বইয়ে গর্ত করে জেলে পাঠানো হতো মোবাইল, বলছে পুলিশই

কয়েদিদের আত্মশুদ্ধির জন্য ধর্মগ্রন্থ পড়তে দেওয়ার রেওয়াজ বহু পুরনো। বিচারাধীন বন্দিদের দাবি মেনে কোথাও সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ কোথাও বন্দিদের আত্মীয়-স্বজনেরাই তা পৌঁছে দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৬ ০৭:১৮
Share:

বইয়ে এমন খাপ বানিয়েই ঢুকত মোবাইল। নিজস্ব চিত্র।

কয়েদিদের আত্মশুদ্ধির জন্য ধর্মগ্রন্থ পড়তে দেওয়ার রেওয়াজ বহু পুরনো। বিচারাধীন বন্দিদের দাবি মেনে কোথাও সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ কোথাও বন্দিদের আত্মীয়-স্বজনেরাই তা পৌঁছে দেন। কিন্তু ধর্মগ্রন্থের ফাঁক গলে মোবাইল এসে পৌঁছবে বন্দিদের হাতে, এমনটা বোধহয় ধারণা করতে পারেননি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

শুক্রবার ভোর তিনটে নাগাদ বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে হানা দেয় পুলিশ-প্রশাসনের যৌথ দল। বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের কাছ থেকে ১২টি মোবাইল উদ্ধার হয়। পুলিশের দাবি, ধর্মগ্রন্থের মধ্যে মোবাইলের মাপ মতো গর্ত করে ফোন পাঠিয়ে দেওয়া হতো জেলে। সেখান থেকেই চলত কথাবার্তা। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কী বন্দিদের হাতে পৌঁছনোর আগে বাড়ির লোকের পাঠানো জিনিসপত্রের পরীক্ষা করা হয় না? জেল কর্তৃপক্ষ মুখে কুলুপ আঁটলেও, রক্ষীদের একাংশ এ কাজে জড়িত থাকতে পারেন বলে অনুমান পুলিশ কর্তাদেরই।

মাস খানেক আগেই জেলের মধ্যে নিজস্বী তুলে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে পোস্ট করেছিলেন বিশাল সিংহ নামে এক কয়েদি। বাইরের জগতের সঙ্গে মোবাইলে কথাবার্তা, এমনকী মাদকের কারবারও ফোনের মাধ্যমেই সে চালাত বলে অভিযোগ। অথচ জেল কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও খবরই ছিল না। পরে বিষয়টি সামনে আসায় প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের নিরাপত্তা নিয়ে। জেল সুপার কিছু বলতে না চাইলেও বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক। তবে পরিস্থিতি যে কিছুই বদলায়নি তার প্রমাণ মিলল এ দিনের ঘটনায়।

Advertisement

বর্ধমানের এসডিপিও সমিত সেনগুপ্ত জানান, কয়েকদিন ধরেই জেলের মধ্যে মোবাইল সরবরাহ করা হচ্ছে বলে খবর পাচ্ছিলেন তাঁরা। তার ভিত্তিতেই জেলে আগাম কোনও খবর না দিয়ে অভিযান চালানো হয়। মেলে ১২টি মোবাইল। পুলিশের দাবি, কয়েদিদের পড়ার জন্য যে ধর্মগ্রন্থ পাঠাতেন পরিজনেরা তার মধ্যে করেই আসত মোবাইল। মোটা বই হওয়ায় ভেতরে ফাঁক করে সহজেই ঢুকে যেত ফোনটি। কিন্তু রক্ষীদের পরীক্ষা করার পরেই বাইরে থেকে পাঠানো কোনও জিনিস বন্দিদের হাতে পৌঁছনোর কথা। এতগুলি মোবাইল কোনও পরীক্ষা ছাড়া কী ভাবে পৌঁছে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নিখিল নির্মল বলেন, ‘‘জেলে মোবাইল পাঠানোর অভিনব পন্থার খোঁজ মিলেছে এই ঘটনায়। রাজ্য কারা দফতরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’’ পুলিশের দাবি, ধর্মগ্রন্থ পাঠানো নিষেধ করা তো সম্ভব নয়, তবে এ বার থেকে নজরদারি বাড়ানো হবে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তিনতলা সংশোধনাগারের পিছনেই বস্তি এলাকা। সেখান থেকে সাবানের খাপ, প্লাস্টিকের টিফিন বক্সের মধ্যে করে জানলা দিয়ে ছুড়ে মোবাইল পাঠানো হয়। তবে হাতেনাতে ধরা পড়েনি। মোবাইল পাঠানোর সঙ্গে জেলের রক্ষীদের একাংশের যোগ রয়েছে বলেও পুলিশের অনুমান।

কথায় বলে চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। কিন্তু একটা ঘটনার পরেও জেলের নিরাপত্তা নিয়ে যে অন্তত বুদ্ধি যে বাড়েনি তা স্পষ্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন