মাধ্যমিক হোক বা উচ্চ মাধ্যমিক, প্রায় প্রতি বছরই আসানসোল–দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের স্কুলগুলি থেকে মেধা তালিকায় ঠাঁই পেত পড়ুয়ারা। কিন্তু এ বছর তা হয়নি। আর তার পরেই জেলার স্কুলগুলির পঠনপাঠনের হাল নিয়ে চিন্তায় শিক্ষকদের একটা বড় অংশ। এই পরিস্থিতিতে পড়াশোনার মান বাড়াতে বেশ কিছু ভাবনাচিন্তাও করা হচ্ছে বলে জেলা স্কুল পরিদর্শকের কার্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে।
জেলা স্কুল পরিদর্শক অজয়কুমার পাল জানিয়েছেন, সমস্যার হাল বের করতে পরীক্ষার ফল বেরনোর পরে থেকেই চিন্তাভাবনা শুরু হয়ে গিয়েছে। তিনি আরও জানান, পঠন-পাঠনের মান কী ভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে জেলার নানা স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সেখানে বেশ কিছু প্রস্তাবও এসেছে। সেই সব প্রস্তাব চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়াও চলছে বলে জানা গিয়েছে।
কিন্তু কী রকম সেই পরিকল্পনা? নানা স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার এখনও প্রায় আট মাস বাকি। কিন্তু এখন থেকেই দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাসে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। নবম ও একাদশের বার্ষিক পরীক্ষায় কোন পড়ুয়া কেমন ফল করেছে, তা বিশ্লেষণ করে ক্লাসে বিশেষ নজরদারি চালানো, কোনও পড়ুয়া যে যে বিষয়ে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি, সেই সব বিষয়ে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া, পরীক্ষা, নিয়মিত ওয়ার্কশপ আয়োজন-সহ বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। তা ছাড়া পরীক্ষাভীতি কাটাতেও বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে।
শিক্ষকদের একাংশ জানান, স্কুলে টেস্ট পরীক্ষার পরে পড়ুয়াদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকে না স্কুলের। ফলে তাদের পড়াশোনার হালহকিকতও অনেক সময়ে বোঝা যায় না। এ বার যাতে এমন পরিস্থিতি না হয়, তার জন্য টেস্ট পরীক্ষার পরেও স্কুলের সঙ্গে পড়ুয়াদের নিয়মিত যোগাযোগ রাখার কথা জানিয়েছেন শিক্ষকেরা। টেস্টের পরেও এক-দেড় মাস ধরে নিয়মিত ‘মক টেস্ট’ আয়োজন করা হবে। সেখানে রাজ্যের বিভিন্ন নামী স্কুলের গত ১০ বছরের প্রশ্ন, টেস্ট পেপার, অন্য জায়গা থেকে সংগৃহীত প্রশ্নপত্র ব্যবহার করা হবে বলে শিক্ষকেরা জানান। মক টেস্টের ফল যাচাই করে তাৎক্ষণিক ভাবে কী কী বিষয়ের উপরে জোর দিতে হবে, তা সংশ্লিষ্ট পড়ুয়াকে জানিয়ে দেবেন শিক্ষকেরা।
অজয়বাবু বলেন, ‘‘একটা দিনও যাতে নষ্ট না হয় আমরা সে ভাবে এগোচ্ছি। সমস্ত স্কুলকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’ দুই বর্ধমানের দায়িত্বে থাকা সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিক শারদ্বতী চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরাও সাধ্যমতো সহযোগিতা করব।’’— কিন্তু এ সব উদ্যোগ আদৌ সফল হয় কি না, তার জন্য অপেক্ষা আরও কয়েক মাস, বলছেন শিক্ষক থেকে পড়ুয়া, সকলেই।