দুর্গাপুরের চার হাসপাতাল

বিকল্প বন্দোবস্ত নেই, বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বিপাক

অস্ত্রোপচারের মাঝে হঠাৎই যন্ত্রপাতি বন্ধ। হতভম্ব চিকিৎসক-নার্সরা। অল্প সময়েই ফের চালু হল সব। কিন্তু জটিল অস্ত্রোপচারে অনেক ক্ষেত্রে এই অল্প সময়টুকুই হয়ে ওঠে বেশ দামি।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০৭
Share:

অস্ত্রোপচারের মাঝে হঠাৎই যন্ত্রপাতি বন্ধ। হতভম্ব চিকিৎসক-নার্সরা। অল্প সময়েই ফের চালু হল সব। কিন্তু জটিল অস্ত্রোপচারে অনেক ক্ষেত্রে এই অল্প সময়টুকুই হয়ে ওঠে বেশ দামি।

Advertisement

ভাল পরিষেবা দিতে কেনা হয়েছিল আধুনিক যন্ত্র। কিন্তু বারবার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার চক্করে পড়ে বিকলই হয়ে গিয়েছে তা।

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে এমন নানা সমস্যা জেলার হাসপাতাল-নার্সিংহোমগুলির কাছে নতুন নয়। চিকিৎসক থেকে বিদ্যুৎ দফতরের বড় কর্তারা, সকলেই মনে করেন, জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আওতায় থাকা বেশ কিছু এলাকায় এখনও সেই ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে, আচমকা বিদ্যুৎ বিভ্রাটে জরুরি বিভাগের চিকিৎসা, অস্ত্রোপচারে বিঘ্ন থেকে রক্ত, ওষুধ বা টীকা সংরক্ষণ— দেখা দেয় নানা সমস্যা।

Advertisement

সমস্যা জেনে বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের আশ্বাস, ‘‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ রয়েছে। দরকার আরও আধুনিক পরিকাঠামো ও পরিকল্পনা। সেই কাজ আমরা শুরু করেছি।’’

দুর্গাপুরের বিধাননগরে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে চারটি বড় হাসপাতাল রয়েছে। সব ক’টিতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করে রাজ্য সরকারের অধীনস্থ সংস্থা ডিপিএল। এর মধ্যে দু’টি বেসরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে এ রাজ্যের নানা জেলা তো বটেই, ভিন্‌ রাজ্য থেকেও বহু মানুষ চিকিৎসার জন্য আসেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, মাসে অন্তত ২০ ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের বিপত্তি পোহাতে হয় তাঁদের। কোনও দুর্যোগ হলে টানা ৩-৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ মেলে না। কাজ চালাতে হয় জেনারেটরে।

দুর্গাপুরের ইমন কল্যাণ সরণির বেসরকারি হাসপাতালটির জেনারেল ম্যানেজার অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লোডশেডিংয়ে এখনও পর্যন্ত আমাদের গোটা ২০ মূল্যবান যন্ত্র বিকল হয়ে গিয়েছে।’’ অস্ত্রোপচার বা ‘লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম’-এ চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি অসুবিধা হয়। জাকির হুসেন অ্যাভিনিউয়ের বেসরকারি হাসপাতালের আধিকারিক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সামান্য সময় বিদ্যুতে বিঘ্নও খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়।’’

ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই হাসপাতালগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় ‘বিধাননগর মাস্টার সাব-স্টেশন’ থেকে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ রাখার জন্য এ-জোন এবং বি-জোন— দু’টি আলাদা সাবস্টেশন থেকে সেখানে লাইন রাখা হয়েছে। কিন্তু লাইনের অনেকটা গিয়েছে গাছপালায় ঘেরা রাস্তা দিয়ে। তারের উপরে গাছের ডাল পড়ে মাঝে-মধ্যেই। তখন ১১ হাজার ভোল্টের লাইন ‘শাট ডাউন’ করে মেরামত করতে হয়।

ডিপিএলের কর্মী-আধিকারিকদের দাবি, রাস্তার পাশে বাড়ির পুরনো গাছের ডালপালা ছাঁটতে দেন না অনেকে। গাছ বেশি কাটতে গেলে বন দফতরও আপত্তি করে। এ ছাড়া বজ্রপাত, ঝড়ে তার ছেঁড়া-সহ নানা সমস্যা তো রয়েছেই। ডিপিএলের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘হাসপাতালে যাতে কম প্রভাব পড়ে, সেই চেষ্টা সব সময়ই করা হয়। তবে হাসপাতাল নিজেদের খরচে সাবস্টেশন থেকে নিজস্ব বিদ্যুতের লাইন নিয়ে নিলে এই সমস্যা আর থাকবে না।’’

বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, যে সমস্ত বণ্টন সংস্থা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, বড় হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা তাদেরই দায়িত্ব। সিইএসসি যেমন তাদের পরিষেবা এলাকায় প্রায় সব হাসপাতাল, নার্সিংহোমে ‘ডেডিকেটেড’ লাইনের ব্যবস্থা করেছে। কলকাতার কোনও বড় হাসপাতালে একটি লাইন ‘ট্রিপ’ করে গেলে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় দ্বিতীয় লাইন চালু হয়ে যায়।

মন্ত্রী শোভনদেববাবুর আশ্বাস, জরুরি পরিষেবার জন্য ইতিমধ্যে বিকল্প লাইনের ব্যবস্থা করতে বলেছেন রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারদের। সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘জেলায় আমাদের পরিষেবা এলাকায় ২০১১ থেকে বেশ কিছু হাসপাতালে ডেডিকেটেড লাইন তৈরি শুরু হয়েছিল। বর্ধমান-সহ কয়েকটি জেলার হাসপাতালে তা করাও হয়েছিল। কিন্তু অনেক কাজ বাকি রয়ে গিয়েছে।’’ তাঁর দাবি, সংস্থার পরিকাঠামো নতুন করে গড়ে তুলতে বিদ্যুৎ মন্ত্রকে বিশদ প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) পাঠানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন