তৈরি হচ্ছে ডায়েরি। বিক্রি হবে কি না, সংশয়ে ব্যবসায়ীরা। নিজস্ব চিত্র
ডিসেম্বর আসতে না আসতেই অর্ডার মিলতে শুরু করে। বড়দিন চলে গেলেই তুঙ্গে ওঠে বাজার। ক্যালেন্ডার ও ডায়েরি দিয়ে নতুন বছরের অভিনন্দন জানানোর রেওয়াজ অনেক দিনের। কিন্তু এ বার সে সবের বাজারে মন্দা, দাবি ব্যবসায়ীদের। তাঁরা জানান, ১৮ শতাংশ জিএসটি-র জেরে দাম বেড়েছে ডায়েরির। তার জেরে এ বার প্রায় বরাত অনেক কম মিলেছে বলে ডায়েরি প্রস্তুতকারকদের দাবি। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে ক্যালেন্ডারের চাহিদা।
বর্ধমান শহরের ডায়েরি বিক্রেতারা জানান, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই ডায়েরি বিক্রি শুরু হয়ে যায়। মাসের শেষ দশ দিন হয় বিক্রি তুঙ্গে ওঠে। জানুয়ারি ধরেই বেচাকেনা চলে। কিন্তু এ বার বড়দিন পেরিয়ে গেলেও ডায়েরি বিক্রি হচ্ছে না সে ভাবে। তাই মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের। তাঁরা জানান, গত বছর নোট বাতিলের জেরে সমস্যা হয়েছিল। এ বার খাঁড়া হয়েছে জিএসটি।
বর্ধমান শহরের ডায়েরি প্রস্তুতকারক বিজয়েশ তা জানান, জিএসটি-র কোপে পড়ে অন্য বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ ডায়েরি কম তৈরি করেছেন তারা। আর এক প্রস্তুতকারক শেখ মহম্মদ মুস্তাফা বলেন, ‘‘দাম বাড়ায় সে ভাবে অর্ডার পাইনি এ বার। ফলে অন্য বছরের তুলনায় কম ডায়েরি তৈরি করতে বাধ্য হয়েছি।’’ তিনি জানান, বছরে এই একটি সময়েই ডায়েরির ভাল ব্যবসা হয়। তাই এখন লোকসান হলে তা সামাল দেওয়া মুশকিল।
বর্ধমান কার্জন গেট চত্বরের এক ব্যবসায়ীর দাবি, প্রতি বছর নানা সংস্থা ও প্রশাসনের দফতরগুলি থেকে প্রচুর ডায়েরি কেনা হয় তাঁর দোকান থেকে। কিন্তু এ বছর এখনও পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে হাতে গোনা। একই কথা বলেন বিসি রোডের ডায়েরি ব্যবসায়ী সইদুল হক। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতি বছরের মতো একই পরিমাণে ডায়েরি তুললেও বিক্রি নেই। যারা বেশি ডায়েরির অর্ডার দিত, তারা পিছিয়ে গিয়েছে। কপাল পুড়ছে আমাদের।’’ একই হাল বড়বাজার, গোলাপবাগ মোড় বা স্টেশন এলাকার ব্যবসায়ীদেরও। বর্ধমান পুরসভা এলাকার ব্যবসায়ী অশোককুমার দাস বলেন, ‘‘১৮% ট্যাক্স পড়েছে ডায়েরিতে। স্বাভাবিক ভাবেই দাম বেড়েছে, আর চাহিদা কমেছে।’’
মিঠাপুকুরের শেখ সামসুল হক জানান, তাঁরা কয়েক পুরুষ ধরে ডায়েরি-ক্যালেন্ডার বিক্রি করছেন। কিন্তু এ বার বিক্রি নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, ‘‘বড় সংস্থাগুলি নববর্ষের উপহার হিসেবে ডায়েরি-ক্যালেন্ডার তেমন নিচ্ছেন না। ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে তাই চিন্তা থাকছে।’’