প্রস্তুতি: মুখ্যমন্ত্রীর সভার আগে তোড়জোড়। বর্ধমান পুলিশ লাইনে বুধবার। নিজস্ব চিত্র।
প্রথমে সভা, তারপরে প্রশাসনিক বৈঠক। তাতেই শশব্যস্ত পূর্ব বর্ধমানের আধিকারিকেরা। কেউ আগাপাশতলা সমস্ত প্রকল্প, কাজের খুঁটিনাটিতে চোখ বুলোচ্ছেন। কারও কপালে চিন্তার ভাঁজ।
সাম্প্রতিক সময়ে মুখ্যমন্ত্রী যতগুলি প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন সবটাতেই কড়া ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। হুগলি, নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগণার বৈঠকে প্রশাসনের কর্তা থেকে পুলিশের ডিজি পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ধমক খেয়েছেন। ফলে এখানে কার ঘাড়ে কোপ পড়বে, তা নিয়ে চিন্তায় কর্তারা। আগে থেকে আঁচ পাওয়া যাচ্ছে না বলে কারও কারও রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছে।
আজ, বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ লাইনের মাঠে সভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। বিকেলে সংস্কৃত লোকমঞ্চে প্রশাসনিক বৈঠক। বুধবার বিকেলেই জেলায় পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। উঠেছেন কানাইনাটশালের সেচ দফতরের বাংলোয়। সঙ্গে আছেন তৃণমূলের জেলার পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। দলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের দাবি, “পুলিশ লাইনের মাঠে লক্ষাধিক মানুষ জমা করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। সেই মতো বিধায়কদের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।”
তবে দলের তরফে প্রস্তুতি নেওয়া হলেও চাপ যাচ্ছে না প্রশাসনের কর্তাদের। ‘চাপে’ রয়েছেন, এমন কিছু নাম বুধবার শোনা গিয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। সেই তালিকায় রয়েছে জেলা পরিষদও। একশো ১০০ দিনের কাজ থেকে মিশন নির্মল বাংলার কাজের অগ্রগতি থমকে গিয়েছে। মিষ্টি হাবের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। জেলা পরিষদের এক সদস্য তো বলেই ফেললেন, “মিষ্টি হাব মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্প। সেই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের শিলান্যাসের আগে মিষ্টি হাব নিয়ে তো উনি খোঁজ-খবর নেবেনই।”
নজরে থাকবে স্বাস্থ্য পরিষেবাতেও। গত দেড় মাসে জেলায় একের পর ভুয়ো চিকিৎসকের খোঁজ মিলেছে। কর্তাদের অনুমান, নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের তদন্তের গতিপ্রকৃতি জানতে চাইতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। চিন্তায় পুরসভাও। এক কাউন্সিলরের কথায়, “গতবার ডাম্পিং গ্রাউন্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কোপে পড়েছিলেন পুরপ্রধান। এখনও ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সমস্যা মেটেনি।”
তবে এত চিন্তার মধ্যে আশার আলো কন্যাশ্রী। জেলায় ‘কন্যাশ্রী’দের জন্য ক্লাব, সঙ্ঘ গড়া হয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর প্রচেষ্টা চলছে। শুধু তাই নয়, ‘কন্যাশ্রী’ মেয়েদের সামাজিক ভাবে কাজে লাগানোর জন্য কী কী করতে হবে তার ‘ক্যালেন্ডার’ও তৈরি করা হয়েছে। ফলে ধমক যদি জোটে তাহলে ঢাল এটাই। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব যদিও বলেন, ‘‘আমাদের তরফ থেকে সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’’