জামুড়িয়ার শ্রীপুর এরিয়া স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
ধসপ্রবণ এলাকায় পুনর্বাসন প্রকল্পে বাধা তৈরি করছে বিরোধীরা। বৃহস্পতিবার জামুড়িয়ার শ্রীপুর এরিয়া স্টেডিয়ামে প্রকল্প উদ্বোধন, শিলান্যাস ও পরিষেবা প্রদানের মঞ্চ থেকে এমনই অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ দিন তিনি বলেন, ‘‘রানিগঞ্জে ধসপ্রবণ এলাকা আছে। আমরা ৪৫ হাজার ঘর বানাচ্ছি। আমার কাছে খবর আছে, বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস অনেক সময় বলছে, ঘর নেবেন না। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের কথা শুনবেন না।’’ এর পরে পুনর্বাসন প্রকল্পে রানিগঞ্জের বাসিন্দাদের সহযোগিতা চান তিনি।
কিন্তু, এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের পরে রানিগঞ্জের বণিক সংগঠন ও রানিগঞ্জ সিটিজেন্স ফোরাম জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরেই রানিগঞ্জ শহর থেকে যেতে না চেয়ে আন্দোলন করছে। বণিক সংগঠনের উপদেষ্টা রাজেন্দ্র খেতানও বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই শহর ছাড়ব না।’’ কেন শহর ছাড়তে চান না, তার ব্যাখ্যাও দেন তিনি। রাজেন্দ্রবাবুরা জানান, পুনর্বাসন প্রকল্প রানিগঞ্জে রূপায়িত হলে শহরের অর্ধেকের বেশি মানুষকে ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যেতে হবে। তা ছাড়া যেখানে পুনর্বাসন মিলবে, সেই এলাকাও আদৌ নিরাপদ কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে। ফোরামের সভাপতি রামদুলাল বসু বলেন, ‘‘কয়লাখনির জাতীয়করণের আগে বৈজ্ঞানিক ভাবে খনি থেকে কয়লা কাটা হয়নি। কোন এলাকা বিপজ্জনক, তা-ও জানা নেই। এমনকি, বহু খনির নকশাও ইসিএলের কাছে নেই।’’
ফোরামের দাবি, খড়্গপুর আইআইটি-র এক প্রতিনিধি দল কয়েক বছর আগে রানিগঞ্জে সমীক্ষা করে জানিয়েছিল, খনির নীচে সিমেন্টের পিলার তৈরির পরে বালি, মাটি ভরাট করা হলে রানিগঞ্জ শহর আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে নয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করে শহরকে বাঁচানোর দাবিও জানানো হয়েছিল। কিন্তু, সে সব পদক্ষেপ ইসিএল বা কয়লা মন্ত্রক করেনি বলেই অভিযোগ।
পুনর্বাসনের জন্য আবাসন তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ) সূত্রে জানা গিয়েছে, ১২৬টি এলাকাকে পুনর্বাসন দেওয়া হবে। ২৯ হাজার আবাসন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ১২ হাজার আবাসন তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু, বারাবনির নামোকেশিয়ায় আবাসন তৈরির কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে জামুড়িয়ার গোবিন্দনগর, পাণ্ডবেশ্বরের শোনপুরবাজারি-সহ বেশ কিছু এলাকায় বাসিন্দাদের নতুন বাড়ি দেওয়া হয়েছে। কাজও চলছে দ্রুতই। তবে রানিগঞ্জ ব্লকে পুনর্বাসন প্রকল্প কোথায় হবে, সেই জায়গা এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত হয়নি বলে ফোরাম ও বণিকসভার দাবি।
তবে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিরোধী দলগুলি। সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরীর কথায়, ‘‘পুনর্বাসন প্রকল্পের পরিকল্পনা ও রূপায়ণ সম্ভব হচ্ছে আমাদের জন্যই। তৃণমূল সরকার প্রথম ক্ষমতায় আসার পরে পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দ টাকা ফেলে রাখা হয়েছিল পাঁচ বছর। তাই এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজেপি নেতা সভাপতি সিংহ এবং কংগ্রেস নেতা তরুণ গঙ্গোপাধ্যায়ও।