বাপনের পরিবারের পাশে। নিজস্ব চিত্র।
বাপন মালিক। বয়স ২২ বছর। দু’টি কিডনিই বিকল। কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য ছ’লাখ টাকা কী ভাবে জোগাড় হবে, তা নিয়ে চিন্তায় ছিল কালনার পুরাতনহাট এলাকার বাসিন্দা বাপনের পরিবার। এর পরেই টাকা সংগ্রহের জন্য এলাকার যুবকেরা পথে নামেন। আর সেই খবর আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশের পরে অসুস্থ যুবকের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এলেন মন্ত্রী, আমলা থেকে শিল্পপতি, সকলেই।
রবিবার সকাল। আচমকা বাপনের বাড়িতে পৌঁছে যান রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। এক মাসের বেতন ও ভাতা বাবদ পাওয়া মোট সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা এবং বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের জন্য ১০ হাজার টাকা মালিক পরিবারের হাতে তুলে দেন মন্ত্রী। সেই সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দেন, চিকিৎসার যাবতীয় খরচ জোগাড় করা হবে। বাড়িতে দু’টি শৌচাগার তৈরির জন্য এক ঠিকাদারকে নির্দেশও দেন তিনি। কী ভাবে জানতে পারলেন অসুস্থ ছেলেটির কথা? ছলছল চোখে মন্ত্রী জানান, খবরের কাগজ থেকে জেনেই তিনি ঠিক করেন, ১ জানুয়ারি, দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে পরিবারটির পাশে দাঁড়াবেন। তাঁর আশ্বাস, দিন দশেকের মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য বাপনকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করা হবে।
শুধু মন্ত্রীই নন। সপ্তাহ খানেক আগে বাপনের বাড়ি এসে প্রায় ১০ হাজার টাকা তুলে দেন মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া-সহ প্রশাসনের কর্তারা। এ ছাড়া শহরের বাসিন্দা, শিল্পপতি সুশীল মিশ্রও দিয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার টাকা।
দাদা, বউদি আর বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে ছোট্ট সংসার বাপনের। নিজে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন। পুজোর আগে রোগ ধরা পড়ে। এর পরে ডায়ালিসিসি-সহ চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে বাড়ির জমানো অর্থ ও গয়না শেষ হয়ে যায়। বিল জমা না হওয়ায় বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। ছেলেকে বাঁচাতে মা সবিতা মালিক কিডনি দেবেন বলে ঠিক করেন। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপনের খরচ শুনে পিছিয়ে আসেন সকলে। এর পরেই এলাকার যুবকেরা কৌটো হাতে শহর ও গ্রামের রাস্তায় টাকা সংগ্রহে নেমে পড়েন। মন্ত্রী, প্রশাসন ও শিল্পপতির পাশে দাঁড়ানোর খবরে খুশি এলাকার বাসিন্দা মনোজিৎ মুখোপাধ্যায়, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, অসিত চট্টোপাধ্যায়েরা। তবে বাপন সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে বলে জানিয়ে দেন তাঁরা।
সকলের এমন চেষ্টায় চোখের জল বাঁধ মানছে না বাপনের দাদা প্রসেঞ্জিৎবাবুর। তাঁর কথায়, ‘‘সকলকে ধন্যবাদ। ভাইকে আর হারাতে হবে না।’’