্ধদেববাবুও উপস্থিত ছিলেন। কৃতিত্ব নেওয়া ছাড়া মোদী কিছুই করেননি।’’

আইএনটিটিইউসি-র জেলা চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনও দাবি করেন, ‘‘পাঁচ বছর ধরে নরেন্দ্র মোদী কাজ তো কিছু করেননি। উল্টে ক্ষতি করেছেন। কারখানা বন্ধ করেছেন। শিল্পের কথা নিজের মুখে আর কী বলবেন!’’

খানিক হতাশ বার্ন স্ট্যান্ডার্ড ও রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্তান কেবল্‌সের প্রাক্তন কর্মীদের অনেকে। বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের প্রাক্তন কর্মী গুলজার সিংহের কথায়, ‘‘আশা করেছিলাম, কারখানাটা নিয়ে যদি কিছু বলেন। আশাহতই হলাম।’’

কেবল্‌সের প্রাক্তন কর্মী মেঘনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবার বক্তব্য, ‘‘মোদী কিছু বলবেন না, সেটা আমরা বুঝতেই পেরেছিলাম। কারণ, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে তাঁর মনোভাবই ছিল, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের জন্ম হয় মৃত্যু হওয়ার জন্যই। তবে শিল্পের জমিতে শিল্পই গড়তে হবে, এই দাবি আমরা জানিয়ে যাব।’’

এলাকার বিদায়ী সাংসদ তথা এ বারের বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়ের অবশ্য পাল্টা দাবি, ‘‘এখানে শিল্প হবে কী ভাবে? জমি দিয়ে সাহায্য করে না রাজ্য সরকার। তোলাবাজি, সিন্ডিকেটে অতিষ্ঠ হতে হয়। আমি তিনটি শিল্প আনার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু এক ছটাকও জমি পাইনি। সেলের আধুনিকীকরণ হয়েছে, সে কথা তো প্রধানমন্ত্রী বলে গেলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন