কন্যাশ্রীর টাকা বিলি করতে গিয়ে এক জনের অ্যাকাউন্টে দু’বার টাকা পৌঁছে যাওয়ার নজির পেল জেলা প্রশাসন। দেখা গিয়েছে, জেলার ২৭৭ জন পড়ুয়ার ক্ষেত্রে ওই গোলমাল হয়েছে। তাঁরা প্রথম দফায় ২৫ হাজার আবার পরে একই পরিমাণ টাকা পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাজ্যের কর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সময়ও বিষয়টি নজরে আসে। দ্রুত বিষয়টি সংশোধন করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সপ্তাহে বেশ কিছু পড়ুয়ার ব্যঙ্ক অ্যাকাউন্টে কন্যাশ্রীর টাকা ঢোকার পরে জেলা সমাজকল্যাণ দফতরেও বার্তা আসে। বিষয়টি দেখতে গিয়ে ধরা পড়ে প্রথম দফায় ৫৭ জন ছাত্রীর অ্যাকাউন্টে দু’বার টাকা ঢুকেছে। এরপরে আধিকারিকেরা সমস্ত নথি খতিয়ে দেখে বুঝতে পারেন, শুধু ওই ৫৭ জন নয়, জেলার ২৭৭ জন পড়ুয়ার ক্ষেত্রে ওই ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি এ দিন রাজ্য স্তরের সঙ্গে বৈঠকে উঠে আসায় ভুল কেন হল সে প্রশ্ন ওঠে। জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিককে বিষয়টি নিয়ে ভৎর্সনা করা হয় বলেও জানা গিয়েছে। তবে আধিকারিককেরা দাবি করেন, বিষয়টি যান্ত্রিক ত্রুটি। এক জন ছাত্রী স্কুলে পড়াকালীন এক বার, আবার পরে কলেজে পড়াকালীন আবেদন করাতেই ওই ঘটনা ঘটেছে। তবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর একই থাকায় বিষয়টি ধরা পড়ে গিয়েছে। কেতুগ্রাম ১ ব্লকে গোলমালের নজির সবচেয়ে বেশি। জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘‘জেলাশাসক (সাধারণ)-এর নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। ব্লক স্তর থেকে জেলা স্তর পর্যন্ত যাঁরা এই কাজে যুক্ত তাঁরা ইচ্ছাকৃত ভাবে ওই গড়বড় করেছেন কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ জেলা কর্মাধ্যক্ষ (সমাজ কল্যাণ) পিঙ্কি সাহারও দাবি, ‘‘আমরা এ ধরনের অভিযোগ আগেই শুনছিলাম। জেলা পরিষদের তরফে জেলাশাসককে জানানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। তার আগে বিষয়টি সামনে চলে এল।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিবাহযোগ্য (১৮ বছর) হওয়ার আগে সরকারি অনুমোদিত স্কুল, কলেজে নাম থাকলে কিংবা কোনও বৃত্তিমূলক বা কারিগরি প্রশিক্ষণ নিলে সেই ছাত্রী কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় এককালীন ২৫ হাজার টাকার জন্য আবেদন করতে পারেন। ওই ছাত্রীর পারিবারিক আয় অবশ্য ১ লক্ষ কুড়ি হাজার টাকার নীচে হতে হবে। জেলা প্রশাসনের দাবি, এ দিন বিষয়টি সামনে আসার পরে বাকি ১১৪ জন পড়ুয়া যাতে দ্বিতীয় দফায় আর ওই টাকা না পেয়ে যান তার জন্য ব্যাঙ্ককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের তরফ থেকে প্রত্যেক বিডিওকে ই-মেল করেও জানানো হয়েছে যে ব্যাঙ্কের স্টেটমেন্ট দেখে কারা দু’বার টাকা পেয়েছেন তার তালিকা করতে। আর যদি কেউ টাকা তুলে নিয়ে থাকেন তাকে টাকা ফেরত পাওয়ার কথাও বলা হবে বলে জানানো হয়েছে। সমাজকল্যাণ দফতরের আধিকারিক অনির্বান চক্রবর্তী বলেন, ‘‘একই ছাত্রী স্কুল ও কলেজে দু’বার ফর্ম ফিলআপ করেছেন। তার জেরেই সমস্যা। তবে ব্যাঙ্ক অ্যকাউন্ট এক থাকায় বিষয়টি ধরা পড়ে যায়। সঙ্গেসঙ্গেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’