নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী আসবেন— তার জন্য তড়িঘড়ি শহরের ত্রিফলা বাতির সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনিক সভা সেরে মুখ্যমন্ত্রী শহর ছাড়ার পরেই ফের আঁধার বর্ধমানের ত্রিফলা বাতিস্তম্ভে। ত্রিফলার এমন হাল দেখে বাসিন্দাদের একাংশের কটাক্ষ, এ যেন জোড়াতালি দিয়ে কোনও রকমে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা।
এখন কী হাল ত্রিফলাগুলির?
বড়নীলপুর মোড়। গত শুক্রবারই ত্রিফলার আলোয় ঝলমল করছিল এই এলাকা। কিন্তু এখন সেখানে সন্ধ্যে নামলেই যেন ‘আলো-আঁধারির’ খেলা। সন্তোষ বসু নামে এক ব্যক্তির ক্ষোভ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ফিরে যাওয়ার পরে এক রাত কাটতে না কাটতেই ত্রিফলা জ্বলছে না। এখন মনে হচ্ছে যেন, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নম্বর বাড়াতেই পুরসভা ত্রিফলাগুলির সংস্কার করেছিল।’’ ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, আগে রাস্তার ধারে পথবাতি ছিল। কিন্তু ত্রিফলা আসার পরে সে সব বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে শহরের ভিতর দিয়ে যাওয়া জিটি রোডের একাংশ এখন আঁধারে ঢেকেছে বলে জানান এক ব্যবসায়ী। জিটি রোডের উপরে ছোট নীলপুর থেকে বড় নীলপুরের এক দিকে কোনও ত্রিফলাই জ্বলছে না দেখা গেল। অন্য দিকেও বেশ কয়েকটি ত্রিফলা বাতিস্তম্ভে আলোর দেখা নেই। একই হাল পুলিশ বাজার, ঘোরদৌড় চটি লাগোয়া এলাকাতেও।
প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, জিটি রোডের দু’ধারে উল্লাস থেকে নবাবহাট পর্যন্ত কয়েক দফায় প্রায় ৫৮৯টি ত্রিফলা লাগিয়েছিল পুরসভা। প্রতি সেট বাতিস্তম্ভ লাগাতে (প্রতি সেটে ১৯টি ত্রিফলা স্তম্ভ) পুরসভার খরচ হয়েছিল ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অর্থাৎ ত্রিফলা বসাতে পুরসভার খরচ হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা।
এত ঘটা করে বসানো জিটি রোডের ধারের ত্রিফলাগুলি বর্তমানে ধুলোয় ঢেকেছে বলে জানান বাসিন্দারা। ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ, আলো না থাকায় এলাকায় বাড়ছে আসমাজিক কাজকর্মও।
পথচারীদের অবশ্য ক্ষোভ, ত্রিফলা বাতি লাগিয়ে কোনও কালেই তেমন সুবিধে হয়নি। কয়েক মাস ধরেই শহরের জিটি রোডের দু’ধারে থাকা ত্রিফলাগুলি বেশির ভাগই জ্বলত না। কয়েকটি বাতিস্তম্ভ আবার হেলে ছিল। অনেকগুলি ফলায় আবার বাতিই ছিল না। গত শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভার দু’দিন আগে কয়েক হাজার টাকা খরচ করে তড়িঘড়ি সংস্কার হয় ত্রিফলাগুলির।তবে যাঁর জন্য এত তৎপরতা দেখা গিয়েছিল, সেই মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য সভায় বলে গিয়েছেন, ‘‘বর্ধমানকে একটি সুন্দর শহর হিসেবে দেখতে চাই। কিন্তু শহরে ঢোকার সময়ে যে রাস্তা দেখলাম, তাতে বুঝলাম কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।” ছোট নীলপুর থেকে বড় নীলপুর যাওয়ার পথে যাত্রীদের একাংশ অবশ্য রবিবার বলে ফেলেছেন, ‘‘তাও তো মুখ্যমন্ত্রীর রাতের শহর দেখে যাননি। দেখলে আঁতকে উঠতেন!” পুরপিতা পরিষদের সদস্য (আলো) জনাব সাহাবুদ্দিন খান অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘ত্রিফলা জ্বলছে না, তাই নাকি! আমি দ্রুত খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।”