নতূন জেলার নাম নিয়ে সামান্য খেদ আছে ঠিকই। তবু জেলা ভাগের সিদ্ধান্তে শিল্পাঞ্চলের অনেক বেশি উপকার হবে, আশা করছে শিল্প-বাণিজ্য মহল। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা মনে করছেন, আলাদা জেলা হওয়ায় এই খনি-শিল্পের এলাকা থেকে আদায় হওয়া রাজস্বের পুরোটাই এ বার এই এলাকার উন্নয়নের জন্যই খরচ হবে। সে কারণে আরও বেশি আর্থিক ও পরিকাঠামো উন্নয়ন হবে।
সরকারি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, সামগ্রিক রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে রাজ্যে উল্লেখযোগ্য জায়গায় রয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, সদ্য শেষ হওয়া অর্থবর্ষে সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব এসেছে পরিবহণ, আবগারি, শিল্প ও বিদ্যুৎ থেকে। পাশাপাশি প্রায় ১৬৩৭ কোটি টাকা কয়লা উৎপাদনের সেস বাবদ রাজস্ব সরকারের ঘরে জমা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা ইসিএল। গত অর্থবর্ষের তুলনায় যা প্রায় ১০০ কোটি টাকা বেশি।
ব্যবসায়ী মহলের মতে, এর আগে পর্যন্ত এই এলাকা থেকে বিপুল রাজস্ব সরকারে কোষাগারে জমা পড়লেও উন্নয়নের জন্য বরাদ্দের ক্ষেত্রে তার সুফল ভোগ করত গোটা বর্ধমান জেলাই। এ বার তা আর হবে না। ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কার্যকরি সভাপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ খেতানের দাবি, এত দিন রাজস্বের তিরিশ শতাংশেরও কম অংশ এই দুই শিল্পাঞ্চলের পরিকাঠামোর উন্নয়নে জন্য ব্যয় হতো। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা শিল্প-বাণিজ্য কোর কমিটির বৈঠকে এই প্রসঙ্গটি তুলে বারবার আলোচনা করেছি। কিন্তু অবস্থা পাল্টায়নি। এ বার আশা করি এখান থেকে আদায় করা রাজস্বের পুরোটা এখানের উন্নয়নেই খরচ হবে।’’ আশায় বুক বাঁধেছেন আর এক শিল্পপতি সুভাষ অগ্রবালও। তাঁর বিশ্বাস, সরকারি অনুদান বণ্টনের ‘বৈষম্য’ এ বার ঘুচবে। রাজস্ব আদায়ের টাকায় এলাকার চারটি শিল্পতালুকের উন্নয়নের দাবিও জোরালো হবে। সর্বোপরি, হাতের কাছে প্রশাসনিক সুবিধা মেলায় শিল্প-বাণিজ্য প্রসারের উন্নত পরিবেশ গড়ে উঠবে।
জেলা ভাগের ফলে আসানসোল-দুর্গাপুরে পর্যটন শিল্পেরও উন্নতি হবে বলে মনে করছেন আসানসোল বণিকসভার মুখ্য উপদেষ্টা সুব্রত দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘এত দিন দুই শহরের ভ্রমণ কেন্দ্রগুলির জন্য ছিটেফোঁটা অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। নতূন জেলা প্রশাসনের কাছে এ বার আমরা বেশি বরাদ্দের দাবি রাখতে পারব।’’ তিনি মনে করেন, পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটলে লোক-সমাগম হবে। দুই শহরে হোটেল ব্যবসা লাভবান হবে।
নতুন শিল্প হবে কি না তা পরের কথা, কিন্তু দুই শহরে শিল্পতালুকগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে বাড়তি নজর পড়বে বলে আশা শিল্পপতিদের। জামুড়িয়ার অজয় খেতান, আসানসোলের অধীর গুপ্তদের কথায়, ‘‘এত দিন সব কিছুর জন্য ছুটতে হতো বর্ধমানে। হয়রান হয়েও কাজের কাজ যে খুব বেশি হতো তা নয়। এ বার নিশ্চয় সুদিন ফিরবে।’’