অন্ডালের শ্রীপুরে ভেঙেছে দামোদরের পাড়। ওমপ্রকাশ সিংহের তোলা ছবি।
বর্ষা এলেই ‘ঝুপ্ ঝুপ্..’ শব্দে চোখের পাতা এক করতে পারেন না অন্ডাল ও পাণ্ডবেশ্বরের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। ফি বছরই অজয় আর দামোদরের পাড় ভাঙনের ফলে তলিয়ে যায় বাগান, খেত। প্রাথমিক স্কুল, খেলার মাঠ, মন্দির, ইটভাটা— এ সবও ভাঙনে কবে তলিয়ে যায়, এই আশঙ্কাতেই দিন গুনছেন বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, শীতের শুরু থেকেই পাড় বাঁধানোর কাজ করুক প্রশাসন।
দামোদরের পাড়-ভাঙনের ফলে অন্ডালের মদনপুর, পুবরা, বাসকা, রামপ্রসাদপুর ও শ্রীরামপুরের বহু এলাকা বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। ফি বছরই বহু চাষ জমি জলে তলিয়ে যায় বলে জানান তাঁরা। বাসিন্দারা জানান, মদনপুরে একটি আম-লিচুর বাগান, কুয়ো, সবই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। মদনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য বাসকার বাসিন্দা আস্তিক রায়ের আশঙ্কা, ‘‘প্রাথমিক স্কুল, শিবমন্দির ও খেলার মাঠ থেকে মাত্র একশো মিটার দূরত্বে বইছে দামোদর। এখনই ব্যবস্থা না নিলে পুরো গ্রামটাই জলের তলায় চলে যেতে পারে।’’
অবস্থা আরও শোচনীয় শ্রীরামপুরে। এখানের বাসিন্দা জিতেন দাস জানান, বর্ষায় গ্রামের বাগদি, বাউরি, দাস, ডাঙাল ও মহন্তপাড়ার একাংশে ঘরে জল ঢুকে যায়। ফলে প্রায় তিন মাস এই গ্রামের বাসিন্দাদের কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে থাকা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। প্রতি বছরই বহু সংখ্যায় গবাদি পশু জলের তোড়ে ভেসে যায়। এই এলাকারই বাসিন্দা তপন দালাল জানান, গ্রামের ইটভাটাটি জল থেকে মাত্র ২০ ফুট দূরে রয়েছে। পাড় ভাঙতে ভাঙতে শ্মশান ও একটি মাঠ থেকে নদীর বর্তমান দূরত্ব যথাক্রমে একশো মিটার ও ২৫ ফুট। চাষ জমি নদীগর্ভে হারিয়ে যাওয়ায় গ্রামের অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়েছে বলে জানান বিকাশ মিত্র, নিহার মণ্ডল, মুক্তিপদ মণ্ডল, সুবোধ দাসেরা। বাসিন্দাদের সকলেরই দাবি, ‘‘মহকুমাশাসকের কাছে বর্ষার আগেই ভাঙন-সমস্যা রোধে পদক্ষেপ করার দাবি জানিয়েছি। বর্ষায় চোখের পাতা এক করতে পারি না।’’
অজয়ের পাড়-ভাঙনের জেরে সঙ্কটে রয়েছে পাণ্ডবেশ্বরের রামনগর ও কেন্দ্রা গ্রাম। রামনগরের বাসিন্দা চিত্ত বাদ্যকরের দাবি, গত বছর ভাঙনের জেরে প্রায় ৭৫ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়। ৩০ বিঘার উপরে জমিতে বালি জমে যাওয়ায় চাষ করা যায় না। এ ছাড়াও ভাঙনের জেরে সেচের জলের জন্য রাখা বেশ কয়েকটি পাম্প, গ্রামের কয়েকটি প্রাচীন মন্দির ও শ্মশানেরও আর কোনও অস্তিত্ব নেই। ফি বছর বর্যায় কেন্দ্রা গ্রামের মেটালধাওড়া লাগোয়া আদিবাসীপাড়ায় জল ঢুকে যায় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা সাধন দাস।
অন্ডালের বিডিও মানস পাণ্ডের অবশ্য দাবি, ‘‘অন্ডালে দামোদরে বাঁধ দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা রূপায়িত হওয়ার মুখে। এর জন্য টাকা অনুমোদিত হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে।’’