রাজবাঁধের তেল ডিপো

চুরিতে ব্যবস্থা, ক্ষোভে বন্ধ ট্যাঙ্কার

ডিপো থেকে পাম্পের পথে তেল নিয়ে কারচুপি হচ্ছে, এই অভিযোগে একটি পরিবহণ সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত ঘোষণা করেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৪৮
Share:

ডিপো থেকে পাম্পের পথে তেল নিয়ে কারচুপি হচ্ছে, এই অভিযোগে একটি পরিবহণ সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত ঘোষণা করেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা। প্রতিবাদে বর্ধমানের রাজবাঁধে ওই ডিপো থেকে তেল পরিবহণকারী সব ক’টি সংস্থা একযোগে কাজ বন্ধ করে দেয় বুধবার বিকেল থেকে। তার জেরে দক্ষিণবঙ্গের পাঁচ জেলা এবং ঝাড়খণ্ডের মোট প্রায় সাড়ে তিনশো পাম্পে তেল সরবরাহ বিঘ্নিত হল বৃহস্পতিবার দিনভর।

Advertisement

ওই তেল সংস্থার রাজবাঁধ ডিপো সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৩টি পরিবহণ সংস্থার মোট ২৮৭টি ট্যাঙ্কার সেখান থেকে বিভিন্ন পাম্পে তেল নিয়ে যায়। বর্ধমান, বীরভূম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও মুর্শিদাবাদ জেলা এবং লাগোয়া রাজ্য ঝাড়খণ্ডের কিছু পাম্পে তেল যায় এই ডিপো থেকে। দৈনিক প্রায় ২০ লক্ষ লিটার তেল সরবরাহ করা হয়। বুধবার বিকেল থেকে ধাপে-ধাপে সব ক’টি পরিবহণ সংস্থাই কাজ বন্ধ করে দেয়। বৃহস্পতিবার সারা দিন একটি ট্যাঙ্কারও তেল নিয়ে যায়নি। এক দিন সরবরাহ বন্ধ থাকলে বিশেষ সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ, পাম্পে দৈনন্দিন প্রয়োজন ছাড়াও কিছু তেল সঞ্চয় করে রাখা হয়। কিন্তু টানা সরবরাহ বন্ধ থাকলে শহরাঞ্চলের পাম্পগুলিতে তেল ফুরিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়। তবে শুক্রবার সকাল থেকে ফের সরবরাহ শুরু করতে রাজি হয়েছে পরিবহণ সংস্থাগুলি।

তেল সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছু দিন ধরেই ডিপো থেকে তেল পৌঁছনোর পরে অনেক পাম্প মালিক কম তেল পাওয়ার অভিযোগ করছিলেন। সংস্থা তদন্ত করে জানতে পারে, কিছু অসাধু চালক ও খালাসি রাস্তায় ট্যাঙ্কার থেকে তেল বের করে বিক্রি করে। পরিবহণ সংস্থাগুলিকে সে ব্যাপারে জানায় তেল সংস্থা। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি বলে অভিযোগ। বুধবার সেই অভিযোগেই একটি ট্যাঙ্কার ধরা পড়ে। এর পরেই সেটি যে পরিবহণ সংস্থার, তাকে কালো তালিকাভুক্ত করার কথা ঘোষণা করে সংস্থা। অভিযোগ, তারই প্রতিবাদে অন্য সংস্থাগুলি তেল পরিবহণ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়।

Advertisement

ট্যাঙ্কার পরিবহণ সংস্থাগুলির সংগঠন ‘রাজবাঁধ ট্যাঙ্কার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে দাবি করা হয়, যদি কোনও ট্যাঙ্কার থেকে তেল বের করার ঘটনা ঘটে তার দায় সেই ট্যাঙ্কারের চালক বা খালাসির। সংশ্লিষ্ট পরিবহণ সংস্থার বাকি ট্যাঙ্কারগুলিকেও সে জন্য বাতিল করে দেওয়া অযৌক্তিক। সংগঠনের সম্পাদক সুনীল শ্যামের কথায়, ‘‘একটি গাড়ির দোষে বাকি গাড়িগুলি কেন শাস্তি পাবে?’’ তেল সংস্থার সঙ্গে দু’দফা বৈঠকের পরেও এ দিন পরিবহণ চালু করা হয়নি। তেল সংস্থার রাজবাঁধের এক আধিকারিক জানান, সরবরাহের সময়ে কারচুপি হলে সংশ্লিষ্ট পরিবহণ সংস্থাকে বাতিল করার এক্তিয়ার আছে সংস্থার। নিয়ম মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

নিজেদের পাম্পের জন্য তেল কিনতে এ দিন রাজবাঁধে এসেছিলেন মুর্শিদাবাদের আমিরুল হক, বীরভূমে মনীর চৌধুরীরা। খালি হাতে ফিরে যাওয়ার সময় তাঁরা বলেন, ‘‘আমাদের পাম্পে তেল একেবারে নেই। বিপাকে পড়ে যাব।’’ পাম্প মালিকদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর বর্ধমান জোনের সম্পাদক বিশ্বদীপ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘শুক্রবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে শহরাঞ্চলের পাম্পগুলি খালি হয়ে যাবে।’’ রাতে অবশ্য পরিবহণ সংস্থাগুলি শুক্রবার থেকে কাজ চালু করতে রাজি হয়েছে বলে জানানো হয়। তবে সংশ্লিষ্ট পরিবহণ সংস্থাটি কালো তালিকাভুক্ত থাকছে বলে তেল সংস্থা জানিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন