প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে প্রশ্ন

মেলে না চিকিৎসা, নেই অ্যাম্বুল্যান্সও

এক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতের হাজার-হাজার মানুষ। রোগজ্বালায় সেখানেই ছুটে যান তাঁরা। কিন্তু প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু ছাড়া কিছু মেলে না।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৬ ০৭:৩৪
Share:

রবিবার রাতে এখানেই মৃত্যু হয় অচেতন যুবকের। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

এক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতের হাজার-হাজার মানুষ। রোগজ্বালায় সেখানেই ছুটে যান তাঁরা। কিন্তু প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু ছাড়া কিছু মেলে না। তাই অনেক সময়েই রোগীকে ‘রেফার’ করতে হয়। রোগীর পরিজনেরা সমস্যায় পড়েন তখনই। অ্যাম্বুল্যান্স নেই। তাই অন্যত্র হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়। বেহাল পরিকাঠামো থেকে অ্যাম্বুল্যান্সের অভাব— ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই অবস্থার ফল ভুগতে হয় রোগীদের।

Advertisement

রবিবার রাতে অন্ডালের খান্দরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অচেতন এক যুবকের মৃত্যুর পরে এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। উখড়া স্টেশনে অন্ডাল-সাঁইথিয়া লোকাল ট্রেন থেকে উদ্ধার করার পরে বেহুঁশ ওই যুবককে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করে আরপিএফ। সেখানে ওই যুবকের চিকিৎসা সম্ভব নয় বুঝে রাতে তাঁকে ‘রেফার’ করেন চিকিৎসক। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স ছিল না। গাড়ির ব্যবস্থা করে কে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাবে ওই যুবককে, সে নিয়ে কয়েক ঘণ্টা ধরে টানাপড়েন চলার মাঝে মৃত্যু হয় যুবকটির। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তাঁর নাম-পরিচয় জানা যায়নি। রেলপুলিশের অনুমান, ট্রেনে মাদক খাইয়ে ওই যুবকের সর্বস্ব লুঠ করে নেওয়া হয়েছে।

চিকিৎসকদের মতে, সময় মতো উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে মাদকে অচেতনের প্রাণ সংশয় হতে পারে। ট্রেনে মাদক খেয়ে বেহুঁশ রোগীদের তাই যত দ্রুত সম্ভব বড় হাসপাতালে পাঠানো প্রয়োজন বলে দাবি অনেক ডাক্তারেরই। কারণ, বিভিন্ন স্টেশন লাগোয়া সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির যা পরিকাঠামো, তাতে ওই চিকিৎসা সম্ভব নয় বলেই মনে করেন তাঁরা।

Advertisement

অন্ডাল স্টেশনের কাছেই রয়েছে রেল হাসপাতাল। কিন্তু অন্ডাল-সাঁইথিয়া লাইনের কাজোড়া, সিঁদুলি, উখড়া, পাণ্ডবেশ্বরের মতো স্টেশনের কাছাকাছি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র হিসেবে রয়েছে খান্দরার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিজস্ব কোনও অ্যাম্বুল্যান্স নেই। অথচ শুধু অন্ডাল নয়, পাণ্ডবেশ্বর ব্লকের জন্যও এটিই একমাত্র সরকারি হাসপাতাল। ১৪টি পঞ্চায়েত এলাকার মানুষজন এর উপরে নির্ভরশীল। প্রসূতিদের জন্য মাতৃযান আছে। এ ছাড়া রোগীদের আনা-নেওয়ার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে নিতে হয় পরিজনদেরই।

রবিবার অচেতন যুবকের পরিচয় না মেলায় পরিজনের তরফে গাড়ির ব্যবস্থা করার প্রশ্ন ছিল না। সেই পরিস্থিতিতে পুলিশ বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের তৎপর হওয়া উচিত থাকলেও তাঁরা হননি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া গেলে হয়তো ওই যুবককে বাঁচানো যেত বলে মনে করছেন বাসিন্দাদের অনেকেই। অন্ডালের বিএমওএইচ পরিতোষ সোরেন অবশ্য মঙ্গলবার বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তরফে গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। তবে অজ্ঞাতপরিচয় কেউ ভর্তি হলে তখন অন্য হাসপাতালে পাঠানোয় অসুবিধা হয়।’’ অসুবিধার কারণ হিসেবে তাঁর যুক্তি, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মী কম। সঙ্গে তো কাউকে যেতে হবে।’’

পরিকাঠামোর নানা সমস্যা থাকলেও রোগীকে ‘রেফার’ করে অন্যত্র পাঠাতে তাঁদের সমস্যা হয় না বলে দাবি করেন কাঁকসা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। পানাগড় স্টেশনের কাছাকাছি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বলতে রয়েছে এটিই। চিকিৎসকেরা জানান, ট্রেনে মাদক খাইয়ে অসুস্থ কাউকে আনলে প্রথমে তাঁরা হুশ ফেরানোর উপরে জোর দেন। অবস্থা স্থিতিশীল হলে কালবিলম্ব না করে মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। যদিও এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সুবিধে রয়েছে তিনটি অ্যাম্বুল্যান্সের। এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘রোগীকে অন্যত্র পাঠানোর জন্য সময় নষ্ট করতে হয় না আমাদের। তিনটি অ্যাম্বুল্যান্সের দু’টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরেই থাকে।’’ কাঁকসার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ) স্বাতী রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করি। অকারণ ঝুঁকি না নিয়ে দুর্গাপুরে পাঠাই।’’

মানকর স্টেশনের কাছে রয়েছে মানকর গ্রামীণ হাসপাতাল। সুপার অসিতবরণ সিংহ জানান, হাসপাতালে একটি অ্যাম্বুল্যান্স আছে। মাদকে অসুস্থ কাউকে আনা হলে পরিকাঠামো অনুযায়ী প্রাথমিক চিকিৎসার পরে অ্যাম্বুল্যান্সে করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা হয়। পারাজের গলসি ১ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিএমওএইচ মহাপ্রসাদ পালও একই কথা জানান। তাঁর দাবি, একটি অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়াও দু’টি নিশ্চিত-যান সব সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকে।

মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) শঙ্খ সাঁতরা বলেন, ‘‘ওই যুবকের মৃত্যু নিয়ে কৈফয়ত চাওয়া হয়েছে বিএমওএইচের কাছে। অ্যাম্বুল্যান্স যদি সত্যি না থাকে তা জানানো উচিত ছিল। ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন