সেচখালে আসে না জল, সমস্যা

শেষমেশ, ২০০৬ থেকে জল দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় সেচ দফতর, এলাকাবাসীর অভিযোগ এমনই।

Advertisement

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়

মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৩০
Share:

এই মুহূর্তে এমনই হাল সেচখালগুলির। নিজস্ব চিত্র

পর্যাপ্ত জল মিলবে রবি ও বোরো চাষে, সম্প্রতি এমনই আশ্বাস দিয়েছে সেচ দফতর। কিন্তু এর পরেও পশ্চিম মঙ্গলকোটের বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচের জল মিলবে না, জানান চাষি ও এলাকাবাসী।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিভিসি সেচখালের ১,৩৪১ ও ১,৪০৮ ‘চেনে’র পরে থেকে বাকি অংশ, ‘সি’ ক্যানাল ও কয়েকটি ‘ওয়াটার কোর্স’ থেকে মঙ্গলকোট ব্লকের পালিগ্রাম, চানক, গোতিষ্ঠা ও লাখুরিয়ার প্রায় পাঁচ হাজার একর জমিতে ১৯৬০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সেচের জল দেওয়া হত। নেওয়া হত ক্যানাল কর। কিন্তু এর পরে থেকেই জল আসা কমতে থাকে। শেষমেশ, ২০০৬ থেকে জল দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় সেচ দফতর, এলাকাবাসীর অভিযোগ এমনই।

জল বন্ধ হওয়ার বিষয়ে সেচ দফতর সূত্রে বেশ কয়েকটি ব্যাখ্যা সামনে এসেছে। দফতরের দাবি, ২০০২-এর পরে থেকে ওই সেচখালগুলি সংস্কার হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে, এ-ও দেখা গিয়েছে, খাল তৈরির জন্য যাঁরা জমি দিয়েছিলেন, তাঁদের একাংশ ফের মাটি ফেলে খালের বেশ কিছু অংশ বুজিয়ে দিয়েছেন। তা ছাড়া, পশ্চিম মঙ্গলকোটের ওই এলাকা সেচখালের একেবারের শেষের দিক। তাই, সেখানে জল পৌঁছনোর ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। কারণ, খালের উপরের অংশে বিভিন্ন জায়গায় জল আটকে তা চাষের কাজে ব্যবহার করা হয়।

Advertisement

কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়েছেন এই এলাকার প্রায় হাজার পাঁচেক চাষি। চানক পঞ্চায়েতের কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা সুকল টুডু, নারায়ণপুরের শম্ভুনাথ মাজি-সহ এলাকার চাষিদের অভিযোগ, ‘‘সেচখাল থাকলেও তাতে দীর্ঘদিন ধরে জল আসেনি। বোরো চাষে দূরের কথা, বর্ষার সময়েও সেচখালগুলি থেকে জল মেলে না।’’ পুকুরে যতক্ষণ জল থাকে, তা দিয়ে কিছু জমিতে আলু ও সর্ষে চাষ হয়। পাশাপাশি, ওই এলাকায় নতুন পাম্প বসিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তোলার ক্ষেত্রেও নিষেধ রয়েছে। ফলে, সেচের জলের অভাবে অধিকাংশ জমিই অনাবাদী পড়ে থাকে। পাশাপাশি, যে সব জমিদাতার বিরুদ্ধে খাল বোজানোর অভিযোগ, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাঁদের কয়েকজন জানান, জল না আসাতেই এই কাজ করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে সেচ দফতরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না করারও অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। জয়পুরের বাসিন্দা নারায়ণচন্দ্র নাগের দাবি, ‘‘এলাকায় সেচখালগুলি সংস্কার করা ও সেচের জন্য জল দেওয়ার জন্য বারবার সেচ দফতর এবং প্রশাসনের নানা স্তরে আর্জি জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। সেচখালে জল না দেওয়ায় অনেকেই নিয়ম না মেনে ভূগর্ভস্থ জলও তুলছেন। ফলে, পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিচ্ছে।’’ মঙ্গলকোট পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ (কৃষি) বুদ্ধদেব ভারুইও জানান, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হয়েছে।

তবে সেচ দফতরের দামোদর ক্যানাল ডিভিশনের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয়কুমার সিংহ বলেন, ‘‘পুরো জেলার সেচ ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে বিশ্ব ব্যাঙ্কের একটা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্প রূপায়িত হলে সমস্যা মিটে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন