NO Cooking Day

প্রাচীন রীতি মেনে মাঠে রান্না কোশিগ্রামে

জনশ্রুতি রয়েছে, প্রায় চারশো বছর আগে গ্রামে কলেরার কারণে অনেকে মারা যাচ্ছিলেন। সম্ভবত পুকুরের জল থেকেই কলেরা ছড়িয়ে পড়ে। কোনও চিকিৎসায় কাজ হচ্ছিল না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:২৬
Share:

কোশিগ্রামে মাঠে রান্না গ্রামবাসীর। নিজস্ব চিত্র।

প্রাচীন প্রথা মেনে কাটোয়ার কোশিগ্রামে চলছে অরন্ধন পালন উৎসব। শনিবার ওই গ্রামের কোনও বাড়িতেই উনুন জ্বালানো হয়নি। রীতি মেনে সব পরিবারের তরফে কাটোয়া-কেতুগ্রাম রোডের ধারে কোশিগ্রামের ফকিরতলায় পুজো দিয়ে গ্রামের উত্তর মাঠে রান্না করে খাওয়া-দাওয়া করা হয়। ফকিরকে স্মরণ করে পুজো দেন গ্রামবাসী।

Advertisement

জনশ্রুতি রয়েছে, প্রায় চারশো বছর আগে গ্রামে কলেরার কারণে অনেকে মারা যাচ্ছিলেন। সম্ভবত পুকুরের জল থেকেই কলেরা ছড়িয়ে পড়ে। কোনও চিকিৎসায় কাজ হচ্ছিল না। ঘরে ঘরে কান্নার রোল উঠেছিল। এমন পরিস্থিতিতে এক ফকির কোশিগ্রামে আসেন। তিনি গ্রামবাসীকে পান্তাভাতের সঙ্গে তেঁতুলের টক খাওয়ার নিদান দেন। গ্রামবাসীর দাবি, ফকিরের ওই নিদানের পরে মৃত্যু বন্ধ হয়। ফকির তখন আরও নির্দেশ দেন, প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তির দু’দিন আগে গ্রামে অরন্ধন থাকবে। এর পরিবর্তে গ্রামের উত্তরমাঠে রান্না করে খাওয়াদাওয়া করতে হবে। সেই রীতি এখনও চলছে।

বাসিন্দারা হুল্লোড় করে গ্রামের উত্তরমাঠে জড়ো হন। পিকনিকের আদলে মাঠেই রান্না করে খাওয়াদাওয়া হয়। তবে প্রথা মেনে নিরামিষ রান্না হয়। সেই সঙ্গে ফকিরতলায় একটি গাছের নিচে ছোট ঘরের সামনে ফকিরের উদ্দেশ্যে ভোগ নিবেদন করা হয়। গ্রামবাসীর বাড়িতে এই সময়ে অনেক আত্মীয়স্বজনও বেড়াতে আসেন। এক সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে গড়ে ওঠে মেলবন্ধন।

Advertisement

কোশিগ্রামের বাসিন্দা যাদব মাঝি, অরুণ দাস, প্রভাত দাসেরা বলেন, ‘‘আমরা সারা বছর এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকি। এই দিনে গ্রামে কোনও বাড়িতেই রান্না হয় না। প্রত্যেকে উত্তরমাঠে আসেন। মাঠে উনুন তৈরি করে রান্না করেন সকলে।’’ কেতুগ্রামের মৌগ্রামের বাসিন্দা তরুণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রতি বছরই এই সময়ে আমি আত্মীয়ের সঙ্গে কোশিগ্রামের মাঠে এসে অনুষ্ঠানে যোগ দিই। খুব আনন্দ হয়।’’ গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা তথা চিকিৎসক অশোক গোস্বামী বলেন, “যুক্তিবাদী মন বিশ্বাস না করলেও, আমাদের গ্রামে আর কলেরায় কেউ মারা যাননি বলে বাপ-ঠাকুরদার মুখে শুনেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন